×
সদ্য প্রাপ্ত:
  • প্রকাশিত : ২০২৪-১২-০২
  • ১৩৩ বার পঠিত
ডেস্ক রিপোর্ট
দেশের একমাত্র রোপওয়েটি অবস্থিত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ। ১৯ দশমিক ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ রোপওয়ে বন্ধ রয়েছে সাত বছরেরও বেশি সময় ধরে। অবৈধ পাথরখেকোদের দৌরাত্ম্যে বর্তমানে অস্তিত্বই হারাতে বসেছে রোপওয়েটি। এর জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় সাড়ে তিনশত একর জমি দখল করে সেখান থেকে অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে গর্ত খুঁড়ে নিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন তারা। ফলে ঝুঁকিতে পড়ে গেছে রোপওয়েটির বাঙ্কার। হেলে পড়েছে রোপওয়েটির খুঁটি, ঝুলে রয়েছে রোপওয়েটির আবাসনের বিল্ডিং গুলো। চুরি হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রপাতিও।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫আগস্ট থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে চলছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র ও ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাঙ্কার থেকে পাথর ও মালামাল লুটপাট। যেখানে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে লুটপাট বন্ধ করার কথা ছিল। সেখানে চিত্র ভিন্ন। প্রশাসন রয়েছে চুপচাপ। লুটপাট বন্ধে নেই দৃশ্যমান কোনো অভিযান। লুটপাটের কথা প্রশাসন কিছু জানে না তা কিন্তু নয়, সবকিছু জেনেও তারা চুপচাপ! কিন্তু কেন? অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই চালানো হচ্ছে এ লুটপাট। রহস্যজনকভাবে লুটপাট বন্ধে প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট ও টাস্কফোর্সের অভিযান না থাকার কারণে পাথরখেকো ও দুর্বৃত্তরা পাথর এবং রোপওয়ের মূল্যবান মালামাল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।

৫আগস্ট সরকারের পতন হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিল অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ও রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকায় বেড়ে যায় পাথর লুটপাট। এছাড়াও বাঙ্কার থেকে শতকোটি টাকার সরকারি মালামালও চুরি করা হয়। স্থানীয় আওয়ামীলীগ, বিএনপি নেতারা মিলেমিশে একাকার হয়ে চলে এমন তান্ডব ও লুটতরাজ। গত ১৫ অক্টোবর পাথর লুটপাট বন্ধে পুলিশ অভিযান করলে তাদের উপর হামলা চালায় পাথর সন্ত্রাসী দূর্বৃত্তরা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি জাবের আহমদ এবং আব্দুল্লাহ নেতৃত্বে অভিযানকারী পুলিশের উপর হামলা করতে নির্দেশ দেন। এ হামলায় আহত হন পুলিশের এসআই শরিফুল ইসলাম। অবশ্য পরবর্তীতে তিনি বাদী হয়ে জাবের ও আব্দুল্লাহসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করে কোম্পানীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় তাৎক্ষণিক ৪জন ও পরে আরো ১জনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের মামলায় তাৎক্ষণিক পাথর সন্ত্রাসী কয়েকজনকে আটক করা হলেও ট্রলি গাড়ি ও পাথরের মালিক আফিয়া বেগম (মরি) এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টায় উপজেলার কালিবাড়ী এলাকার লিলাইবাজারে নদীর তীরে পাথর বোঝাই কয়েকটি গাড়ি আটক করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ গাড়িগুলো থানায় নিয়ে আসার প্রস্তুতি নিলে ছাত্রলীগ নেতা জাবের আহমদ ও আব্দুল্লাহর নির্দেশে পুলিশের উপর হামলা চালায় প্রায় শতাধিক লোক।

পাথর কোয়ারি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দিনের বেলা কোয়ারির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ধলাই নদের বিভিন্ন অংশে বালুও পাথর এবং রেলওয়ের রজ্জুপথের (রোপওয়ে) সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকা থেকে শত শত গর্ত খুঁড়ে পাথর তুলে নিয়ে বারকি নৌকায় করে নিয়ে যাচ্ছে দূর্বৃত্তরা। এসব বালু ও পাথর ধলাইয়ের পশ্চিম পাড়ে গুচ্ছগ্রাম পুলিশ ফাঁড়ি নদীঘাট, গুচ্ছগ্রাম বাজার নদীঘাট এবং ধলাইয়ের পূর্ব পাড়ে নতুনবাজার ও কালীবাড়ি এবং কলাবাড়ী এলাকায় স্তূপাকারে রাখা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে সুযোগ করে ট্রাক ও পিকআপে বালু-পাথর নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সন্ধ্যার পরও একইভাবে বালু-পাথর উত্তোলন করতে দেখা যায়।

