সরকারের পদত্যাগের এক দফার টানা কর্মসূচির পরিকল্পনা থেকে কার্যত সরে এসেছে বিএনপি। এ কারণেই গতকাল সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা থেকে কোনো বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি আশানুরূপ সফল না হওয়ায় এই বিরতি বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আপাতত এক দফা দাবিতে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে গতানুগতিক কিছু কর্মসূচি দেবে দলটি।
এই সময়ের মধ্যে দলের নেতাকর্মীরা শক্ত কর্মসূচির জন্য নতুন করে প্রস্তুতি নেবেন বলে আশা কেন্দ্রীয় নেতাদের। এরপর আবার কঠোর কর্মসূচিতে ফিরবে বিএনপি। তবে সেটি কবে, তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি দলের দায়িত্বশীল কেউ। এর মধ্যে আগামীকাল বুধবার এই বাধা-হামলার বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করবে বিএনপি।
গতকালের জনসভা থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা অতি শিগগির সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে এক দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি দেব। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে বিজয় আসবে। আমরা বহুদূর এগিয়েছি। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
এই জনসভাটি ডাকা হয়েছে শনিবারে বিএনপি নেতাকর্মীদের অবস্থান কর্মসূচিতে বাধা ও হামলার প্রতিবাদে। জনসভার দাবি এবং তাতে দেওয়া বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কর্মসূচিতে বিরতি দিয়েছে দল। নতুন কর্মসূচি প্রণয়নে তাঁদের আবার পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সে জন্য একটু সময়ও প্রয়োজন। তবে এই সময়ে কিছু ছোট কর্মসূচি থাকবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ঢাকায় সফল মহাসমাবেশ করার পরদিন শনিবার ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পরিকল্পনায় গলদের কারণে প্রত্যাশিত মাত্রা পায়নি। সমন্বয়হীনতার কথাও স্বীকার করেছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা। এখন এসব বিষয় নিয়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে।
দলের আরেকজন নেতা বলেন, চূড়ান্ত কর্মসূচির শুরুতেই দলের দুর্বলতা ধরা পড়েছে। এটা বরং ভালো। বিএনপির হাতে সময় আছে। নির্বাচন তফসিল ঘোষণা করতে আরো অন্তত দেড় থেকে দুই মাস বাকি। এই সময়ের মধ্যে সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে বড় কর্মসূচিতে ফিরতে পারবে বিএনপি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে। সেখানে নতুন কৌশল ঠিক করা হবে। এর মধ্যে সাংগঠনিক দুর্বলতা, দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের অবহেলা, সমন্বয়হীনতার বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করছেন শীর্ষ নেতৃত্ব।
গতকাল দিনভর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের মধ্যে আত্মসমালোচনা ও আত্মোপলব্ধি নিয়ে আলোচনার আভাসই বেশি পাওয়া গেল। নেতারা মনে করেন, দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ত্যাগী নেতাদের সামনে আনতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তারা ভয় পেয়েছেন
জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘জনগণের সঙ্গে আছি আমরা। সরকারি কর্মকর্তারা ভয় পাবেন না।’ এ থেকে বোঝা যাচ্ছে কর্মকর্তারা ভয় পাচ্ছেন। যে অন্যায়-অত্যাচার-নির্যাতন-নিপীড়ন ১৪-১৫ বছর ধরে করেছেন, গুম করেছেন, বিনা বিচারে হত্যা করেছেন, লাখো মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন এতে তো অবশ্যই ভয় পেতে হবে।”
বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই সরকার এখন এত ভীত যে একটি কর্মসূচি থেকে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ লোককে গ্রেপ্তার করেছে। মামলা দিচ্ছে। হামলা করে আহত করেছে। তিনি বলেন, ‘যতই চেষ্টা করুন এই মানুষের ঢল থামানো যাবে না। সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তেই হবে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এই জনসমাবেশ হয়। চারটি খোলা ট্রাককে একত্র করে তৈরি করা হয় মঞ্চ। ঢাকা ছাড়া সারা দেশে মহানগর ও জেলা সদরে এই কর্মসূচি একযোগ পালিত হয়েছে।
ঢাকার মহাসমাবেশে সরকার বোল্ড আউট হয়েছে বলে দাবি করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গুগলি বোঝেন। ব্যাট নেই, স্টাম্পড-প্যাড নেই, গুগলি বলে বোল্ড আউট হয়ে গেছে। ২৭ তারিখে মহাসমাবেশ করতে দেয়নি। কিন্তু ২৮ তারিখেও মহাসমাবেশে লাখ লাখ মানুষ এসেছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত সবাই তা দেখেছে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকার কয়েকটি লোককে বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসেছে। তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একজন আছেন। তিনি ইলেকশন কমিশনে গিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু কেউ তাঁকে চেনেন না। গত নির্বাচনেও এ রকম দেখা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ডিবি কার্যালয়ে খাওয়ানো এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অফিসের কর্মকর্তাদের ফলমূল নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ঘটনার সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নিকৃষ্টতম নাটক তৈরি করা হয়েছে। এতে সরকারই ছোট হয়েছে।’
মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্ব ও উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনের পরিচালনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা বরকতউল্লা বুলু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আজ প্রতিবাদ সমাবেশ
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ হবে। কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির আয়োজনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত থাকবেন।
এ জাতীয় আরো খবর..