সভা–সমাবেশের মাধ্যমে মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে জামায়াতে ইসলামী। আপাতত দলটির লক্ষ্য সংঘাত এড়িয়ে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া। এরই অংশ হিসেবে একের পর এক কর্মসূচির ঘোষণা দিচ্ছে দলটি।
যদিও গত জুনে ঢাকায় একটি সমাবেশের পর পুলিশ জামায়াতকে আর কোনো কর্মসূচির অনুমতি দেয়নি। কিন্তু দলটি বারবার কর্মসূচি পিছিয়ে আবার আবেদন করে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে দলটি দেখাতে চাইছে যে তারা নিয়ম মেনে একের পর এক আবেদন করছে, কিন্তু সরকার ও প্রশাসন তাদের প্রতি চরম বৈরী আচরণ করছে। এরপরও জামায়াত সংঘাতে না গিয়ে ঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করে আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করছে। এই কৌশল তারা অব্যাহত রাখবে বলে দলীয় সূত্র থেকে জানা গেছে।
আমরা চেষ্টা করছি নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি করার। কিন্তু পুলিশ অনুমতি না দিয়ে সংঘাতের পথ সৃষ্টি করছে। আমরা সেদিকে যাচ্ছি না, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই অগ্রসর হতে থাকব।
সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির
এই কৌশলের অংশ হিসেবেই গতকাল শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল রোববার সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত। গতকাল সকালে ঢাকার একটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি নিয়মতান্ত্রিকভাবে কর্মসূচি করার। কিন্তু পুলিশ অনুমতি না দিয়ে সংঘাতের পথ সৃষ্টি করছে। আমরা সেদিকে যাচ্ছি না, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই অগ্রসর হতে থাকব।’
দলটির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে রাজধানীতে চারটি পৃথক ‘সমাবেশ’ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর ১০টি আবেদনপত্র জমা দেওয়া হয়। চারটি প্রতিনিধিদলও ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে যায়। এর মধ্যে কেবল গত ১০ জুন তারা পুলিশের মৌখিক আশ্বাস পেয়ে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সমাবেশ করতে সক্ষম হয়। এর আগে ৫ জুন এবং ১ আগস্ট জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এবং সর্বশেষ ৪ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে অনুমতি চেয়েছিল।
গত ডিসেম্বরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের একটা দূরত্ব তৈরি হয়। এরপরও জামায়াত নিজেদের মতো করে বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়। কিন্তু সেটা সম্পর্কের টানাপোড়েনে একপর্যায়ে থেমে যায়।
এ ছাড়া গত জুনে সিলেট ও চট্টগ্রামে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে পুলিশের অনুমতি পায়নি। ওই দুটি সমাবেশের জন্য জামায়াত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কমিশনার বরাবর পাঁচটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছিল বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে। পুলিশের অনুমতি না পেয়ে ওই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। একইভাবে ২৮ ও ৩১ জুলাই জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিলের জন্যও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে অনুমতি পায়নি। তবে অনুমতি ছাড়াই তারা বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে মিছিল করে।
জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন, তাঁদের এমন একজন নেতাকে জানানো হয়েছে যে আগস্ট মাসে জামায়াতকে কোনো কর্মসূচির অনুমতি দেওয়া হবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে জামায়াতের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, অনুমতি না পাওয়ায় সমাবেশ স্থগিত করলেও এর প্রতিবাদে তারা বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। আর এই বিক্ষোভের জন্য তারা পুলিশের কাছে অনুমতি চাইবে না। এরই অংশ হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকায় পৃথক দুটি বিক্ষোভ মিছিল করে জামায়াত। মতিঝিল ও মিরপুর-১ নম্বরে এই বিক্ষোভ হয়। মিরপুরের বিক্ষোভে জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তরের সেক্রেটারি রেজাউল করিম এবং মতিঝিলে দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম (বুলবুল) নেতৃত্ব দেন।
বিক্ষোভ–উত্তর সংক্ষিপ্ত সমাবেশে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা শুক্রবার ছুটির দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের সহযোগিতা দেয়নি। আমরা বাধ্য হয়ে ময়দানে নেমেছি।’
গত ডিসেম্বরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০–দলীয় জোট ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের একটা দূরত্ব তৈরি হয়। এরপরও জামায়াত নিজেদের মতো করে বিএনপির যুগপৎ কর্মসূচিতে যুক্ত হয়। কিন্তু সেটা সম্পর্কের টানাপোড়েনে একপর্যায়ে থেমে যায়। তবে জামায়াত সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আলাদা কর্মসূচি দিয়ে মাঠের রাজনীতিতে থাকতে চাইছে। দলটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে এখন থেকে তারা কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে। আপাতত তাদের লক্ষ্য সংঘাত-সহিংসতা এড়িয়ে মাঠে সক্রিয় থাকা।
এ জাতীয় আরো খবর..