প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের আগে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। ঈদের আগে সব ধরনের মসলার দাম হয়েছে দ্বিগুণ। আদা রসুন পিঁয়াজের বাজার লাগামহীন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে শসার দাম। কাঁচা মরিচের দাম ২৫০ ছাড়িয়েছে। এমনকি ঈদের এক দিন আগেও ৮০০ টাকার নিচে মেলেনি গরুর মাংস। ক্রেতারা বলছেন, ঈদের আগের এ সময় দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই, কারণ সব ধরনের মসলা আগেই আমদানি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি করা সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে।
রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, খিলক্ষেতসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কোথায়ও মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে নেই। একেক বাজারে একেকরকম দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। মালিবাগে এলাচ ৩, হাজার ৬০০ টাকা, রামপুরায় ৪ হাজার টাকা। আবার লবঙ্গ রামপুরায় ১ হাজার ৭৭০ টাকা, মালিবাগে ২ হাজার টাকা। এভাবেই ঈদের আগে সব ধরনের পণ্য নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। মসলার দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে এলাচ। মানভেদে এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০০-৪ হাজার ২০০ টাকায়। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর তথ্য বলছে, গত বছর কোরবানির আগে ছোট এলাচের দাম ছিল ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা। সে হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যটির দাম দুই গুণের মতো বেড়েছে। বাজারে দারচিনির কেজি ৫৬০ থেকে ৬০০ টাকা। এক মাস আগেও যা কেজিতে ৫০ টাকা কম ছিল। আর গত বছর কোরবানির আগে দারচিনি বিক্রি হয়েছিল ৪৬০-৫২০ টাকা কেজি। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৬০-২ হাজার টাকায়। গত কোরবানির আগে এর দাম কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা কম ছিল। ধনের কেজি এখন ২৪০ থেকে ৩৬০ টাকা। বছরখানেক আগে যা ছিল ১৩০-১৬০ টাকা। প্রতি কেজি তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ২০০-৩০০ টাকায়। এক মাসে এ পণ্যের দাম ৫০ টাকার বেশি বেড়েছে। গত বছর এ সময় তেজপাতার দাম ছিল ১২০-১৫০ টাকা। এ ছাড়া জয়ত্রী ৪ হাজার, জায়ফল ১ হাজার ৫০০, কাজুবাদাম ১,২০০-১,৪০০ ও কাঠবাদাম ১ হাজার-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাসের ব্যবধানে এ পণ্যগুলোর দাম বেড়েছে।
বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে আদা, রসুন, পিঁয়াজ। পিঁয়াজ গত সপ্তাহে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকায়। আদা কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে মানভেদে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দেশি রসুন ২০০ থেকে ২২০ আর আমদানি রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাত পোহালেই উদযাপিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এই ঈদে সবাই কোরবানি করার পাশাপাশি অন্যদের মধ্যে মাংস বিতরণ করে থাকেন। এ সময়ে বাজারে মাংসের চাহিদা খুব বেশি না থাকলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। রাজধানীর বাজারে ৭৮০ টাকার নিচে মিলছে না গরুর মাংস। পাশাপাশি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, কোরবানির ঈদের সময় হলেও এ সময়ে প্রচুর পরিমাণে গরু-খাসির মাংস বিক্রি হয়। মূলত যারা ছুটি পাননি বা কাজের কারণে ঢাকায় থাকছেন তারা ঈদের সময় গরু-খাসির মাংসের ক্রেতা।
ঈদকে সামনে রেখে শসা ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচের কেজি ২২০-২৬০ টাকা, কচুরমুখি ৮০ টাকা, বেগুন ৫০-৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৪০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০-৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, ঝিঙা ৭০ ও শজনে ১৬০ টাকা আর প্রতিটি লাউ ৫০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, বাজারে এই সময় মসলার দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা দেখি না। বাজারে এখন যেসব মসলা রয়েছে এগুলো দুই মাস আগে আমদানি করা হয়েছে। বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকারের এতগুলো সংস্থার মধ্যে ভোক্তা অধিকার ছাড়া আর কাউকে বাজার মনিটরিংয়ে দেখা যায় না। এগুলো শক্ত হাতে দমন করতে হবে। এখন ব্যবসায়ীরা এসএমএস-এর মাধ্যমে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ ধরনের সিস্টেমের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..