×
সদ্য প্রাপ্ত:
  • প্রকাশিত : ২০২৩-০৮-২০
  • ৮৪ বার পঠিত
যুবক, ডেসটিনির পর এবার এমএলএম ব্যবসার নামে প্রায় হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দুবাইভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ (এমটিএফই)। এমএলএম কম্পানির এই প্রতারণায় জড়িয়ে সর্বস্বান্ত দেশের লক্ষাধিক যুবক।

দুই সপ্তাহ আগে তথাকথিত সিস্টেম আপগ্রেডের মাধ্যমে সমস্যার শুরু। এর পর থেকে ব্যবহারকারীরা অ্যাপটি থেকে কোনো টাকা তুলতে পারছিলেন না।

গত বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় সব ব্যবহারকারীর ভার্চুয়াল অ্যাকাউন্ট ঋণাত্মক দেখানো শুরু করে অ্যাপটি। গ্রাহকদের পক্ষে স্বয়ংক্রিয় লেনদেনের পর বিপুল লোকসান হয়েছে বলে দাবি করেছে অনিয়ন্ত্রিত এই সংস্থা।
এমটিএফই দাবি করেছিল, তারা কানাডায় নিবন্ধিত সংস্থা। এর কার্যক্রম শ্রীলঙ্কা, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও ভারতেও ছড়িয়ে ছিল।

এসব দেশের ব্যবহারকারীদেরও পরিণতি একই।
সূত্র জানায়, ক্রিপ্টো, বৈদেশিক মুদ্রা, পণ্য, এমনকি বিদেশি স্টক পর্যন্ত নিজের ছায়া প্ল্যাটফরমে ট্রেড করার সুযোগ দিয়ে এই অ্যাপ সম্প্রতি অবিশ্বাস্য রকমের জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। ট্রেডিং থেকে উপার্জন এবং অর্থ পরিশোধের কথা বলে অ্যাপটি ব্যবহারকারীদের অবিশ্বাস্য সহজ পথে অর্থ আয়ের আমন্ত্রণ জানায়।

বাংলাদেশে মোট কতজন এই স্কিমের প্রতারণার শিকার হয়েছেন, এর কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই।

তবে গ্রাহকদের বিভিন্ন দলের নেতারা অনুমান করছেন, এই সংখ্যা এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ হতে পারে। তাঁদের ধারণা, এই কাণ্ডে প্রায় হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা এবং ক্রিপ্টো কারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ ও নিষিদ্ধ। এর পরও কমপক্ষে ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে দিনশেষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হবে—এমন কল্পিত মুনাফার লোভে শত শত মানুষ বিনিয়োগ করেছিলেন এই কম্পানিতে। অনেকে গয়না ও মূল্যবান সামগ্রী বন্ধক রেখেও বিনিয়োগ করেছিলেন।

অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং বা বাইন্যান্সের মাধ্যমে তারা টাকা নিত। পরে স্থানীয় এজেন্টরা সেটি বাইরে পাচার করত। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মুনাফার লোভ দেখিয়ে টার্গেট করা হতো।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য এই কম্পানির লেনদেন বা ট্রেড হতো সপ্তাহে পাঁচ দিন বাংলাদেশি সময় সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত। প্রতি সোমবার থেকে শুক্রবার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ট্রেড হলেও সিইওদের জন্য লেনদেন হতো শনিবারসহ সপ্তাহে ছয় দিন। রবিবার বন্ধ থাকত। ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা যায়।

জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়মে এমএলএম ব্যবসা অবৈধ। যে প্রতিষ্ঠানটি এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত, সেটি দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানও নয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এমএলএম নিয়ে কাজ করে না। ডিজিটাল কমার্স নিয়ে কাজ করছে। তবে বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংকের  বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বিষয়টি দেখভাল করে থাকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মোহাম্মদ সাঈদ আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমএলএম বাণিজ্যে তদারকি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আলাদা কর্তৃপক্ষ নেই। তবে কোনো অভিযোগ পেলে আমরা বিটিআরসিকে বলে কার্যক্রম বন্ধ করে দিই।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগ এমএলএম আইন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তবে এই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুর রহিম খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সাইবার বিশ্লেষকরা বলছেন, দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করত। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল। তবে বেশির ভাগই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারী।

যা বলছেন বিনিয়োগকারীরা

কুমিল্লার মুরাদনগরে এমটিএফই বিদেশি অ্যাপের খপ্পরে ফেলে অর্ধশতাধিক যুবকের কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারকচক্র।

প্রথমে এই অ্যাপ নিয়ে আসেন মুরাদনগর উপজেলার ধামগড় ইউনিয়নের ধামগড় গ্রামের আবু ইসার ছেলে আহমেদ বিন শামীম। তিনি এই অ্যাপের টিম লিডার হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন গুঞ্জোর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে গোলাম মাওলানা টিটুকে। পরে এ উপজেলায় টিটুর নেতৃত্বে এমটিএফইতে কাজ করে সংঘবদ্ধ একটি চক্র।

এই প্রতারকচক্র গ্রাহকদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে নানা তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে অ্যপটি পরিচালনা করত।

মুরাদনগরের ভাঙ্গরা, পাইয়ব, নহল চৌমুমনি, পিংলাবাড়ি গাইতুলি এলাকাসহ বিভিন্ন গ্রামে এই অ্যাপ যুবসমাজের মধ্যে ঝড় তোলে।

ধামগড় গ্রামের ভুক্তভোগী রমজান ও নাহিদ হাসান বলেন, আমরা এই অ্যাপ সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। আমাদের এই অ্যাপের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিলেন আহমেদ বিন শামীম। তখন তিনি বলেন, এখানে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই। এক লাখ টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন দুই হাজার টাকা লাভ থাকবে। এই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করি, কিন্তু কয়েক মাস না যেতেই আমাদের ব্যালান্স শূন্য হয় যায়।

তবে গোলাম মাওলা টিটুর ভাষ্য, ‘আমি এই অ্যাপের মালিক নই, অ্যাপটি একটি বিদেশি কম্পানির। যারা করেছে তারা বুঝেশুনেই করেছে। সব ব্যবসায় লাভ-ক্ষতি আছে।’

এদিকে এক মাস আগে এক লাখ ১০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করা কালাম নামের এক যুবক বলেন, আক্তার নামের এক ব্যক্তির কথায় বিশ্বাস করে তিনি এই অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat