স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা:
কুমিল্লার তিতাসে বহু জমি-জমার মালিক, দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মো. জাকির হোসেন নিজেকে ভূমিহীন কৃষক পরিচয় দিয়ে তথ্য গোপন করে ১১৪ শতক সরকারি খাস ভূমি দখল চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে । ওই ভূমি প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বন্টন কিংবা 'বঙ্গবন্ধু গ্রামীণ স্টেডিয়াম' নামে খেলার মাঠ করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় জনসাধারণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিতাস উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা মৌজার সাবেক জেএল নং-১৫২, হালে ২৭, সিএস খতিয়ান নং ১,আরএস খতিয়ান নং ১,বিএস খতিয়ান নং ১৫১, সাবেক ৪৫/৪৯২ দাগের (হাল দাগ ৫৩) মোট ১১৪ শতক ভূমি স্থানীয় জনগণ নিজ নিজ প্রয়োজনে শুকনো মৌসুমে খেলার মাঠ,গোচারণ ভূমি, ভূমিহীন জনগণ ধান বা ভুট্টা চাষ , এবং বর্ষা মৌসুমে জনগণ নৌচলাচল ও গ্রামের পানি প্রবাহের জলাধার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ ওই ভূমি তিতাস উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামের মৃত আবদুর রহমান সরকার ওরফে বাচ্চু মিয়ার ছেলে মো. জাকির হোসেন পৈতৃক সম্পত্তি দাবি করে এবং বালু ভরাটের মাধ্যমে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। যদিও সে প্রায় ৪০ বছর যাবত পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। স্থানীয় জনস্বার্থে ভূমিহীন দলিলটি বাতিল চেয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন দুধঘাটা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মৃত আব্বাস আলী ভুইয়ার ছেলে মো. সফিকুল ইসলাম সহ আরো কয়েকজন।
সফিকুল ইসলাম বলেন, এটি একটি সরকারি খাস ভূমি, আমরা জন্মের পর থেকেই দেখি এটি জলাশয়। এখানে মাছ ধরতাম এবং গোসল করতাম। ২০১৭ সালে বর্ষা মৌসুমে দেখি দুধঘাটা গ্রামের আব্দুর রহমান ওরফে বাচ্চু মিয়ার অন্য দুই পুত্র দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাই সানোয়ার হোসেন ওই খাস ভূমি ড্রেজার দ্বারা বালু দিয়ে ভরাট করছে। তখন আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করি আপনারা কেন সরকারি ভূমি বালু দিয়ে ভরাট করছেন? তখন তারা ওই ভূমি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বলে দাবি করেন । তাৎক্ষণিক আমরা তিতাস উপজেলা ভূমি অফিসে ওই ভূমির উপর অভিযোগ দায়ের করি। তখন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমাদেরকে তথ্য দিয়ে জানান, এটি একটি সরকারি খাস ভূমি।তবে একটি দলিল আছে, ভূমিহীন দলিল। দেলোয়ার হোসেন ও সানোয়ার হোসেনের বড় ভাই প্রায় ৪০ বছর যাবত আমেরিকায় বসবাসরত জাকির হোসেনের নামে ভূমিহীন দলিল পাওয়া যায় । আমরা রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সেই দলিলের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে আদালতে দলিল বাতিলের মামলা করি । যার মামলা নাম্বার হচ্ছে ৩৫৩/১৯ ।
তিনি আরো বলেন, জাকির হোসেন ওই ভূমি কখনো তার নিজ প্রয়োজনে, কৃষি কাজে বা কোন কাজেই ব্যবহার করেনি। সে বিগত ১৬/০৭/১৯৭৯ ইং তারিখে ততকালীন ভূমি অফিসে কর্মরত কর্মচারীদের সহযোগিতায় নিজেকে ভূমিহীন কৃষক পরিচয় দিয়ে সার্বিক বিষয় সরজমিন তদন্ত না করিয়ে ৩০৬১ নং বন্দোবস্ত দলিল করে গোপন রাখে । সে ওই ভূমি কখনো সরকারিভাবে দখলপ্রাপ্ত হয় নাই এবং ততকালীন বন্দোবস্ত কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিক ভাবে বুঝিয়ে দেন নাই। এমনকি বন্দোবস্ত দলিলের শর্তানুসারে ওই ভূমি চাষাবাদ কাজে ব্যবহার করেন নাই ।
