পরিতোষ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে গৃহ শিক্ষকের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কের সন্দেহে দুই সন্তানের জননী হালিমা খাতুনকে মারধর, শ্লীলতাহানি এবং জোরপূর্বক তালাকনামায় সাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় হালিমা খাতুন তার স্বামী কাউছার আলম এবং স্থানীয় নিকাহ রেজিস্ট্রার মোঃ কামাল উদ্দীনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম আদালতে সি আর মামলা নং ৫৩৯/২৪ নামে বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বোয়ালখালী থানার সাব-ইন্সপেক্টর মোঃ মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে আসামিদের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ও তার পরিবার।
২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর, বোয়ালখালীর পশ্চিম গোমদণ্ডী এলাকার ঘোড়ার বাড়ীতে এই ঘটনা ঘটে। অভিযোগ রয়েছে, স্বামী কাউছার আলম ও নিকাহ রেজিস্ট্রার কামাল উদ্দীনের সহায়তায় স্থানীয় গৃহ শিক্ষক বেলালের সঙ্গে মিথ্যা পরকীয়ার অভিযোগ তুলে হালিমা খাতুনকে মারধর করা হয়। পাড়া-প্রতিবেশীদের সামনে তাকে শ্লীলতাহানি এবং ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক তালাকনামায় সাক্ষর নেওয়া হয়।
হালিমা খাতুন অভিযোগ করেন, মামলার তদন্তের জন্য সাব-ইন্সপেক্টর মাঈন উদ্দিন তার কাছ থেকে প্রথমে ৫ হাজার টাকা নেন। পরে আরও মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি বাদীকে সেই ৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে আসামিদের পক্ষ নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেন। স্থানীয় হারুনের মাধ্যমে আসামিদের কাছ থেকে ২৮ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগও তুলেছেন তিনি।
স্বামী কাউছার আলম দাবি করেন, তার স্ত্রী এবং শিক্ষক বেলালের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, যা দুজনই স্বীকার করেছেন। তবে রাগের মাথায় তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত তার ভুল ছিল। তিনি বলেন, "সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমি স্ত্রীকে ফেরত নিতে প্রস্তুত।"
অন্যদিকে, তদন্ত কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন ভূঁইয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, "আমি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত করেছি। বাদীর কোনো আপত্তি থাকলে আদালতে আপিল করতে পারেন। টাকা নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।"
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ১১ বছরের সংসার জীবনে এমনভাবে তালাক দেওয়ার ঘটনায় দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন প্রভাবিত হবে। এই ঘটনা পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বামী কাউছার আলম আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এবং দ্বিতীয় বিয়ের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ কাজে কাজী কামাল উদ্দীনসহ আরও কয়েকজন তাকে সহায়তা করেছেন।
এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আদালত মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবেন বলে আশা করছেন ভুক্তভোগী ও তার পরিবার।
এ জাতীয় আরো খবর..