জাহিদ খান(কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি)
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার জনবহুল এগারোমাথা বাজারের চারপাশে এক কিলোমিটারের মধ্যে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে ৬ টি ইটভাটা। নষ্ট করছে সদ্য নির্মিত মহাসড়ক, কৃষি জমি,পরিবেশের ভারসাম্য।ভাটার কাচামাল সংগ্রহে ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ ট্রাক্টর।অদক্ষ ট্রাক্টর চালকদের জন্য প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দূর্ঘটনা। নেই প্রশাসনের যথাযথ তদারকি।
ইটভাটা শিল্প বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি অপরিহার্য উপাদান। তবে, এই শিল্পের অপব্যবহার এবং অনিয়ন্ত্রিত সম্প্রসারণ দেশের পরিবেশ এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে। এক কিলোমিটার এলাকায় ৬টি ইটভাটা গড়ে ওঠা তারই একটি উদাহরণ।
ইট তৈরির জন্য প্রধানত জমির উর্বর টপ সয়েল ব্যবহার করা হয়। প্রতি বছর হাজার হাজার একর জমির উর্বর মাটি ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এর ফল
জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, কৃষি উৎপাদন কমছে।ফসলি জমি পরিণত হচ্ছে বন্ধ্যা বা অনুর্বর জমিতে কিংবা হাজামজা জলাধারে।
টপ সয়েল অপসারণের কারণে জমির পানি ধারণক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে মরু করণের দিকে ধাবিত হচ্ছে আমার সোনার বাংলা।
৬টি ইটভাটা একত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করলে তা স্থানীয় পরিবেশের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে।এ বিষয়ে পরিবেশবিদ গণের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়-ইটভাটায় কয়লা, কাঠ ও অন্যান্য জ্বালানি পুড়ানোর ফলে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড এবং সালফার ডাই-অক্সাইড নির্গত হয়। এই গ্যাসগুলো বায়ুদূষণের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী।
ইটভাটার কালো ধোঁয়া বৃষ্টিপাতের ধারা বাধাগ্রস্ত করে এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হয়।ইটভাটার কারণে পাশ্ববর্তী জলাশয়গুলোর পানি দূষিত হয়, যা মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।জমির মাটির স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় স্থানীয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সুফী সিদ্দিকী জানান এই এলাকায় কিছুদিন পূর্বেও পানীয়জলের জন্য ৪৫/৫০ ফিট বোরিং করলেই চলতো।কিন্তু বর্তমানে ১৭০/১৮০ ফিট বোরিং করেও পান উপযোগী পানি পাওয়া যাচ্ছে না।এ অবস্থা চালু থাকলে শীঘ্রই গ্রাম্য এ অঞ্চল মেগা সিটির মত পানীয় জলেত স্তরের সমস্যায় পড়বে।
অতিরিক্ত ইট ভাটার কারণে জনস্বাস্থ্য ও হুমকির মুখে।এ বিষয়ে নাগেশ্বরী উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা: আ ন ম জাহিদুর রশিদ(পলাশ) জানান- ইটভাটার কার্যক্রম স্থানীয় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়।
ধোঁয়া ও বায়ুদূষণের কারণে শিশু, বৃদ্ধ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে শ্বাসযন্ত্রের রোগ, অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের হার বাড়ছে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা চোখ ও ত্বকের রোগ সৃষ্টি করে।অনিয়ন্ত্রিত যত্রতত্র গড়ে ওঠা ইটভাটা গুলো আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে এলাকার জনস্বাস্থ্য অস্বাভাবিক হারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
অস্বাভাবিকবেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরে করণীয় সম্পর্কে সচেতন মহল মনে করেন-
নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে ইটভাটার অনুমোদন সীমিত করা এবং অপ্রয়োজনীয় ভাটা বন্ধ করা। পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদনের জন্য হাইব্রিড হফম্যান কিলন (HHK) এবং ভার্টিকাল শ্যাফট ব্রিক কিলন (VSBK) প্রযুক্তির ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।
টপ সয়েলের ব্যবহার বন্ধ করে বিকল্প কাঁচামাল যেমন ফ্লাই অ্যাশ এবং বালির ব্যবহার উৎসাহিত করা। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা এবং নিয়ম ভঙ্গকারী ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।
এক কিলোমিটারে ৬টি ইটভাটার মতো অবস্থা দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য বড় বাধা। উন্নয়নের জন্য ইট প্রয়োজন, কিন্তু এর জন্য পরিবেশ ধ্বংস করা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। সঠিক পরিকল্পনা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে ইটভাটা শিল্পকে পরিবেশবান্ধব ও জনস্বাস্থ্যবান্ধব করতে হবে নইলে এলাকার সার্বিক পরিবেশের বিপর্যয় কোনোক্রমেই রোধ করা সম্ভব হবে না বলেও বিজ্ঞজন মত প্রকাশ করেন।
এ জাতীয় আরো খবর..