পরবর্তীতে বন্দোবস্ত দলিলের বরাতে নিজ নামে বর্তমান বিএস জরিপের সময় ওই ভূমি বিএস ১৫১ নং খতিয়ান করে রাখে । উল্লেখিত বিএস ১৫১ নং খতিয়ানে জাকির হোসেন নিজেকে মালিক ঘোষনা দিয়ে বিএস ৫৩ দাগ সম্পর্কে তথাকথিত মতে খতিয়ান করে নেয় । প্রকৃতপক্ষে উল্লেখিত ভূমি সরকারের মালিকানাধীন ভূমি, যা সি এস ১নং খাস খতিয়ান ও আর এস ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত জনসাধারনের ভূমি ।
সফিকুল ইসলাম আরো জানান, এবিষয়ে স্থানীয় জনগনের পক্ষে আমি কুমিল্লা জেলা প্রশাসক বরাবরে জাকির হোসেনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগনের ব্যবহার্য সম্পত্তি বন্দোবস্ত নেওয়ার বিষয়টি অবগত করি । পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিদের্শে এল এ শাখা কর্তৃক আরডিসি (প্রতিকল্প) কর্তৃক তদন্ত ক্রমে বিষয়টির সত্যতা পেয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় হতে বিগত ১৯/০২/২০১৮ইং তারিখে বন্দোবস্ত নেওয়ার সরকারী সম্পত্তি বাতিল ক্রমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য দাউদকান্দির সিনিয়র সহকারী জজ আদালতকে অনুরোধ করা হয় । এছাড়াও আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (লালপুর) সরেজমিনে তদন্তক্রমে তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে এক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
দাউদকান্দির সিনিয়র সহকারী জজ আদালত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাকির হোসেনকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ করার পরেও তিনি আদালতে হাজির হননি এবং জবাব দিচ্ছেন না। মামলা দায়েরের পরে মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য জাকির হোসেনের ভাই দেলোয়ার ও সানোয়ার কর্তৃক হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছেন সফিকুল। তিনি বলেন, আমরা মূলত জনস্বার্থে আদালতে মামলা দায়ের করেছি । জাকির হোসেন ভূমিহীন নয় এবং ভূমিহীন ছিলেনও না। প্রকৃতপক্ষে সে পিতার ওয়ারিশসূত্রে এবং নিজ উপার্জিত অর্থে বহু স্থাবর-অস্থাবর জমির মালিক । সে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিকও নয়,দ্বৈত নাগরিকত্বের অধিকারী। প্রায় ৪০ বছর যাবত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছে। সে তার আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান এবং প্রকৃত সত্য গোপন করে জনগণের স্বার্থ বিনষ্ট করে নিজ স্বার্থে কৃষি ভূমি বন্দোবস্ত নীতিমালা বহির্ভূত ভাবে বন্দোবস্ত গ্রহণ করে। এছাড়াও এই ভূমিতে খেলাধুলা করায় জাকির হোসেন তার ভগ্নিপতি ঢাকার মিরপুর কাফরুল থানার বাসিন্দা রেজাউল করিম বাহারকে বাদী করে এলাকার নিরহ মানুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজী মামলা করে হয়রানি করছে।
এবিষয়ে নন্দীরচর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জাহাঙ্গীর আলম ভুইয়া জানান, ভূমিহীন মানুষসহ আমরা নিজ নিজ প্রয়োজনে গোচারণ ভূমি হিসেবে, উন্মুক্ত খেলার মাঠ এবং বর্ষাকালে নন্দীরচর ও দুধঘাটা গ্রামের পানি নিষ্কাশন এবং নৌচলাচলের মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে এসব জমি ভোগদখল করে আসছি । হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী জাকির হোসেন ওই খাসভূমি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বলে দাবি করছেন।
সরকার,বিচার বিভাগ, কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবদুস সবুর ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্থানীয় জনগনের আকুল আবেদন ও দাবি-দ্রুতগতিতে দলিলটি বাতিল করে রায় ঘোষণা করে সরকারি এই ভূমি প্রকৃত ভূমিহীনদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হোক অথবা এই ভূমিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প কিংবা বঙ্গবন্ধু গ্রামীণ স্টেডিয়াম করা হোক ।
মো.জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি ।
এ জাতীয় আরো খবর..