সরকারি চাকরিতে বর্তমানে পাঁচ লাখ তিন হাজার ৩৩৩টি পদ খালি রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর এসব পদে নিয়োগ দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য বলছে, সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত পদের প্রায় ২৬ শতাংশই খালি, যা সংখ্যায় পাঁচ লাখের বেশি।
মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা যায়, প্রশাসনে মোট অনুমোদিত ১৯ লাখ ১৫১টি পদের বিপরীতে কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন ১৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮১৮ জন। খালি পদ রয়েছে পাঁচ লাখ তিন হাজার ৩৩৩টি। মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পর্যায়ে ২১ হাজার ৭০৯টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে ছয় হাজার ৮২১টি। সংস্থা ও অধিদপ্তর পর্যায়ে ১৪ লাখ ২২ হাজার ৮২৮টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে তিন লাখ ২৫ হাজার ৩৩৬টি।
বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক অফিসে ৪০ হাজার ২৭৩টি পদের মধ্যে খালি রয়েছে ১৩ হাজার ৩৫৭টি। বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও কর্পোরেশনে মোট খালি পদ এক লাখ ৫৭ হাজার ৮১৯টি। এখানে মোট পদের সংখ্যা চার লাখ ১৫ হাজার ৩৪১টি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রথম থেকে নবম গ্রেডের (আগের প্রথম শ্রেণি) দুই লাখ ৪৪ হাজার ৯৬টি অনুমোদিত পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক লাখ ৭৯ হাজার ৫১৪ জন। খালি পদ ৬৪ হাজার ৫৮২টি।
দশম থেকে ১২তম গ্রেডে (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) দুই লাখ ৯১ হাজার ১১১টি পদের বিপরীতে আছেন এক লাখ ৯৩ হাজার ৬৬৪ জন। খালি পদ ৯৭ হাজার ৪৪৭টি।
১৩ম থেকে ১৬তম গ্রেডে (আগের তৃতীয় শ্রেণি) সাত লাখ ৯৫ হাজার ৪০টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন ছয় লাখ তিন হাজার ৪৩৩ জন। খালি রয়েছে এক লাখ ৯১ হাজার ৬০৭টি পদ।
১৭তম থেকে ২০তম গ্রেডে (আগের চতুর্থ শ্রেণি) পাঁচ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬৯টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন চার লাখ ১৫ হাজার ১০৪ জন। খালি রয়েছে এক লাখ ৪৩ হাজার ৩৬৫টি পদ।
সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে নির্ধারিত ও অন্যান্য কাজের জন্য ১১ হাজার ৪৩৫টি পদ রয়েছে। এসব পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন পাঁচ হাজার ১০৩ জন। খালি রয়েছে ছয় হাজার ৩৩২টি পদ।
সরকারি চাকরির খালি পদগুলোতে নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সরকারি যেসব শূন্যপদ আছে, সেগুলোতে নিয়োগের ব্যবস্থা নিতে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্দেশনা দিয়েছেন।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. নাজমুছ সাদাত সেলিম জানান, ‘যেসব মন্ত্রণালয়ে শূন্য পদ আছে, তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সেগুলো দ্রুত পূরণের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। এ নির্দেশনা যেসব মন্ত্রণালয় বা বিভাগে শূন্য পদ আছে, তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে। স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়, স্ব-স্ব বিভাগ, সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো যাতে দ্রুত খালি পদগুলো পূরণ করতে পারে সে নির্দেশনা তাদেরকে দেওয়া হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সম্প্রতি জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, সরকারের শূন্য পদ পূরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। শূন্য পদ পূরণে সুনির্দিষ্ট বিধিমোতাবেক পদ পূরণের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ এবং এর অধীন দপ্তর-সংস্থাগুলোর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকমিশনের মাধ্যমে নবম (পূর্বতন প্রথম শ্রেণি) ও ১০ থেকে ১২তম গ্রেডের (পূর্বতন দ্বিতীয় শ্রেণি) শূন্য পদে জনবল নিয়োগ হয়ে থাকে।
মন্ত্রী জানান, রুলস অব বিজনেস, ১৯৯৬–এর রুল ২৫ (১) অনুযায়ী প্রণীত মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোর ২০২৩ সালের নভেম্বরের কার্যাবলি সম্পর্কিত মাসিক প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী সরকারের শূন্য পদ পূরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ অনুমোদন করেছেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে এটি পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক মন্ত্রণালয়-বিভাগগুলোতে নিয়োগ কার্যক্রম চলমান।
এ জাতীয় আরো খবর..