বিশ্বস্ত সূত্রে নিশ্চিত করা হয়, কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে সংরক্ষিত এলাকা (বাঙ্কার) এলাকায় পাথর লুটপাটে সক্রিয় স্থানীয় একটি পাথরখেকো চক্র। সেখানে দিনের পাশাপাশি রাতের শত শত গর্ত খুঁড়ে চলছে অবাধে পাথর লুট। পাথরখেকো চক্র পাথর লুটপাটে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। পাথর উত্তোলনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের একমাত্র রজ্জুপথ ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে বাঙ্কার। বেশ কিছুদিন ধরে রোপওয়ে বাঙ্কার এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে রফাদফার মাধ্যমে বাঙ্কার এলাকা থেকে পাথর লুটপাট করে রেলওয়ে রোপওয়ে বাঙ্কার ধ্বংসে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, সংরক্ষিত বাঙ্কার এলাকায় গর্ত খুঁড়ে বর্তমানে পাথর উত্তোলন হচ্ছে বিএনপির সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক বাহার আহমেদ রুহেল ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের নেতা রজন মিয়া ও গিয়াস উদ্দিন সহ ৫/৬ জনের নেতৃত্বে একটি পাথরখেকো চক্র। তারা সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস্তুুপে পরিণত করে পাথর উত্তোলন করছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পেশীশক্তির বলে পাথরখেকো চক্রটি কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ এলাকার ধলাই নদী থেকে বিরামহীন চালিয়ে কোটি কোটি টাকার পাথর সম্পদ লুটে নিলেও রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। মাঝে মধ্যে পাথরখেকো চক্রের বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে পুলিশ ও বিজিবি’র পক্ষ থেকে লোক দেখানো অভিযান চালানো হলেও প্রতিবার জেলা যুবদলের নেতা বাহার আহমেদ রুহেল ও উপজেলা যুবদলের নেতা রজন মিয়া এবং গিয়াস উদ্দিনসহ এরা রয়ে যান বহাল তবিয়তে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দেশের প্রধান কোয়ারি ভোলাগঞ্জ। সঙ্গে রয়েছে ধলাই নদী বালুমহাল। কোয়ারির পাশে রেলওয়ের বাঙ্কার এলাকা। এর উত্তরে সীমান্তঘেঁষা সাদা পাথর পর্যটন কেন্দ্র। সরকার পতনের পর পরই ৬ আগস্ট থেকে বিরামহীন চালিয়ে যাচ্ছে পাথর সন্ত্রাসীরা তাদের তান্ডব আর এমন দানবীয় তান্ডবের শিকারে রোপওয়ে  বাঙ্কার এলাকা থেকে শত শত  কোটি টাকার সাদাপাথর লুট হচ্ছে। বালু-পাথর লুট অব্যাহত থাকায় গত কয়েক মাসে পাথরখেকোদের আঁচড়ে প্রায় বিলীন হওয়ার পথে ভোলাগঞ্জের রোপওয়েটি লুটেপুটে খাচ্ছে দূর্বৃত্তরা। গভীর ভাবে ঘুমিয়ে আছেন স্থানীয় প্রশাসন। সরকার পতনের পর পরই রেলওয়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সাদাপাথর ও বাঙ্কার এলাকা থেকে চলে গেলে অরক্ষিত হয়ে পড়ে সেই এলাকা। তবে চারটি বিজিবি ক্যাম্প ও পোস্ট থাকার পরও প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পাথর লুট করা হচ্ছে। অভিযোগ ওঠে, প্রশাসনের দূর্বলতা ও বিজিবিকে ম্যানেজ করেই তা লুট করা হচ্ছে। যা স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্পে টহলে থাকা বিজিবি সদস্যরা প্রতি নৌকা থেকে ৫০০ টাকা আর থানা পুলিশের নামে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়।

পুরো এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোলাগঞ্জ রেলওয়ের বাঙ্কার এলাকার তিনটি স্থানে শত শত লোকজন সীমাহীন গর্ত খুঁড়ে নিয়ে এসব গর্ত থেকে পাথর উত্তোলন করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকার পরিবর্তনের পর বারকি শ্রমিকদের একাধিক সিন্ডিকেট, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মী তা নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। এদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী শৈবাল শাহরিয়ার সাজন, আওয়ামীলীগের লাল মিয়া, তোফাজ্জুল হোসেন রাজু, ট্রাক পিকআপ কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি কবির হোসেন ও সেক্রেটারি মাহফুজ মিয়া, জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা বাহার আহমদ রুহেল, আওয়ামী লীগের মতিউর রহমান এবং পাথর শ্রমিক বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক, তৃণমূল বিএনপির নেতা আবুল হোসেন সহ ১৫/২০ জন।

রেলওয়ে বাঙ্কার সীমান্তের ও ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর ও শারফিন টিলা থেকে পাথর লুট বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা বলেন, ভোলাগঞ্জে একাধিক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকবে। শারফিন টিলায়ও অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রশাসন প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কাজ করছে।

ভোলাগঞ্জ রোপওয়েটি দায়িত্বে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আবু জাফর মিঞার সঙ্গে একাধিক বার সরকারি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই মিটিংয়ে আছেন বলে কথা বলতে নারাজ।

স্থানীয় বিজিবি ক্যাম্প,পাথর কোয়ারি, কালাইরাগ, কালাসাদক সরকারি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই একই সুর তিন ক্যাম্প কমান্ডারদের যে মিডিয়াতে কথা বলার অনুমোদন নেই। 
 
এসব বিষয় নিয়ে বিজিবি ৪৮ অধিনায়ক সিও লেঃ কর্ণেল মোঃ হাফিজুর রহমানের সরকারি মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমাদের বিজিবি চাঁদাবাজি সঙ্গে জড়িত হলে আমি খোঁজ নিয়ে দ্রুত সম্ভব ব্যবস্হা নিবো।

কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান রেলওয়ে বাঙ্কার, সাদাপাথর ও শাহ আরেফিন টিলাসহ ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি গুলোতে এমন পাথর লুটপাটে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন আজ ব্যস্ত কাল ফোন দিন, তিনার কথা মতো একাধিক বার যোগাযোগ করা হল তিনি মোবাইল ফোন রিসিভ করেননি।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat