মোঃ মুনির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
৭৪৪ বর্গমাইলের এই জেলায় নির্বিঘ্নে চলছে পরিবেশ বিধ্বংসী ১৭৭টি ইটভাটার কার্যক্রম। এর মধ্যে ১১০টি অবৈধ। প্রশাসনের কঠোরতার অভাবকে পুঁজি করে অবৈধ এসব ইটভাটা চলছে বছরের পর বছর ধরে। নিয়ম নিতি তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডগায় তাল মিলিয়ে চালাচ্ছে এই সব ইট ভাটা।
এসব ইটভাটার বেশিরভাগ কৃষিজমি, বসতবাড়ি, বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে। বৈধ-অবৈধ সবগুলো ভাটাতেই জ্বালানি হিসেবে নিম্নমানের কয়লা পোড়ানোর কারণে মারাত্মক বায়ুদূষণ হচ্ছে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় আম, লিচু, নারিকেল, ধানসহ মৌসুমি ফল ও ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। পুড়ে যাচ্ছে টিনশেড ঘরের চাল।
এ ছাড়াও জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিয়ে তা দিয়ে ইট তৈরি করায় উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে ফসলি জমি। সুস্থ পরিবেশের জন্য এসব ইটভাটা এখন 'গলার কাঁটা' হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের হিসাব মতে, জেলার ৯টি উপজেলায় ১৭৭টি ইটভাটা রয়েছে। পরিবেশগত ছাড়পত্রের ভিত্তিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৬৭টি। লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে ১১০টি। এর বাইরে বাকি ৩০টি ইটভাটা বিভিন্ন কারণে বন্ধ বা পরিত্যক্ত রয়েছে। তবে তাদের তালিকার বাইরেও জেলায় আরও ইটভাটা রয়েছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ইটভাটা চালানো যাবে না। এ ছাড়াও ভাটা নির্মাণের আগে জেলা প্রশাসন, বিএসটিআই, স্থানীয় ভূমি অফিসসহ সরকারি কয়েকটি সংস্থার ছাড়পত্র নেওয়া বাধ্যতামূলক। এর ব্যত্যয় হলে ২ বছর কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এসব নিয়ম কাগজে থাকলেও তা মানছে না ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইটভাটার মালিকরা।
সরেজমিনে দেখা যায় জেলায় সব চেয়ে বেশি ইট ভাটা রয়েছে সরাইল, নাসিরনগর ও বিজয়নগরে। প্রতিটি ইটভাটাই ফসলি জমির মাঝখানে স্থাপন করা। প্রতিটি ভাটার ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে জনবসতি রয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ ইটভাটার ৫০০ মিটারের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলছেন, ভাটা মালিকরা বছরের পর বছর ধরে আইন লঙ্ঘন করলেও তাদের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসন। ইট প্রস্তুতের মৌসুম শুরুর আগে ভাটা মালিকরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে মোটা অংকের অর্থ লেনদেন করে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন বলেন, অবৈধভাবে ইটভাটা একটিও চালাতে পারবেনা। পরিবেশের জন্য হুমকি এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয় হবে, আমরা কিছু দিন আগেও জিসান ব্রিকস নামে একটি ইট ভাটা বন্ধ করে দিয়েছি। যাদের লাইসেন্স আছে তারা ইট ভাটা পরিচালনা করতে পারবে আর যাদের লাইসেন্স নাই তারা ইট ভাটা পরিচালনা করতে পারবে না।
অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নয়ন মিয়া বলেন অবৈধভাবে ইটভাটা পরিবেশের জন্য হুমকি এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয় হবে।
এ দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তার বলেন অবৈধ ইটভাটার তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ে এসব ইটভাটা বন্ধে অভিযান চালানো হবে। কিছু কিছু জায়গায় অভিযানও চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলায় নির্দেশনা দেওয়া আছে অবৈধ ইট ভাটাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা ও বিধি মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..