কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আকস্মিকভাবে পদ্মা নদীতে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে পদ্মা নদীর ভাঙন দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করছে। ভেঙে পড়ছে নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ ভাঙনে মাদ্রাসা, মসজিদ, কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা ও নদী রক্ষা বাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে কুষ্টিয়া-ঈশ^রদী মহাসড়কও রয়েছে ভাঙনের ঝঁকিতে। মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া ও সাহেবনগর গ্রামে সব থেকে বেশি ভাংন দেখা দিয়েছে।
গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সাহেবনগর বেড়িবাঁধ ভাঙন থেকে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিটার দূরে রয়েছে। সেই সাথে ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ৫ হাজার পরিবারের বাড়িঘর। স্থানীয় মানুষরা ভাঙ্গন আতঙ্কে বাড়িঘর থেকে সরে গিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছেন। এসব পয়েন্টে নদী ভেঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকের আবাদী জমি। প্রতিদিন পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানির প্রবল স্রোতে ও পানির তীব্রতায় বহলবাড়ির সাহেবনগর, বারোমাইল, টিকটিকিপাড়া, মুন্সিপাড়া, ১২ মাইল এলাকায় ভাঙ্গন তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঁধ ভেঙে গেলে সাহেবনগর, নওদা খাদিমপুর, মুন্সিপাড়াসহ আশেপাশের দুই থেকে চার গ্রাম পানিতে প্লাবিত হবে। পানিবন্দি হয়ে পড়বে প্রায় ৫ হাজার পরিবারের ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ। বর্তমানে পদ্মা নদীতে পানি তুলনামূলক কম হলেও বন্যার পানি আসা শুরু করেছে। যার ফলে তীব্র ভাঙনের দেখা দিয়েছে এবং নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে শত শত একর ফসলি জমি।
স্থানীরা জানিয়েছেন, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন এবং পদ্মা নদীর মাঝে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণেই পদ্মায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। যা দেখে স্থানীয় মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। গত ১০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টায় নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকার সাধারণ মানুষ নদী ভাঙ্গন রক্ষায় দ্রুত বাঁধ নির্মাণ ও ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। এরপর কুষ্টিয়া ভেড়ামারা মহাসড়ক ২ ঘন্টার জন্য অবরোধ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে। নদী ভাঙতে ভাঙতে কুষ্টিয়া-ঈশ^রদী মহাসড়কের খুব কাছি কাছি চলে আসায় হুমকির মুখে আছে মহাসড়কটি। পদ্মার তীব্র ভাঙন রোধ করা না গেলে যেকোনো সময় এই জাতীয় মহাসড়ক ভাঙনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সেই সাথে ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর সহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে বন্ধ হয়ে যেতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই পদ্মা ভাঙ্গন রোধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় এলাকাবাসী আব্দুল জলিল বলেন, নদী ভাঙ্গনে আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। কেউ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। বাধ্য হয়ে আজ রাস্তায় নেমে এসেছি প্রতিবাদ জানাতে। নদী ভাঙ্গন রোধ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আমরা রাস্তা থেকে যাব না। যেভাবে নদী ভাঙছে, যেকোনো সময় আমাদের ঘরবাড়ি নদীর পানিতে তলিয়ে যাবে। স্থানীয় অপর এলাকাবাসী কাদের বলেন, আমরা শুধু শুনে আসছি পদ্মা নদীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প পাশ হয়েছে। কিন্তুবিগত ১ থেকে দেড় বছর কোন কাজ আমাদের চোখে পড়েনি। এখনই যদি বাঁধ নির্মাণ না করা হয়, তাহলে আমাদের কোন লাভই হবে না। নদী ভাঙ্গন রোধ করতে না পারলে আমাদের কয়েক হাজার বাসিন্দা পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে রিফুজি হয়ে যাবে। আমরা আমাদের প্রতিবেশী ভাই বোনকে ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে চায় না। এলাকাবাসী বিউটি খাতুন বলেন, আমাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে আমরা কোথায় থাকবো। আমার পরিবারে তিন ছেলে মেয়ে এবং শাশুড়িকে নিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে জমি কিনে ঘর বানানোর সমর্থ্য নাই। ভাঙনে বাড়িঘর নদীতে চলে গেলে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। সরকারের কাছে আমার অনুরোধ আমাদেরকে বাঁচান। এলাকাবাসী মোঃ করিম বলেন, আজ দিনের মধ্যে যেটুকু জমি আছে তাও ভেঙে যাবে।
এ জাতীয় আরো খবর..