ইব্রাহিম মুকুট, ময়মনসিংহ:
স্থল বন্দরগুলো বিদ্যমান থাকলেও সব ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানির সুযোগ নেই, ফলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। সব ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানির নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের লক্ষ্যে উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ীরা। রাজধানী ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছে ১৭৫ কিলোমিটার দূরে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট গোবরাকুড়া ও কড়ইতলি এবং নাকুগাঁও স্থলবন্দরটি দিয়ে সব ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করলে আমদানি রপ্তানিতে এক নব দিগন্তের সূচনা হবে। স্বল্প দূরত্বে অল্প খরচে দু দেশের এলাকাগুলোতে আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে উপকৃত হবে দু দেশের জনগণই।বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ ও বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিবৃন্দের মতবিনিময় সভা শনিবার (২৯ জুন) ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের সেভেন সিস্টার্স খ্যাত প্রদেশগুলো ও বাংলাদেশ সীমান্তের প্রধান প্রধান স্থলবন্দরগুলোতে সব ধরনের পণ্য অবাধ আমদানি-রপ্তানির সুযোগ না থাকায় উভয় দেশ ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা, অরুণাচল মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও মনিপুরসহ ৭টি রাজ্যের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ময়মনসিংহে অঞ্চলের স্থলবন্দর গুলোতে সব ধরনের পণ্য আমদানি রপ্তানির সুযোগ তৈরীর জন্য বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধভাবে দু দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।
গোবড়াকুরা, কড়ইতলী ও নাকুগাও বন্দরকে সবধরনের পণ্য আমদানি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টির জন্য কিছু প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি আব্দুর রশিদ।
দি ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি ও বাংলাদেশ এসিস্ট্যান্ট হাই কমিশন, গোয়াহাটি আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন দি ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোঃ আমিনুল হক শামীম।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক সায়েম, অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু।
স্বাগত বক্তা আজহারুল আলম ট্রেড এন্ড প্রটোকল অফিসার, বাংলাদেশ এসিস্ট্যান্ট হাই কমিশন, গোয়াহাটি।
বক্তব্য রাখেন ভারতীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি আব্দুর রশিদ, হালুয়াঘাট পৌর মেয়র খায়রুল আলম ভূইয়া, ইকরামুল হক নবিন ( জামালপুর), রঞ্জিত কুমার সাহা ( নেত্রকোনা), তোরা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ইনসিন মারাক, মোঃ সুরুজ আলী ( হালুয়াঘাট), অধ্যাপক অপু ( গোবরাকুড়া), আব্দুল্লাহ আল মুখলেস সুমন ( ধানুয়া-কামালপুর), ওয়ালটন কোম্পানির প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ, ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সাধারণ সম্পাদক অমিত রায়, আসামের করিমগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির শামীম চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান (নাঁকুগাও), দীপংকর সাংমা(গোয়াহাটি), ডাঃ হাবিবুর রহমান চৌধুরী (গোয়াহাটি), আাখি সাংমা ( গারো হিল), কানন চন্দ্র চন্দ ( শেরপুর), আব্দুস শহীদ, (মানকুসা), ফারুক আহমেদ (মহেন্দ্রগঞ্জ) প্রমূখ।।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের স্থলবন্দরগুলোর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ সহ ময়মনসিংহ জামালপুর শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলার ব্যবসায়ী ছাড়াও ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের ৪০জন ব্যবসায়ী বৃন্দ মতবিনিময়ে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য মাহমুদুল হক সায়েম বলেন, ভারতের সাথে কয়লার ব্যবসা করতে গিয়ে জমিজমা ব্যাংকে বন্ধক দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত মালামাল না পেয়ে হালুয়াঘাটের ব্যবসায়ীরা আজ নিঃস্ব,ঋণগ্রস্ত প্রত্যেক দুইজনারের মামলায় চেক ডিজঅনারের মামলায় আসামি।
