বিশ্বকাপ জয়ের পর লিওনেল মেসি বলেছিলেন, ক্যারিয়ারের বাকি সময়টা উপভোগ করতে চান। ইন্টার মায়ামিতে তাঁর যোগদানের পর গুঞ্জন উঠেছিল, ইউরোপিয়ান লিগের বলয়ের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের অচেনা পরিবেশে মেসি ভালো থাকবেন তো?
উত্তরে এখন বলাই যায়, যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলের মাটি মেসির এখন আর অজানা নয়। যেন হাতের তালুর মতোই চেনা! একজন ফরোয়ার্ডের ভালো থাকার প্রথম শর্ত যদি হয় গোল করা, সে হিসেবে বলাই যায় যুক্তরাষ্ট্রে সময়টা তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন মেসি। অরল্যান্ডো সিটির বিপক্ষে আজও পেয়েছেন জোড়া গোল!
লিগস কাপে শেষ বত্রিশের ম্যাচে অরল্যান্ডো সিটিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে অন্যরকম এক ‘প্রতিশোধ’ও নিয়েছে ইন্টার মায়ামি। কিছুদিন আগে মায়ামিতে মেসির দেয়ালচিত্র নষ্ট করা হয়। ইন্টার মায়ামির সমর্থকদের অভিযোগ ছিল, একই শহরে তাদের মেজর লিগ সকার (এমএলএস) প্রতিদ্বন্দ্বী দল অরল্যান্ডো সিটির সমর্থকেরা এই কাজ করেছে। এই ম্যাচ যেন ছিল তার মোক্ষম জবাব দেওয়ার মঞ্চ!
মেসি চাইলে হ্যাটট্রিক করতে পারতেন। ৫১ মিনিটে পাওয়া পেনাল্টিটা নিজে নেননি। সতীর্থ ভেনেজুয়েলান স্ট্রাইকার জোসেফ মার্তিনেজকে দিয়ে গোল করিয়েছেন। তাঁর একটি ফ্রি-কিকও দারুণ দক্ষতায় রুখে দেন অরল্যান্ডোর গোলরক্ষক পেদ্রো গ্যালাসে। আর গোল দুটো? প্রথমটি বাঁ পায়ের সাইডভলিতে, পরেরটি ডান পায়ে। সেটাও সাইডভলি। মোটকথা, দুই পায়ে ভলির প্রদর্শনী! ক্যারিয়ারে সবকিছু জিতে নেওয়া ৩৬ বছর বয়সী মেসি তাই যুক্তরাষ্ট্রে ভালো না থেকে পারেন-ই-না। ওই যে বলা হলো, ফরোয়ার্ডমাত্রই গোল পেলে ভালো থাকেন। মায়ামিতে তিন ম্যাচে মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়াল ৫। এর মধ্যে শেষ দুই ম্যাচেই জোড়া গোল।
তবে একটু অন্যরকম মেসিকেও দেখা গেছে। ইউরোপিয়ান ফুটবলে যে মেসিকে দেখা গেছে খুব কমই। ২১ মিনিটে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ফাউল করে দেখেছেন হলুদ কার্ড। ম্যাচের মধ্যে অরল্যান্ডোর এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কাঁধের শক্তি পরীক্ষাও করেছেন। মেসির ধাক্কায় তাঁর পড়ে যাওয়া দেখে সমর্থকদের মনে হতেই পারে সেটা বুঝি মায়ামিতে তাঁর দেয়ালচিত্র মুছে ফেলার রূপক-প্রতিশোধ! মোট কথা, অরল্যান্ডোর বিপক্ষে সেই চিরায়ত মেসিকেই দেখা গেল, ভেতরকার বারুদটা বের করে আনা তাতে বোনাস।
মেসি মায়ামিতে যোগদানের পর বলাবলি হচ্ছিল, আক্রমণভাগে রবার্ট টেলরের সঙ্গে তাঁর জুটিটা জমবে বেশ। ফিনল্যান্ডের এই মিডফিল্ডারকে দিয়ে আগের ম্যাচে গোলও করিয়েছেন। টেলর পরের ম্যাচেই মেসিকে গোল বানিয়ে দিয়ে যেন ‘দেনা’ পরিশোধ করলেন। ৭ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে তাঁর বাড়ানো ‘চিপ’ দৌড়ে বক্সে ঢুকে বুকে নামিয়ে বাঁ পায়ের সাইডভলিতে জালে পাঠান মেসি। ১০ মিনিট পরই সিজার আরাউহোর গোলে সমতায় ফেরে অরল্যান্ডো। বিরতির পর ৪৭ মিনিটে অরল্যান্ডোর বক্সে ফাউলের শিকার হয়ে পেনাল্টি আদায় করেন মায়ামির জোসেফ মার্তিনেজ। মেসি নন, পেনাল্টিটা মার্তিনেজই নিলেন এবং গোলও করলেন।
৬৩ মিনিটে মেসি ও সের্হিও বুসকেতসের এক সময়ের বার্সা সতীর্থ জর্দি আলবাকে বদলি হিসেবে মাঠে নামান মায়ামি কোচ জেরার্দো মার্তিনো। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর আবারও একসঙ্গে মাঠে দেখা গেল মেসি-বুসকেতস-আলবাকে। এর কয়েক মিনিট (৭২) পরই ডান পায়ের সাইডভলিতে গোল করেন মেসি। বক্সের ভেতর ডান প্রান্তে বল পেয়েছিলেন জোসেফ মার্তিনেজ। নিজে গোল করার চেষ্টা করেননি। তাঁর চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে দাঁড়িয়ে ছিলেন মেসি। মার্তিনেজ বলটা বাড়িয়ে যেন মেসির পেনাল্টি না নেওয়ার সৌজন্যতারই ‘দেনা’ পরিশোধ করার চেষ্টা করলেন! ডান পায়ের ভলিতে গোল করে অনুচ্চারে মার্তিনেজের সাহায্যেরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন মেসি। এই জয়ে লিগস কাপের শেষ ষোলোয় উঠল ইন্টার মায়ামি।
এ জাতীয় আরো খবর..