ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি
চলতি বছর বন্যার প্রকোপ কম থাকায় তিস্তার বুকে জেগে ওঠা শতাধিক চরে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে দারুণ খুশি চরাঞ্চলের হাজারো কৃষক পরিবার।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চরের কৃষকরা খেত থেকে আমন ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। অনেকে ধান কাটছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চরের আমন ধান কাটা শেষ হবে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা ।
লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার চর ধুবনির কৃষক বাহাদুর ইসলাম (৪০) বলেন, এ বছর বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়নি। ৬ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। ৯৫ মণ ফলন হয়েছে। গত বছর একই পরিমাণ জমি থেকে মাত্র ৫০ মণ ধান পেয়েছিলাম।
তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে আমন চাষে তার খরচ হয়েছে ৫-৬ হাজার টাকা। আর বাজারে প্রতিমন ধান ১২০০-১৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছাতুনামা চরের কৃষক হাসানুর রহমান (৫০) বলেন, এ বছর ১৩ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছিলাম। ১০ বিঘা জমির ধান ঘরে তুলেছি। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমির ধান কাটবো।
তিনি জানান, প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ১৬ থেকে ১৭ মণ ধানের ফলন পেয়েছেন। গত বছরও ১২ বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছিলেন। বন্যার কারণে বেশিরভাগ জমির ধান নষ্ট হয়েছিল। এ বছর বন্যার প্রকোপ কম থাকায় চরের জমি থেকে আমন ধানের আশানুরূপ ফলন পেয়েছি।
এদিকে বন্যার প্রকোপ কম হলেও ভাঙন থেমে নেই নদী পাড়ের এলাকাগুলোতে।
চর কিসামতের কৃষক আরিফুল ইসলাম বলেছেন,
এ বছর ১০ বিঘায় আমন চাষ করেছিলাম। নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় সামান্য বন্যায় তার ১০ বিঘার মধ্যে ৪ বিঘা জমি ধানসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এলাকার অন্য কৃষকরাও বলেন ঠিক একই কথা।
কৃষকরা বলছেন , চরে এখন ধান, ভূট্টা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়া, শশা, মরিচ, বাদামসহ অন্তত ১৫ রকমের ফসল উৎপাদন হচ্ছে। মাটির উর্বর শক্তি, ভালো বীজ নির্বাচন আর সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে মূল ভূখণ্ডের তুলনায় এখন চরে অনেক ভালো ফসল ফলছে।
তাদের দাবি , তিস্তা নদী শাসন করা গেলে অনেক বেশি চরকে উৎপাদনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। যার মধ্য দিয়ে মজবুত হবে দেশের কৃষি ও অর্থনীতি।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, নীলফামারী ও গাইবান্ধায় ১১৫ কিলোমিটার তিস্তার বুকে ২৩৬টি চর আছে। এর প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমি আবাদি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তিস্তার চরাঞ্চলে আমন ধানসহ নানা ধরনের ফসল ও সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে। চরাঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলন খাদ্য চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কৃষি বিভাগ চরাঞ্চলে কৃষকদের ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে দিকনির্দেশনাসহ সার-বীজ দিয়ে সহায়তা করে থাকে, বলেন তিনি।
মোঃ মিজানুর রহমান সবুজ
ডিমলা নীলফামারী প্রতিনিধি।।
এ জাতীয় আরো খবর..