মোঃ হাসান শিকদার, বিশেষ প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে অসংখ্য নদী, জেলার হরিরামপুর, শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলাগুলো পদ্মা ও যমুনা নদী তীরবর্তী এলাকা ও নদীর ভেতর চরঅঞ্চলের বিভিন্ন ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। উপজেলা গুলোর মধ্যে নদী ভাঙ্গনের ফলে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলা হচ্ছে হরিরামপুর। হরিরামপুর উপজেলার বিচ্ছিন্ন পদ্মার চরাঞ্চল আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়ন। উল্লেখিত তিনটি ইউনিয়নে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের বাস। তাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। চরবাসীদের জরুরি চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাতবছর আগে একটি নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা কাজে আসেনি চরবাসীর। ব্যবহার না হওয়ায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি।
স্থানীয় ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় দুর্গত এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি বেইসড হেলথ কেয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হরিরামপুরসহ ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেওয়া হয় একটি করে নৌ-অ্যাম্বুলেন্স। বরাদ্দের পর এ পর্যন্ত একজন রোগীও পরিবহন করা হয়নি। ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটির ইঞ্জিন অচল। বর্তমানে উপজেলার আন্ধারমানিক ঘাটে পড়ে নষ্ট হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সটি।
সরজমিনে মুঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) আন্ধারমানিক ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন যাবত ঘাটে পড়ে রয়েছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। সামনের গ্লাস ও মেশিনপত্র ভাঙা। ভেতরে রোগীর শোয়ার এবং রোগীর স্বজনদের বসার সীট নেই। ভেতরে পানি, শ্যাওলা ও কাঁদায় নোংরা হয়ে আছে। হালসহ বিভিন্ন জায়গায় মরিচা ধরেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা টিপু সুলতান (২৬) জানান , বছরের পর বছর নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। চরাঞ্চলবাসীর কোনো কাজেই আসেনি নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি। চরাঞ্চলের লোকজন আন্ধারমানিক ও বাহাদুরপুর ঘাটের ট্রলারে পারাপার হয়ে থাকেন। রাতের বেলায় কারও চিকিৎসা বা অন্য জরুরি প্রয়োজনে ঘাটের মাঝিদের ফোন করলে তারাই পার করেন তাদের।
চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী লিটন হোসেন বলেন, চরাঞ্চলবাসীর জন্য নৌ-অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা চরবাসীর কোনো কাজে আসেনি। এ পর্যন্ত চরাঞ্চলের কোনো রোগী পরিবহন করা হয়নি। বর্তমানে আন্ধারমানিক ঘাটে পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি।
আন্ধারমানিক ঘাটের এক ট্রলারচালক বলেন রাত-বিরেতে দরকার হলে চরের লোকজন আমাদের ফোন করলে আমরা তাদের পার করি। নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন ধরে আন্ধারমানিক ঘাটে পড়ে আছে। লোকজনের কোনো কাজে আসেনি এটি।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী এ কে এম রাসেল বলেন, কয়েকদিন হলো আমি এই হাসপাতালে যোগদান করেছি। গতবছরের অক্টোবরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল নৌ-অ্যাম্বুলেন্সটি অকেজো হয়ে আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের থেকে কোনো নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..