শেরপুর প্রতিনিধি :
রাজনৈতিক মারপ্যাচের গ্যারাকল থেকে ঘুরে দ্বারাতে হিমসিম খাচ্ছেন বিএনপি'র জনপ্রিয় নেতা আমিনুল ইসলাম বাদশা। তিনি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা সদরের তামাগাঁও মহল্লার মরহুম শিক্ষক আব্দস ছালামের ছেলে ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বাদশার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেন। একপর্যায়ে তিনি শেরপুর জেলা বিএনপির পরপর ২ বার যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের ও দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর ৩ (শ্রীবরদী- ঝিনাইগাতী) আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ায় জেলা বিএনপি'র সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেলের রোষানলে রাজনৈতিক মারপ্যাচের গ্যারাকলে পরেন তিনি। জনশ্রুতি রয়েছে একারণে দলীয় পদ হারিয়ে দলে আর মাথা তুলে দ্বারাতে পারেননি তিনি।
এ অভিযোগ উপজেলা বিএনপির তৃনমূলের নেতা কর্মিদের। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দলে তাকে কোন ঠাসা করে রাখা হয়েছে। বাদশা ২ বার ইউপি সদস্য, ১ বার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ২ বার উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
জানা গেছে,১৯৮৮ সালে ঝিনাইগাতী উপজেলা সদর ইউনিয়নের সদর ১ নং ওয়ার্ডে পরপর ২ বার তিনি ইউপি সদস্যের দ্বায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দ্বায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দ্বায়িত্ব পালনের পর ২০১৪ সালে ষড়যন্ত্রমুলক এক মামলায় কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় বার তিনি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি ঝিনাইগাতী উপজেলার দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ের একজন জনপ্রিয় নেতা।
উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিকদল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝে জনপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় হিন্দু মুসলিমসহ সকল জাতীগোত্রের মানুষের মাঝে বাদশা ভাই নামেই যার পরিচিত।
জনশ্রুতি রয়েছে, বাদশা উপজেলার ৭ টি ইউনিয়নে গরীব ধনী হিন্দু মুসলিম যে কোন জাতিগোত্রের ও শ্রেণী পেশার লোকজনের মৃত্যুর সংবাদে তার জানাযা ও সমাধি স্থলে অংশগ্রহন একটি লক্ষণীয় বিষয়।
এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনের পাশাপাশি সীমান্তে বন্য হাতির তান্ডব চলাকালে হাতি তাড়ানো গ্রামবাসীদের মশালে ব্যবহারের জন্য কেরোসিন তেল নিয়ে নিয়মিতভাবে হাজির হতেন গ্রামবাসীদের পাশে। শুধু তাই নয় রাত জেগে গ্রামবাসীদের সাথে হাতি তাড়ানোর কাজেও অংশ নেন তিনি। গরীব দুঃখি মানুষের নানা সমস্যা ও বিপদাপদেই তিনি পাশে দ্বারান।
এসমস্তো গুনাগুনের কারনে দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছেই তিনি জনপ্রিয় একজন নেতা।
তিনিই এ উপজেলার একমাত্র নেতা তার নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ সকল দলের নেতা কর্মিরাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাকে ভোট দেন।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, উদীয়মান এনেতা ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী ঝিনাইগাতী) আসন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দলীয় মনোনয়ন ফরন ক্রয় করেন তিনি। দলীয় নেতা কর্মিরা জানান, বাদশা দলীয় মনোনয়ন ফরম ক্রয় করায় এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হক রুবেলের চক্ষুসুল হয়ে দাঁড়ায় তিনি ।
বাদশা জানান,দলের হাই কমান্ডের নির্দেশ অনুযায়ী তিনি মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছিলেন। দলীয় নেতা কর্মিদের অভিযোগ এরপর থেকে বাদশার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক রুবেল তাকে কুনঠাসা করে রাখেন বলে অভিযোগ বাদশা ভক্ত দলীয় নেতা কর্মিদের । শুধু তাই নয়, একপর্যায়ে মাহমুদুল হক রুবেল জনপ্রিয় নেতা বাদশাকে পর্যায়ক্রমে দল থেকে সরিয়ে রাখেন। তৃনমুল নেতা কর্মিদের অভিযোগ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার অযোগ্য এমন নেতা দিয়ে দলের দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন মাহমুদুল হক রুবেল।
যারা তার বাইরে রাজনৈতিকতো দুরে থাক কোন কিছুই করা সম্ভব না। জানা গেছে, বাদশা ১৯৯৮ সালে ঝিনাইগাতী সদর ইদউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আমিনুল ইসলাম উপজেলা বিএনপিকে তিনি সুসংগঠিত করে বিএনপিকে একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ায় শেরপুর ৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিনের দায়িত্বে থাকা মাহমুদুল হক রুবেলের রোষানলে পরে দলীয় পদ হারান আমিনুল ইসলাম বাদশা। দীর্ঘ প্রায় একযুগের বেশি সময় ধরে ঝিনাইগাতী উপজেলা বিএনপির কমিটি নেই। বাদশাকে দল থেকে সরিয়ে রাখায় উপজেলা বিএনপি দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছে।
অভিযোগ রয়েছে মাহমুদুল হক রুবেলে অনুগতদের দিয়ে গঠিত আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চালানো হচ্ছে দল। অভিযোগ রয়েছে, বাদশাকে উল্লেখযোগ্য কোন পদেই রাখা হয়নি। এ অভিযোগ তৃনমূলের নেতা কর্মিদের । এমতাবস্থায় ২০২৪ সালের ৮ মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে তৃতীয় বারের মতো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বাদশা।
জানা যায়, বাদশা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহনের দায়ে দলীয়ভাবে তাকে বহিষ্কার করা হয়। শুধু তাই নয় এ নির্বাচনে রুবেল পন্থী দলের একটি অংশের চরম বিরোধীতার পরেও তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এনির্বাচনে মাহমুদল হক রুবেলের নির্দেশেই রুবেল অনুসারী বিএনপি'র নেতা কর্মিরা আওয়া লীগ প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। বাদশাকে দল থেকে বহিষ্কারের ফলে মাহমুদুল হক রুবেলের পথের কাটা আর থাকলো না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অপর দিকে দলীয় কোন পদে না থাকলেও গত বছরের ৫আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের
পর বাদশার জোরালো ভুমিকায় ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ লুটতারাজ থেকে ঝিনাইগাতী থানা, বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, অফিস আদালত রক্ষা পায়। আমিনুল ইসলাম বাদশার প্রতি দলের নেতা হয়ে বৈষম্যমূলক আচরণের বিষয়ে জেলা বিএনপি'র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সদস্য মাহমুদুল হক রুবেলের সাথে কথা বলতে একাধিক বার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এ জাতীয় আরো খবর..