এমপি সায়েম আরও বলেন হালুয়াঘাটের রাস্তা চারলেন করে প্রশস্ত করা সহ অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। সব ধরনের সুযোগ দেওয়া হবে ভারতের ব্যবসায়ীরা অবাধে ব্যবসা করার ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগিতা হবে। ইতিমধ্যে ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি পোর্ট নির্মাণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের ব্যবসায়ী এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীদের ঘন ঘন বৈঠক ও আলোচনার মাধ্যমে সমন্বয় করে কিভাবে ব্যবসা বৃদ্ধি করা যায়, সে ব্যাপারে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার জন্য ময়মনসিংহ চেম্বার সভাপতি আমিনুল হক শামীমের প্রতি অনুরোধ জানান সাংসদ সায়েম।
ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু বলেন ভারত বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু। হালুয়াঘাটে ইমিগ্রেশন চালু করা হলে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বন্দর গুলো ব্যবহার করে দু দেশের মাঝে ব্যবসা বাণিজ্য কৃষি শিক্ষা সংস্কৃতি বিনিময় ও পর্যটন বৃদ্ধির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। করলেন সড়ক চালুর পাশাপাশি রেল পথ নির্মাণের পরামর্শ দেন তিনি।
হালুয়াঘাটে গোবরাকুড়া ও কড়ইতলি স্থল বন্দরে দ্রুত ইমিগ্রেশন চালু করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টার আশ্বাস দিয়ে আমিনুল হক শামীম বলেন, পাথর ও কয়লা রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারতের সুবর্ণ সুযোগ এখন অনেকটা হাতছাড়া হচ্ছে। ভারতের নানা সমস্যার কারণে পাথর ও কয়লা আমদানি প্রতিবন্ধকতা থাকায় এই ব্যবসা এখন দুবাই ও ইন্দোনেশিয়ায় চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ কয়লা ও পাথর ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করছে।
আমিনুল হক শামীম আরো বলেন, হালুয়াঘাটে এক সময় কয়লা ও পাথর আমদানির জমজমাট ব্যবসা ছিল। বর্তমানে আমদানি রপ্তানি কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে না, তার কারণগুলো খোঁজে বের করে তা সমাধান করে পুনরায় আমদানি রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে। ভারত থেকে আমদানির সুযোগ রয়েছে যেমন, মসলা, লাইমস্টোন পাথর, কয়লা, ফলমূল, জিরা, কাজু বাদাম ইত্যাদি।
অপরদিকে বাংলাদেশ থেকে মাছ, শুকনা মাছ, ইলেকট্রনিক পণ্য, গার্মেন্টস সামগ্রী, সিমেন্ট, প্লাস্টিক পণ্য, গরু ইলিশ সহ ইত্যাদি রপ্তানি করার সুযোগ রয়েছে।
দু দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা উদ্যোগী হলে এফবিসিসিআই কে সংযুক্ত করে বড় ধরনের সেমিনার বা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন এফবিসিসিআই সাবেক সহ সভাপতি।
ময়মনসিংহ বিভাগের বন্দর গুলোকে রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণচঞ্চল্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ময়মনসিংহ চেম্বার এর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার কামনায় প্রতিশ্রুতি দেন চেম্বার সভাপতি আমিনুল হক শামীম।
ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে কমিশন বাণিজ্য ছিল, যার প্রেক্ষিতে আমদানি রপ্তানি অতীতে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তা যেন আগামীতে না হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
আমিনুল হক শামীম ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, এ অঞ্চলে আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে কোন সিন্ডিকেট ও কমিশন বাণিজ্য হবে না। সেই সাথে নির্ধারিত সময়ে রপ্তানি পণ্য ডেলিভারি দিতে সব ধরনের প্রয়াস নেয়া হবে।
ময়মনসিংহ চেম্বার সভাপতি আরও বলেন, আমরা রপ্তানির ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো নিশ্চয়তা দিলে ইন্ডিয়ার ব্যবসায়ীদেরও তাদের দেশের বিদ্যমান সমস্যা গুলো নিরসনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। তাতে ভারতের ব্যবসায়ীরাই বেশি উপকৃত হবেন কারণ ভারতের রপ্তানি পণ্যর তালিকা দীর্ঘ।
ভারতের সংশ্লিষ্টদের আমিনুল হক শামীম বলেন আপনাদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমারা সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করব।
ময়মনসিংহের অনেক কয়লার ব্যবসায়ী এলসি করে বসে আছেন অথচ মাল দিচ্ছেন না ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক ঋণ করে এসব ব্যবসায়ীরা আজ নিঃস্ব হচ্ছে।
এ জাতীয় আরো খবর..