গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধায় দিগন্তজুড়ে নজর কাড়ছে সোনালী বোরো ধান। ইতোমধ্যে খেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। কেউ কেউ আবার কাটা-মাড়াইও করছেন। এরমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে প্রকৃতি, দেখা দিয়েছে বিরূপ আচরণ। কখনও কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে আকাশ, কখনো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে,আবার কখনো কালবৈশাখী সাজে সজ্জিত হচ্ছে আকাশ। এ অবস্থায় পাকা ধান ঘরে তুলতে চরম দুশ্চিন্তায় আছেন কৃষকরা। মেঘ দেখলেই দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠছে তাদের চোখ-মুখে। এই বুঝি বর্ষা নামে কষ্টের ফসল নষ্ট হয়ে যায়।
সম্প্রতি গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা,সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর অঞ্চলে দেখা গেছে, কৃষকের মাঠে দুলছে পাকা ধান। লক্ষাধিক হেক্টর জমির ধান কাটার উর্পযুক্ত সময় হলেও পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায় জমির ধান ঘরে ওঠানো নিয়ে আতঙ্কে আছেন কৃষকরা। হঠাৎ শিলাবৃষ্টি কিংবা ঝড় হলে ধানের যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা বলা বাহুল্য। গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছে চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে অর্জন হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪০ হেক্টর। এ থেকে প্রায় ৮ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সম্ভাবনা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় গাইবান্ধা অঞ্চলে বোরো ধান কম আবাদ করা হয়েছিল। ওই সময়ে শ্রমিকদের কোনো সঙ্কট ছিল না। কিন্তু বর্তমানে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে প্রত্যেক বছরে ধানের আবাদ বাড়ছে। একই সঙ্গে নিম্ন আয়ের মানুষদের পেশা বদলের কারণে শ্রমিকের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এই শ্রমিক সঙ্কট মোকাবিলায় সমলয় পদ্ধতি ধানের আবাদ ও কাটা-মাড়াইয়ের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে বিতরণ করা হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টর মেশিন। যা দিয়ে কৃষকের স্বল্প সময় ও খরচে দ্রুত ধান কাটা-মাড়াই করা সম্ভব। কিন্তু এসব মেশিন চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় কৃষকের কোনো কাজে আসছে না। অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে একযোগে ধান কাটার উপযোগী হয়ে এসেছে। দিগন্ত মাঠে দুলছে সোনালী শীষ। ব্লাস্ট রোগ, খরা আর বাড়তি খরচ সামাল দিয়ে এখন এসব ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম হিমসিম খাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক।
সম্প্রতি জেলার আশপাশ এলাকা দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝড়বৃষ্টি। এর প্রভাব পড়তে পারে গাইবান্ধা অঞ্চলেও। কখনও কখনও মেঘে ঢাকছে পুরো আকাশ। এই মুহূর্তে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে কৃষকের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান কৃষকরা। ফনি চন্দ্র সরকার নামের এক কৃষক বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে চার বিঘা জমিতে ধান আবাদ করেছেন। এর মধ্যে ব্রি ধান-২৮ জাতে ব্লাস্ট রোগে ১৫ শতক জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। অবশিষ্ট হাইব্রিড জাতের ধান ক্ষেতে পেকেছে। শ্রমিকের অভাবে এসব ধান কাটা-মাড়াই করতে সময় লাগছে। অধিক মূল্য দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক জানান, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ধান ফসল রক্ষায় কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যেসব কৃষকের ৮০ ভাগ ধান পেকেছে সেইসব কৃষকদের ধান কাটার জন্য বলা হচ্ছে।
মেঘ দেখে কৃষকের দুশ্চিন্ত বাড়ে।
এ জাতীয় আরো খবর..