নিজস্ব প্রতিবেদক : মাহাবুবুল ইসলাম আবির
ভারত সরকারের মদদে বাংলাদেশি হাইকমিশনে হামলা করে যুদ্ধ বাধানোর চক্রান্ত করছে
নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ভারতকে বাংলাদেশের নিকট ক্ষমা চাইতে হবে -ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেছেন, ভারত তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায় বাংলাদেশের উপর ক্ষেপে গেছে। বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের স্বার্থে সবকিছু করে দেশকে গিলে খাওয়ার ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল। দেশ ভারতের রাহু মুক্ত হয়েছে। ভারতের ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে এখন আর কিছু হচ্ছে না। তাই ভারতের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এখন পায়ে পারা দিয়ে যুদ্ধ বাধানোর চেষ্টা করছে। উগ্রবাদী ইসকনকে দিয়ে সরকারি আইনজীবীকে হত্যা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে উস্কানী দিচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন হাইকমিশন, উপ-হাইকমিশনে হামলা ও পতাকা ছিঁড়ে চরম অসভ্যতার পরিচয় দিয়েছে। মাওলানা ইউনুছ আহমাদ আন্তর্জাতিক আইন এবং ভিয়েনা কনভেনশনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের সব কূটনৈতিক মিশন ও কুটনৈতিকদের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মুসলমানদের হত্যা করে দেশে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা সৃষ্টি করে দেশে গৃহযুদ্ধ লাগাতে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে ভারত। কিন্তু মুসলমানরা হিন্দুদের মত অসভ্য নয়। তারা অত্যন্ত ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিয়েছে। মুসলমানরা ক্ষেপে গেলে জালিমদের রক্ষা হবে না।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলা ও বাংলাদেশ বিরোধী ভারতীয় উস্কানীর প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম, প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, উত্তর সেক্রেটারী মাওলানা আরফিুল ইসলাম, দক্ষিণ সেক্রেটারী ডা. শহিদুল ইসলাম, মুফতী হাফিজুল হক ফাইয়াজ। দক্ষিণ সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কেএম শরীয়াতুল্লাহ ও উত্তর সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতী ফরিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মাওলানা ইউনুছ আহমাদ হাইকমিশনে এধরনের হামলা, পতাকা পুড়িয়ে ফেলা এবং কুটনৈতিকদের উপর আক্রমনের ঘটনাকে অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও উস্কানী আখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ও প্রধান উপদেষ্টার কুশপুত্তলিকা পোড়ানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক আইন ও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনকে ডেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করতে হবে। নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হলে ভারত থেকে সকল দূতাবাস গুটিয়ে ফেলতে হবে।
মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, কলকাতা ও আগরতলায় ভারতের সরকার দলীয় উগ্র কর্মীরা বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলা করে দেশে যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। বিগত ১৬ বছরে ভারতের অভিপ্রায়ে শেখ হাসিনা দেশ পরিচালনা করেছিল। হাসিনা জনতার আন্দোলনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। খুনি হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছে। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত ভারতের মিডিয়াগুলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উস্কানীমূলক নিউজ প্রচার করছে। ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, আমরা ভারতকে ভয় করিনা। এদেশে ১৬ কোটি যোদ্ধা ভারতের চক্রান্ত রুখে দিতে প্রস্তুত। ইসকন ভারতের উগ্রবাদী সংগঠন। ভারতের মদদে ইসকন নেতা চিন্ময় দাস বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত। বাংলাদেশের পতাকার উপরে গেরুয়া পতাকা উত্তোলন করে রাষ্ট্রদ্রোহী কাজ করায় দেশের আদালতে তার নামে মামলা হয়েছে। সে আলোককে চিন্ময়কে গ্রেফতার করা হলে ভারতের সংসদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হুমকি-ধমকি এটা কিসের আলামত?
মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, ভারত সরকারের প্রকাশ্য ইন্ধনে হাইকমিশনে হামলা হয়েছে। লাল-সবুজের পতাকা ছিঁেড় ফেলা হয়েছে, আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন, উপহাইকমিশনসহ কুটনৈতিকদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ভারত সরকারের মদদে প্রতিনিয়ত মসজিদ, মাদরাসা, মুসলমানদের দোকানপাঠ, বাড়ী-ঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। মুসলমান হত্যা করে বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে। সেই ভারত এখন আমাদেরকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বয়ান দিচ্ছে? তিনি বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গি আছে বলে ভারতের মিডিয়াগুলো অপপ্রচার করছে। বাংলাদেশে কোন জঙ্গি নেই। এটা খুনি হাসিনার সৃষ্টি। বাংলাদেশে আমরা সকলেই মিলেমিশে ভাই-ভাই হয়ে কাজ করছি।
সভাপতির বক্তব্যে প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, আগস্ট বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পরাজয়ের পরে কসাই মোদি হাসিনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। হাসিনা ভারতে বসে বসে লাল-সবুজের বাংলায় অশান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। বাংলাদেশের জনগণ ভারত বিরোধী নয়, যেমনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরোধী তেমনি কসাই মোদি বিরোধী। আগরতলা উপ-হাইকমিশনে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরে একটি বিশাল মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বের হয়ে পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর ঘুরে পুনরায় পুরানা পল্টন মোড়ে এসে সমাপ্ত হয়। মিছিলে ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা।
এ জাতীয় আরো খবর..