ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :
ঠাকুরগাঁওয়ে শাকিল হত্যা মামলায় স্ত্রী বাদী হতে চাওয়ায় তাঁর উপরে হামলা, মারপিট ও হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে , ন্যায় বিচার চেয়ে ভূক্তভূগি পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। শনিবার দুুপুরে শহরের টাটকা চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে ভূক্তভূগি পরিবারের পক্ষে তাঁর পিতা আবুল কাশেম বিচার চেয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভূক্তভূগি পরিবারের পক্ষে তাঁর পিতা আবুল কাশেম ও ভূক্তভূগি কাকলী আক্তার।
লিখিত বক্তব্যে তারা অভিযোগ করে বলেন, জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় হলদিবাড়ি হাটে শাকিল হত্যার আলোচিত ঘটনায় তৎকালীন সময়ে হত্যা মামলা করা হয়। সেই সময় শাকিল এর বিধবা স্ত্রী কাকলী আক্তারকে হত্যা মামলার বাদী হতে না দিয়ে সুকৌশলে ও তড়িঘড়ি করে শাকিলের মৃত্যুর পূর্বেই একটি মারামারির মামলা করা হয়। মামলার বাদী হন তাঁর ভাই সাঈদ আলম। শাকিলের মৃত্যুর পরে যেটি হত্যা মামলায় পরিণত হয়।
শাকিল এর বিধবা স্ত্রী কাকলীরের অভিযোগ উক্ত মামলার কিছু ভুল ও অসংগতি দেখতে পেয়ে বারবার সাঈদকে জানালেও সে কোন আমলে না নিয়ে এ মামলার মনগড়া ও ভূল তথ্য সম্বলিত চার্জশিট করায়। এ ঘটনার পরে শাকিল এর বিধবা স্ত্রী কাকলী নিজেই হত্যা মামলার বিচার চাইতে কোর্টে এই চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি প্রদান করেন। এরই ধরাবাহিকতায় প্রকৃত খুনিদের বিচারের চাইতে শাকিল এর বিধবা স্ত্রী কাকলী আদালতে পৃথক মামলা করায় গত ২০/০৫/২০২৪ইং তারিখে তার উপর বর্বর হামলা চালায় সাঈদ আলমসহ তাঁর পরিবার ও সহযোগিরা। এ সময় তাঁরা কাকলীকে চোখে, মাথায়, পায়ে, পিঠ বুকে বেদম প্রহার করে। এসময় তারা কাকলীকে হত্যার উদ্দেশ্যে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে ধরা হয়। নিজেকে বাঁচাতে ভূক্তভুগি পুলিশের সহায়তার জন্য ৯৯৯ এ কল করলে তাঁকে দ্বিতীয় দফায় আবারো নিষ্ঠুরভাবে মারপিট করে হামলাকারীরা। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে প্রথমে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতাল ও পরে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এ ঘটনায় গত ০৩/০৬/২০২৪ ইং তারিখে বালিয়াডাঙ্গী আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন ভূক্তভুগি কাকলীর বাবা আবুল কাশেম।
এদিকে ঘটনা ও মামলা দায়েরের পর থেকে ভূক্তভুগি কাকলী ও তাঁর পরিবারকে বাসায় ঢুকতে না দিয়ে হত্যার ও গুমের হুমকি প্রদান করে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে সাঈদ ও তাঁর লোকজন। এ ঘটনার পর থেকে নিজের বাসায় ঢুকতে না পেরে অন্যায় অবিচারের শিকার হয়ে এবং নিরাপত্তাহীনতা ও শাকিল হত্যা মামলার প্রকৃত আসামীদের শাস্তি ও বিচার দাবিতে এই সংবাদ সম্মেলন করেন শাকিল এর বিধবা স্ত্রী কাকলী ও তাঁর পরিবার।
এতে কাকলীর বাবা আবুল কাশেম বলেন, আমি ও আমার মেয়েসহ পরিবারের সকলে অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার জামাতার হত্যার বিচার চাইতে গিয়ে হামলা ও হুমকির শিকার হচ্ছি আমরা। আমার মেয়ে ও নাতনী নিজের বাসায় পর্যন্ত যেতে পারছে না। এসব ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভুগি কাকলী আরো বলেন, আমার স্বামী শাকিলকে হত্যার করেও হত্যাকারী ও তাদের সহযোগিরা ক্ষান্ত হয়নি। তারা আমাকে ও আমার সন্তানতেও মেরে ফেলতে চায়, যেনো শাকিল হত্যার প্রকৃত খুনিদের কেউ বিচার চাইতে না পারে। তাছাড়া আমার ছোট কন্যা শিশু সন্তানটি এ ঘটনার পরে পারছেনা নিজ বাসায় থাকতে ও স্কুলে যেতে। তাঁর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে আমার স্বামী শাকিল হত্যার বিচার চাওয়ায় আমাকেও হত্যার হুমকি দিচ্ছে সাঈদ ও সহযোগিরা। এ ঘটনায় আমি ও আমার সম্পূর্ণ পরিবার ভয় আতঙ্কে দিনাতিপাত করছি এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।
আমি আমার স্বামীর বাসায় ফিরতে এবং শাকিল হত্যার প্রকৃত আসামীদের বিচারের জন্য সাংবাদিক, পুলিশ ও প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা চাই।
সংবাদ সম্মেলনে জেলার বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ০৩/০৯/২০২২ ইং তারিখে জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হলবিবাড়ি হাটে হত্যার উদ্দ্যেশে মাথায় গুরুত্বর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে দিনাজপুর এম আবদুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাদীন অবস্থায় মারা যান মৎস্যজীবিলীগ নেতা শাকিল আহমেদ।
এ জাতীয় আরো খবর..