নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক  অবৈধ নিয়োগে ২৭ বছর ধরে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে মোঃ  রুহুল আমিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে।

তাঁর নিয়োগকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। এমনকি পূর্বে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র দাখিল না করায় তাঁর নিয়োগ অবৈধ বলে উল্লেখ করা হয়।

এসব কারণে ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শন রিপোর্টে রুহুল আমিন ভূইয়ার নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করা হয়। ওই সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত সরকারি বেতন ভাতা বাবদ ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯৭৯ টাকা সরাকরি কোষাগারে ফেরত দিতে বলা হয়। 

তবে দীর্ঘ কয়েক বছরেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে।  

এদিকে বালিকা বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা সাবজেক্ট পড়ানো হয় না। ফলে কৃষি শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক হয়েও তিনি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিষয়ে ক্লাশ নেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শনকালে শিক্ষক রুহুল আমিন ভূইয়ার নিয়োগকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকা ও পূর্বে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র দাখিল না করার বিষয়টি ধরা পড়ে। 

শিক্ষা পরিদর্শক মো. আব্দুস সালাম আজাদ ও সহাকারী শিক্ষা পরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ওই পরিদর্শন রিপোর্ট প্রকাশ হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। 

ওই রিপোর্টে কৃষি বিষয়ের শিক্ষক রুহুল আমিন ভূইয়ার নিয়োগকালে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকা ও পূর্বে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র দাখিল না করার বিষয়টি উল্লেখ করেন তাঁরা।

সেই সঙ্গে তাঁর নিয়োগ অবৈধ উল্লেখ করে ওই সময় পর্যন্ত প্রাপ্ত সরকারি বেতন ভাতা বাবদ ১৭ লাখ ৪৫ হাজার ৯৭৯ টাকা সরাকরি কোষাগারে ফেরত দিতে বলা হয়। 

তাঁরা রিপোর্টে লেখেন-  ১৯৯৬ সালের ৬ জুলাই মোহনগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কৃষি শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে  যোগদান করেন মো. রুহুল আমিন ভূইয়া। এরআগে একই বছরের  ৪ জানুয়ারি জাতীয় পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। আর নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২৯ জুন। 

তবে নিয়োগ পরীক্ষার কোন ফলাফল শিট হয়নি।  পরদিন ৩০ জুন নিয়োগ কমিটির করা রেজ্যুলেশনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের প্রতিনিধির 'নাম বিহীন সীল' দিয়ে দেখিলাম বলে স্বাক্ষর রয়েছে। ওই নিয়োগ পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ছিলেন নেত্রকোনা আঞ্জুমান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। নাম বিহীন সীল থাকায় পরিদর্শকগণ ওই নিয়োগ পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ছিলেন না বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া নিয়মানুযায়ী  নিয়োগের আগে তিনি (রুহুল আমিন ভূইয়া) পূর্বের প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র জমা দিতে পারেননি। এতে পরিদর্শন রিপোর্টে তাঁর নিয়োগ অবৈধ বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

পরিদর্শন রিপোর্টের বিষয়টি উল্লেখ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিন ভূইয়া বলেন,  পরিদর্শনকালে টাকা পয়সা না দেওয়ার কারণে তাঁরা এসব লিখেছেন। 

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মমতাজ জাহান বলেন, শুধু রুহুল আমিন নয়, ওই রিপোর্টে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সমস্যার বিষয় উল্লেখ আছে। রিপোর্টের বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে মহা পরিচালক , মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।  ৩০-০৭- ২০১৮ ইং জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ওয়ালী উল্লাহ স্বাক্ষরিত চিঠি দেন । তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের  ১৭-০৪-২০১২ ইং তারিখের স্বারক উল্লেখ করেন । দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছরেও অভিযুক্ত শিক্ষক দায়মুক্ত হননি। প্রধান শিক্ষক আরো বলেন, বেশ কয়েকবার শিক্ষা ভবনে গিয়েছি এই আবেদনের বিষয়ে  কিন্তু কোন অব্যাহতির কোন আদেশ পাইনি। দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর ও অব্যাহতি পত্র পাননি সুতরাং অডিট রিপোর্ট সত্য বললে  প্রধান শিক্ষিকা নিশ্চুপ থাকেন।

 বিষয়টি অবহিত করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল আহমেদ বলেন, এখন ওই বিদ্যালয়ে কোন কমিটি নেই। কমিটি করা হলে পরে সেই কমিটি বিষয়টি দেখবে আশা করছি।

এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)  মো. কামরুজ্জামান বলেন, পরিদর্শন রিপোর্ট বের হয়েছে ২০১৮ সালে। আর এখন ২০২৫ সাল। রিপোর্টের বিষয়ে আপত্তি জানাতে হয় এক সপ্তাহ, পনেরদিন বা এক মাসের মধ্যে। ৬-৭ বছর পর আপত্তি দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। আর এমন কোন রিপোর্ট  আপত্তি আমার কার্যায়লের মাধ্যেমে দেওয়া হয়েছে বলে জানা নেই।