×
  • প্রকাশিত : ২০২৪-১২-০৯
  • ৯৪ বার পঠিত
এএসএম হারুন 
ফেনী'র সোনাগাজীতে পালিয়ে যাওয়া প্রেমিক- প্রেমিকা খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে আরমান হোসেন নামে তাদের এক সহযোগিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত রোববার (৮ ডিসেম্বর) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নেওয়ায় সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভোয়াগ গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দুদু মিয়ার ছেলে আরমান হোসেন ও তার পাশ্ববর্তী বাড়ির একরামুল হকের মেয়ে জাহারা আক্তার জুথী দুইজন বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় জুথির মা সেলিনা বেগম গত মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর)  সোনাগাজী মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। পুলিশ তাদের খুঁজতে প্রেমিক আরমানের বন্ধুদের সহায়তা নেয়। পরে প্রেমিক আরমানের বন্ধু সুলাখালীর আরমানকে আটকের পর নারীও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন জুথির মা। মামলায় জুথির প্রেমিক আরমান হোসেন, তার বন্ধু আরমান হোসেন, আল আমিন, সাখাওয়াত হোসেন, রাণী বেগমকে (প্রেমিকের বোন) আসামী করেন। 

পুলিশকে সহযোগিতাকারী আল আমিন বলেন, গত ১ ডিসেম্বর আরমান (প্রেমিক) মেসেঞ্জারে ফোন দিয়ে আমার নিজস্ব সিএনজি চালক মাসুদের মোবাইল নাম্বার চায়। আমি সরল মনে নাম্বার দিয়েছিলাম। গত ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সোনাগাজী এলে মতিগঞ্জ ইউনিয়নের ভোয়াগ গ্রামের সাবেক মেম্বার ফারুকসহ কয়েকজন জোর করে আমাকে জিম্মি করে মতিগঞ্জ তুলে নিয়ে আসে। এসময় তাদের পালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর তারা আমাকে সোনাগাজী থানায় নিয়ে আসে এবং ফারুক মেম্বারসহ কিছু বিএনপি নেতা ও পুলিশ তাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা না করলে মামলা করার হুমকি দেয়। এসময় তারা আমার কাছ থেকে ঢাকার মিরপুরে থাকা বন্ধু আরমানের কথা জানতে চায় এবং তার লোকেশন ট্যাগ করে আমাকে রাজধানীর পল্লবী থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে আরমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে আনা হলে সে পুলিশকে জানায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে আরমান ও জুথি তার বাসায় বেড়াতে এসেছিল। একদিন আগে তারা সেখান থেকে চলে গেছে। এরপর সেখানে সোনাগাজী মডেল থানার এসআই শরীফ, আরমানকে চড়-থাপ্পড়, লাথি এবং লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে প্রেমিক প্রেমিকাদের না পেয়ে আরমানকে আটক করে সোনাগাজী থানায় নিয়ে আসে।

গ্রেপ্তার আরমানের বড় ভাই আরাফাত বলেন, আমার ভাই ঢাকার একটি মোবাইল দোকানে চাকুরী করে। তার বন্ধু আমরান (প্রেমিক) বউ নিয়ে তার বাসায় বেড়াতে যায়। এ অপরাধে পুলিশ আমার ভাইকে মারধর করে সোনাগাজী থানায় নিয়ে আসে। একে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে আরমানকে সোনাগাজী সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসার জন্য ওষুধ  দেওয়া হয়েছিল এসআই শরীফ সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। এসময় এসআই শরীফ আরমানকে রিমান্ডে এনে নির্যাতন করার হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করে। ভাইয়ের কথা চিন্তা করে আমি তাকে ৩২ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু এরপর ৮ ডিসেম্বর নতুন করে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এরআগে মেয়ের পক্ষে থেকে আসা ফারুক মেম্বার,  বিএনপি নেতা সুফিয়ানসহ হাসপাতাল স্ট্যান্ডের বৈদ্দ্য জাহাঙ্গীর ঘটনা সমাধানের কথা বলেও আমাদের কাছে চায় এবং টাকা আদায়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। আমার ভাইয়ের নাম মামলায় তারা জড়িয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সোমবার (৯ ডিসেম্বর) আমার ভাইকে কারাগারে দেখতে গিয়ে জেনেছি পুলিশের মারধরের প্রভাবের কারণে সে ঠিক মতো হাটতে পর্যন্ত পারছে না। 

মামলার অপর আসামি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আরমান (প্রেমিক) সর্বশেষ কথা হয়েছিল অক্টোবরের ২৩ তারিখে। আর আরমান মেয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে ২ ডিসেম্বর। এরপর এখন পর্যন্ত তার সাথে যোগাযোগ হয়নি। এরপরও আমাকে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে হয়রানি করেছে এবং মামলা দিয়েছে। থানায় ডেকে নেওয়ার পর এসআই শরীফ আমাকে আরমানের (প্রেমিক) কললিস্ট দেখালে সেখানে প্রথমে সিএনজি অটোচালক, আকরাম, ফারুক মেম্বারের এলাকার ছেলে বাবুসহ বেশ কয়েকজনের নাম্বার ছিলো। ফারুক মেম্বার তার এলাকার ছেলেদের বাঁচিয়ে আমাদের ফাঁসিয়ে দিলো। কিন্তু ফারুক মেম্বার ওই মেয়ের পরিবারের কেউ হন না। আমি প্রেমিক আরমানের বন্ধু জানার পর থেকে ফারুক মেম্বার ২ লাখ টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে মামলায় অবশ্যই নাম দিবে বলে হুমকি দেয়। আমি টাকা না দেওয়া ভুল তথ্য দিয়ে আমাকে মামলায় জড়িয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক মেম্বার বলেন, জুথি আমার জেঠাতো ভাইয়ের মেয়ে। আত্মীয় স্বজন হিসেবে তার পরিবারকে সহযোগিতা করেছি। টাকা দাবি, আরমানকে গ্রেপ্তার ও পল্লবী থানায় মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে কিছু বলতে রাজি হননি।

মামলা ছাড়া আরমান কে নিয়ে আসা এবং মারধরের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে  মামলার তদন্ত কর্মকর্তার শরীফ হোসেন বলেন, সোনাগাজীর এএসপি (সার্কেল) তসলিম হুসাইনের নির্দেশে আমি সবকিছু করেছি।  আমি ঢাকা থেকে তাকে ৭ ডিসেম্বর নিয়ে এসেছিলাম। এর পরদিন ৮ ডিসেম্বর মামলা নিয়েছে সোনাগাজীর সার্কেল এএসপি ও থানার ওসি। টাকার বিষয়ে আমি সারাসরি কথা বলবো।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বায়েজিদ আকন বলেন, আরমান হোসেন ও জাহারা আক্তার জুথীকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে মারধরের বিষয়টি সত্য নয়। ঢাকা থেকে আনার পর মারধরের বিষয়টি আমার চোখে পড়েনি।

রিমান্ডের নামে হুমকি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার অর্থ আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি বলেন, এ বিষয়ে আমাকে কেউ অবগত করেনি। আসামি পক্ষের লোকজন নিজেদের বাঁচাতে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে অনেক কথা বলে থাকে। টাকা আদায়ের বিষয়টিও সেরকম মনে হচ্ছে। তারপরও এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat