জয়নাল আবেদীন, রাজবাড়ী: সূর্যমুখী ফুলে সজ্জিত হয়ে যেন রূপ নিয়েছে স্বর্গীয় এক বাগানের। প্রকৃতির এমন স্নিগ্ধতা টানছে প্রকৃতি প্রেমিকদের। বসন্তের বাতাসে দোল খেয়ে ফুলগুলো নিজের সৌন্দর্য বিলিয়ে বিমোহিত করছে দর্শনার্থীদের।
এমন অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা হাজারো প্রকৃতি প্রেমিকরা। কেউ বন্ধুদের সঙ্গে আসছেন, কেউ বা আসছেন পরিবার-পরিজন নিয়ে। ভালো লাগা স্মৃতি ধরে রাখতে নানা ভঙ্গিতে নিজেদের করছেন ক্যামেরাবন্দি।
এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্যটি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার পূর্ব মৌকুড়ী এলাকায়। উপজেলা কৃষি অফিসারের সহযোগিতায় দুইটি জাতের সূর্যমুখী বপন করেছেন, কৃষক মোঃ মনিরুজ্জামান, হাইসান,৩৩ ও কাবেরী, ফেব্রুয়ারির শেষ ভাগ থেকে প্রতিটি গাছে ফুল ফুটতে শুরু হয়।
স্বল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ফুলের চাষ। বিএডিসির উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। কৃষি সমৃদ্ধ জেলা রাজবাড়ীতে ও ব্যাপকভাবে বাড়ছে এই ফুলের চাষের। জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। মাঠ জুড়ে হলুদ ফুলের সমারহ। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে আসছে দর্শনার্থীরাও। আর কৃষকরাও ভাল ফলন আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ১১০থেকে ১৩০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুইবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা লভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
কৃষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে সূর্যমুখীর আবাদ শুরু করেছি, সূর্যমুখী চাষে খরচ কম, লাভ বেশি, সূর্যমুখীর তেলে অনেক পুষ্টি গুণ রয়েছে, আমি এবছর দুটি জাতের সূর্যমুখীর চাষ করেছি, হাইসান,৩৩ ও কাবেরী, সূর্যমুখী হারভেস্ট করার একমাস আগে সাথী ফসল হিসেবে জমিতে ভুট্টার ব্রিজ বপন করা যায়।
সহকারী উদবি সংরক্ষণ কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, দিনদিন চাষিরা সূর্যমুখী ফুলের চাষাবাদের দিকে ঝুঁকছেন। এই তেলে কোনো ক্লোস্টোরেল নেই। যে কারণে চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এটা অন্য ফসলের চেয়ে স্বল্প খরচ ও লাভজনক। সে কারণেই সূর্যমুখী ফুল চাষ করে কৃষকরা লাভোবান হচ্ছে।
বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সূর্যমুখীর তেল কোলেস্টেরলমুক্ত। প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় আমাদের শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। যে কোনো তেলের চাইতে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। আর সে কারণেই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এই ফুলের চাষ। তিনি আরো বলেন, কৃষকদের সূর্যমুখী চাষ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি, এবছর বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১৫,হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করা হয়েছে, সূর্যমুখী তেল মানবদেহের জন্য উপকারী অনেক গুণ থাকায় ভোক্তাদের চাহিদাও দিনদিন বাড়ছে।
এ জাতীয় আরো খবর..