প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহাসমাবেশ উপলক্ষে খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত রংপুর নগরী। স্লোগান মুখর রংপুর নগরের অলিগলিতে গণমানুষের ঢল। মহাসমাবেশ শুরুর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ জিলা স্কুল মাঠ।
আজ বুধবার সকাল ৮টা থেকে সভাস্থল নগরীর ঐতিহাসিক রংপুর জিলা স্কুল মাঠে দূর-দূরান্ত থেকে রঙিন টিশার্ট ও ক্যাপ পরিহিত নেতাকর্মীরা ঢাকঢোল পিটিয়ে আসতে শুরু করে।
জনসভাস্থলসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে। জনসভার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। দুপুর সোয়া ১২টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জনসভার কার্যক্রম। এরপর পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে মিছিল স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে জিলা স্কুলের আশপাশ ও রাস্তায়। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে দলে দলে আসা নেতাকর্মীদের ঢল নামে জনসভাস্থলসহ জিলা স্কুল অভিমুখে। বাহারি সাজসজ্জা আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বিভিন্ন স্লোগানে নেচে গেয়ে উচ্ছ্বাস করতে থাকেন তারা।
নগরী ঘুরে দেখা যায়, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর ও রংপুরের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দলবেধে আসতে শুরু করেন।
বাস, ট্রেন, মাইক্রোবাস, পিকআপ ভ্যান, অটোরিকশা ও সিএনজি করে নেতাকর্মীরা আসেন। অনেকে হেঁটেও জনসভাস্থলের দিকে রওনা দেন।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে রংপুর মহানগরী। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। নগরীর ২১টি পয়েন্টে করা হয়েছে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।
এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। প্রবেশ রুটগুলোতে সন্দেহভাজন যানবাহন ও ব্যক্তিদের তল্লাশি করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে জনসভায় আসা-যাওয়া নির্বিঘ্ন করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
নগরীর মেডিক্যাল মোড় এলাকা থেকে শাপলা চত্বর এলাকা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দিয়ে কোনো ভারি যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ নির্ধারিত ২১টি পয়েন্টে যানবাহন রেখে মিছিল নিয়ে জনসভা অভিমুখে রওনা দেন। একইভাবে রংপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের পুরুষ ও নারী নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সভাবেশস্থলে উপস্থিত হন।
সমাবেশ উপলক্ষ্যে নগরীর বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় বেড়েছে। জনসভা শুরুর আগে অনেকে সুরভি উদ্যান, চিড়িয়াখানা, চিকলি ওয়াটার পার্ক, সিটি চিকলি বিনোদন পার্কসহ বিভিন্ন জায়গায় সময় কাটিয়েছেন। নগরীর নয়নাভিরাম সড়কগুলোতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত লোকজনদের ঘুরতে ও ছবি তুলতে দেখা যায়। এ ছাড়া জনসভাকে ঘিরে নগরীর হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে বেচাকেনা বৃদ্ধি পায়।
মহাসমাবেশ ঘিরে নগরীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছাড়াও মাঠে নিরাপত্তায় আওয়ামী লীগের তিন শতাধিকেরও বেশি স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছেন। জনসভায় আগত মানুষের জন্য আড়াই লাখ পানির বোতলের ব্যবস্থা করেছে সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা বলেন, স্মরণকালের মহাসমাবেশ হবে আজকে। ১০ লাখেরও বেশি মানুষ উপস্থিত হয়েছে রংপুরে বিভিন্ন স্থানে। কানায় কানায় ভরে যাবে রংপুরের অলিগলিসহ সভামঞ্চে এলাকা।
এদিকে, প্রায় এক যুগ পর রংপুরের পীরগঞ্জের লালদীঘির পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনে আয়োজনের বিন্দুমাত্র কমতি নেই কোথাও। উজ্জ্বীবিত আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রীকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের ঢেউ বইছে।
রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক উপকমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। পাড়া-মহল্লায় উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে সভা-সমাবেশ করা হয়েছে। এখন গ্রাম-গঞ্জ শহর-বন্দর থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠেছে রংপুর। পুরো বিভাগ থেকে অন্তত ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটবে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, জনসভাকে ঘিরে সব ধরণের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পোশাকি পুলিশের পাশাপাশি আর্মডসহ সাদাপোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। জনসভাস্থল ছাড়াও পথে পথে রুট ডিউটি, চেকপোস্ট, গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ ও মোড়ে মোড়ে রয়েছে পুলিশ সদস্যরা। উঁচু ভবনের ছাদে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর প্রতি ফ্লোরে ফ্লোরে প্রশিক্ষিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আছেন।
আবু মারুফ হোসেন বলেন, ‘জনসভাস্থল, পুরো শহর এবং সার্কিট হাউজ পুরোটাই আমরা সিসিটিভির কাভারেজে এনেছি। ১ হাজারেরও বেশি সিসিটিভি ক্যামেরা সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় বসিয়েছি। আমরা ডিজিটালি মনিটরিং করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠের ভিতরে এবং বাইরে রয়েছে। সাথে আয়োজকদের স্বেচ্ছাসেবককরাও আছে।
এদিকে, সফরসূচি অনুযায়ী, বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে রংপুরে যাওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর। দুপুর ২টায় তাঁকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর ক্যান্টনমেন্টের হেলিপ্যাডে অবতরণ করবে। দুপুর ২টা ৫মিনিটে সেখান থেকে সড়কপথে রংপুর সার্কিট হাউসের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।
সোয়া ২টার দিকে সার্কিট হাউসে পৌঁছে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর বিকেল ৩টায় রংপুর জিলা স্কুল মাঠে মহাসমাবেশস্থলে পৌঁছবেন। প্রথমে রংপুর বিভাগের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। সফরে রংপুরে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন সরকারপ্রধান। মহাসমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার পর বিকেলে আবার একই পথে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..