পরিতোষ বড়ুয়া, চট্টগ্রাম
তিন বছরের ছোট্ট শিশু তাসকিয়া। এখনও পুরোপুরি বোঝার বয়স হয়নি যে "বাবা" শব্দের গভীরতা কতটা। হাঁটতে শিখেছে মাত্র কয়েক মাস হলো। দুনিয়ার অনেক কিছুই তার কাছে অজানা। তবে তার নিষ্পাপ চোখে বাবার জন্য এক অন্যরকম তৃষ্ণা। সারাদিন ধরে সে খুঁজে বেড়ায় প্রিয় বাবার মুখ।
তাসকিয়া অপেক্ষা করে, বাবার হাতে আইসক্রিম, খেলনা কিংবা বেলুন দেখবে বলে। কিন্তু পরিবারের বাকিরা জানে, তার বাবা আর কোনোদিন ফিরবে না। তবুও তাসকিয়া প্রতিদিনই একই প্রশ্ন করে, "বাবা কই? বাবা কবে আসবে বাড়ি?" যখন তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন সে মোবাইলে বাবার ছবি দেখিয়ে বলে, "বাবা শহরে গেছে। আসার সময় আমার জন্য আইসক্রিম আর খেলনা নিয়ে আসবে।"
শুক্রবার এসে গেলেও বাবা কেনো বাসায় ফিরলেন না, তা বোঝার মতো বয়স হয়নি তাসকিয়ার। তবুও তার মায়াভরা চোখে ফুটে ওঠে উদ্বেগ। কিন্তু শিশুটি জানে না, তার বাবা আর কোনোদিন ফিরবেন না। বাবার মমতা আর ভালোবাসা তাকে আর ছুঁয়ে যাবে না।
নৃশংসভাবে প্রাণ হারানো এক তরুণ আইনজীবী
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন সাইফুল ইসলাম আলিফ। আইনজীবী হিসেবে কাজ করা সাইফুল ছিলেন পরিবারের সাত ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। তার বাবা জামাল উদ্দিন বললেন, “আলিফ ভাই-বোনদের মধ্যে আলাদা ছিল। সবসময় মানুষের উপকারের চিন্তা করতো। এখন আমাদের কাছে আর কখনোই ফিরবে না সে। আমার ছেলেকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
সাইফুলের সহকর্মীরা জানান, ২০১৮ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রামে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত হন। চট্টগ্রাম বারের একজন নিয়মিত সদস্য ছিলেন তিনি। পাঁচ-ছয় বছর ধরে তিনি পেশায় ছিলেন এবং গত বছর হাইকোর্ট বারের সনদ লাভ করেন।
শোকের ছায়ায় পরিবার
এই মর্মান্তিক মৃত্যুর পর পুরো পরিবার এবং সহকর্মীরা ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে। কিন্তু ছোট্ট তাসকিয়ার দুনিয়ায় এখনো বাবার শূন্যতার মানে পৌঁছায়নি। বাবার প্রতীক্ষায় সে এখনও বসে থাকে—তার খেলনা, বেলুন আর আইসক্রিম নিয়ে ফেরার অপেক্ষায়।
এ জাতীয় আরো খবর..