এমরান মাহমুদ প্রত্যয়(আত্রাই)নওগাঁ থেকে:
নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় আধুনিকতার উৎকর্ষতায় আর কালের আবর্তে গ্রাম বাংলার এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর এখন বিলুপ্তির পথে। গরীবের এসিখ্যাত মাটির বাড়ি এখন আর নেই বললেই চলে।
সরেজমিনে আত্রাই উপজেলার কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে গ্রাম বাংলার চির চেনা মাটির ঘর এখন আর তেমন চোখে পড়ে না । উপজেলার পতিসর, মনোয়ারী,কয়েড়া, বাঁকা,পালশা, কচুয়া,কাশিয়াবাড়ী, পাঁচুপুর,জয়সাড়া,পৈঁসাওতা, শিমুলকুচি, ইসলামগাঁথী, জগদাশ, মালিপুকুর, শিকারপুর,ভূপাড়া, মহাদীঘি,বেওলা, সাহাগোলা, মির্জাপুর, দীঘা, সিংসাড়া, ব্রজপুর, রসুলপুর, পাইকাড়া, মারিয়া, বান্দাইখাড়া, দমদমা, নওদাপাড়া, মিরাপুর, কালিকাপুর, দাঁড়িয়াগাথী, ঘোষপাড়া উপজেলার গ্রাম গুলোর মাটির ঘর ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে ইটের ঘড় নির্মাণ করা হয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে গ্রাম বাংলার চিরচেনা সেই মাটির ঘর এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। গ্রামের মাটির ঘর ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ইটের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাচীনকাল থেকে গ্রামবাংলায় মাটির ঘরের প্রচলন ছিল। এঁটেল মাটি দিয়ে এসব ঘর তৈরি করা হতো। মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিনত করে সেই কাদা ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হতো। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগে, কারণ একসঙ্গে বেশি উঁচু করে তৈরি করা যায় না।
প্রতিবার এক থেকে দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার ওপর একই উচ্চতায় দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দেয়াল ১০-১২ ফুট উঁচু হলে বেশ কিছুদিন ধরে রোদে শুকানো হয়। তারপর এই দেয়ালের ওপর বাঁশের চালা তৈরি করে খর বা টিন দিয়ে ছাউনি দেয়া হয়। একটি মাটির ঘর তৈরি করতে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগে। মাটির ঘর শীত গরম উভয় মৌসুমে বেশ আরাম দায়ক, তবে বন্যা, ভ’মিকম্প বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘরশতাধিত বছর পর্যন্ত টিকসই হয়। অনেক সময় মাটির ঘর দোতলা পযন্ত করা হয়।
গৃহিনীরা তাদের নরম হাতের কোমল ছোঁয়ায় নিপুন ভাবে কাদা দিয়ে লেপে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতো। এখন আর সেই মাটির ঘর চোখে পড়ে না বললেই চলে। এখনো বাপ-দাদার স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকেই খরচ করে দু-একটা মাটির ঘর টিকিয়ে রেখেছে। বর্তমানে মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে ইট, সিমেন্ট,বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘরগুলো।
মাটির ঘরগুলো বন্যা,ঝড়, জলচ্ছাসের মত প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ ক্ষতি সাধন হয় বলেই মানুষ ইট –সিমেন্ট এর ঘর-বাড়ি নির্মাণ করছে। তা ছাড়া গ্রামের মানুষ আগের তুলনায় এখন আধুনিক। প্রতি বছর মাটির ঘরে খরচ না করে একবারে বেশি খরচ হলেও পাকা ঘর-বাড়িই নির্মাণ করছে।
আর কিছু সময় পর হয়তো এই প্রজন্ম জানবেই না মাটির তৈরি কোন ঘর ছিল। আগামী প্রজন্মের কাছে মাটির ঘর মনে হবে রুপকথার গল্প।
এ জাতীয় আরো খবর..