×
  • প্রকাশিত : ২০২৫-০২-০৫
  • ৯ বার পঠিত

এম মোহাম্মদ ওমর। শরনখোলা প্রতিনিধি

অপহরণের ৯ দিন পার হলেও দস্যুদের জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করা যায়নি ১৫ জেলেকে। জনপ্রতি তিন লাখ টাকা করে মোট ৪৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে দস্যুরা। এতো টাকা জোগাড় করতে না পারায় স্বজনদের ফিরিয়ে আনতে পারছে না পরিবার। ফলে জেলে পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম উৎকণ্ঠা।



অপহৃত ১৫ জেলের সবাই পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আলোরকোল শুঁটকি পল্লীর। গত ২৬ জানুয়ারি গভীররাতে বঙ্গোপসাগরের মান্দারবাড়িয়া এলাকা থেকে তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায় জলদস্যু মজনু বাহিনী।

অপহৃত জেলেদের মহাজন ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ না করায় জিম্মি জেলেদের নির্যাতন করছে দস্যুরা। ঠিক মতো খেতে দেওয়া হচ্ছে না তাদের।

ধার্য করা টাকা দ্রুত না দিলে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবনের অজ্ঞাত স্থান থেকে দস্যুদের মোবাইল ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে কান্নাকাটি করছেন জেলেরা। জিম্মিদশা থেকে দ্রুত ছাড়িয়ে নেওয়ার আকুতি জানাচ্ছেন তারা।

এদিকে, টাকা না পেয়ে ছাড়তেও নারাজ দস্যুরা।

আবার চড়া মুক্তিপণ দাবি করায় তা পরিশোধ করাও সম্ভব হচ্ছে না দরিদ্র জেলে পরিবারের পক্ষে। স্বজনকে ছাড়িয়ে আনতে মহাজনের বাড়িতে বাড়িতে ধরনা দিচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। অপহৃত জেলেদের উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্যোগ না দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন মহাজনরা।

অপহৃত জেলে শ্যামনগর উপজেলার বণ্যতলা গ্রামের শাহ আলমের দরিদ্র বাবা আবু তালেব মুঠোফোনে জানান, তাদের অভাবের সংসার। তিন বেলার খাবার জোগাড়েই হিমশিম খেতে হয়।

এ অবস্থায় তিন লাখ কোথায় পাবেন। ছেলেকে বুঝি আর ফিরে পাবেন না। একথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

আলোরকোলের শুঁটকি ব্যবসায়ী আ. রাজ্জাক ও বাবুল সানা জানান, ১৫ জেলের মধ্যে আরাফাত ও জাহাঙ্গীর নামে তাদের দুই জেলে রয়েছেন। তারা দস্যুদের সঙ্গে কথা বলেছেন। প্রত্যেক জেলের মুক্তির জন্য তিন লাখ টাকা করে দিতে হবে। এর কম হলে ছাড়া হবে না। জেলেরা বলেছেন তাদেরকে মারধর করা হচ্ছে। দ্রুত টাকা পরিশোধ না করলে তাদের হাত-পা ভেঙে ফেলা হবে।

মহাজনরা বলছেন, দুবলার অফিস কিল্লা, আলোরকোল, শ্যালার চর, নারকেল বাড়িয়াসহ চারটি শুঁটকি পল্লীতে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। দুর্গম চরে তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। যেকোনো সময় দস্যুরা এসে লুটপাট করলে তাদের কিছুই করার থাকবে না। দস্যু আতঙ্কে রয়েছেন চারটি শুঁটকি পল্লীর প্রায় ১২ হাজার জেলে।

আলোরকোলের শ্যামনগরের চাকলা জেলে সমিতির সভাপতি আ. রউফ মেম্বর ও রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিম ফরাজি জানান, দস্যুদের সঙ্গে তারা একাধিকবার কথা বলেছেন। তাদের কথা হলো, ১৫ জেলেকে জীবিত ফেরত পেতে হলে প্রত্যেকের বদলে তিন লাখ করে ৪৫ লাখ টাকাই দিতে হবে। এতো টাকা শোধ করা ব্যবসায়ী বা পরিবারের পক্ষে অসম্ভব। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

দুবলার চর ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলে অপহরণের ৯ দিন পার হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃশ্যমান কোনো অভিযান দেখছিনা। এতে আমরা হতাশ হচ্ছি। শুঁটকি পল্লীতে আতঙ্ক বাড়ছে।

ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি কমাল আহমেদ বলেন, জিম্মি জেলেদের মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানরা প্রতিদিন তাদের মহাজনদের বাড়িতে গিয়ে কান্নাকাটি করছে। দস্যুরা বার বার তাদের মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করছে। নতুন নতুন নম্বর দিয়ে কথা বলছে। এসব নম্বর র‌্যাব, কোস্ট গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেওয়া হয়েছে। তারা দেখছি দেখব বলছে। অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকায় দস্যুরা নতুন করে জেলে অপহরণেরও হুমকি দিচ্ছে। এতে শুঁটকি উৎপাদনে নিয়োজিত জেলে-মহাজনরা আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।



নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
lube
ফেসবুকে আমরা...
ক্যালেন্ডার...

Sun
Mon
Tue
Wed
Thu
Fri
Sat