জাহিদ খান(জেলা প্রতিনিধি)
মানবজীবনের অগ্রগতিতে পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কুড়িগ্রাম জেলার অনেক স্থানে ভাঙা রাস্তার কারণে জনজীবনে অসহনীয় দুর্ভোগ নেমে আসছে। বিশেষত, গ্রামাঞ্চলের রাস্তার বেহাল দশা এখনো উন্নয়নের অপেক্ষায় রয়েছে। দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম এমনিতেই দরিদ্রতম জেলা।এ জেলার পরিচিতি মঙ্গা অঞ্চল হিসেবে।যোগাযোগ অবস্থার বেহাল দশার কারণে আরো পিছিয়ে পড়ছে কৃষি কৃষিজাত পণ্যের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও।গ্রামীন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো গেলে এ জেলাও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মত অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে বলেই বিশেষজ্ঞ জনের মতামত।
রাস্তার বর্তমান অবস্থা:
কুড়িগ্রাম জেলা নদনদী সমৃদ্ধ জেলা।এ জেলার মধ্যে দিয়ে ছোট বড় ৪৪ টি নদ নদী প্রবাহিত তন্মধ্যে দুধ কুমর,গঙ্গাধর,ধরলা,তিস্তা বৃহৎ নদী।এক সময় নদনদী গুলো যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ ই অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে।কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা থেকে বিভিন্ন উপজেলায় যাতায়াতের জন্য প্রধান সড়ক গুলো অতি সম্প্রতি সংস্কার করে যোগাযোগ উপযোগী করা হলেও উপজেলা গুলোর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভঙ্গুর ও অনুপযোগী হওয়ায় জনজীবনে স্বাভাবিক পণ্যবহন থেকে শুরু করে যাতায়াতে অত্যাধিক সময়,অর্থনৈতিক ব্যায়,ও ভোগান্তি বেড়ে গেছে।উপজেলা সদর থেকে বিভিন্ন ইউনিয়ন এ যাতায়াতের জন্য যে সমস্ত সড়ক পথ ব্যবহার হয় তার অধিকাংশই কালে ভদ্রে মেরামতের নামে হরিলুটের কারনে অল্পদিনেই আবার চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বর্ষার সময় এই গর্তগুলো পানি জমে ক্ষুদ্র পুকুরে পরিণত হয়। ফলে, সাধারণ মানুষ, স্কুলগামী শিশু এবং কৃষকদের দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে ভীষণ ভোগান্তি পোহাতে হয়। জরুরি প্রয়োজনে রোগী পরিবহন করতে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সগুলোকেও চরম বিপাকে পড়তে হয়।
ভাঙা রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে স্থানীয় মানুষজন প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হয়। এছাড়া, এই এলাকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হন। ভাঙা রাস্তা এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বাধা সৃষ্টি করছে।
এলাকার জনগণ বহুবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিংবা মাঝে মধ্যে লোক দেখানো সংস্কার কাজ করা হলেও দলীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নাম মাত্র কাজ করায় স্বল্প সময়েই আবারো আগের অবস্থার তৈরি হওয়ায় মানুষজনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা চান, দ্রুত রাস্তা সঠিক উপায়ে সংস্কার করা হোক এবং এর রক্ষণাবেক্ষণে নজরদারি বাড়ানো হোক।
রাস্তা ঘাটের সুফল ঘরে ঘরে পৌছে দিতে বিজ্ঞ জনের মতামত জানতে গিয়ে মূল যে বিষয় গুলো উঠে এসেছে-
উপযুক্ত রাস্তা নির্মাণ এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নত করতে পারে। এটি কেবল মানুষের দৈনন্দিন চলাচলকেই সহজ করবে না, বরং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকেও গতিশীল করবে। স্থানীয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট দফতরের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
ভাঙা রাস্তাগুলো উন্নয়নের পথে বড় বাধা। এগুলো মেরামত করে সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা আমাদের রাষ্ট্রের দায়িত্ব। উন্নয়নের শেকড় গ্রামীণ এলাকায় বিস্তৃত হলে তবেই দেশের সার্বিক অগ্রগতি সম্ভব হবে।
ভাঙ্গা রাস্তা: জনজীবনে দুর্ভোগের প্রতিচ্ছবি
ভাঙ্গা রাস্তা দেশের অনেক জায়গায় একটি সাধারণ সমস্যা হলেও, এর প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনে অত্যন্ত গুরুতর। বিশেষত শহরাঞ্চল ও গ্রামের সংযোগ সড়কগুলোতে এই সমস্যা অধিক মাত্রায় দেখা যায়।
বর্তমান পরিস্থিতি
আমাদের অঞ্চলের বেশিরভাগ রাস্তাই দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত। বর্ষার সময় জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তার গর্তগুলো আরও বড় হয়ে যায়। অনেক জায়গায় রাস্তায় এমন গর্ত তৈরি হয়েছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে। ময়লা, কাদামাটি এবং জলের কারণে সড়ক চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
প্রভাব:
১. পরিবহন ও যোগাযোগ: ভাঙ্গা রাস্তার কারণে যানবাহনের গতি কমে যায়, ফলে যাতায়াতে বেশি সময় লাগে। এতে অফিসগামী মানুষ ও শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ভোগান্তির শিকার হন।
২. দুর্ঘটনার ঝুঁকি: ভাঙ্গা রাস্তায় প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে বাইক ও রিকশার জন্য এটি একটি বড় সমস্যা।
3. অর্থনৈতিক ক্ষতি: যানবাহনের অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাড়তি ব্যয় হয়।
৪. স্বাস্থ্যঝুঁকি: ধুলোবালি এবং কাদা পানির কারণে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।
কারণঃ
ভাঙ্গা রাস্তার মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অপ্রতুল রক্ষণাবেক্ষণ, দলীয় বলয়ের ঠিকাদার এ সমস্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ করায় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, এবং ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন ভারী বৃষ্টি, রাস্তা নষ্ট হওয়ার একটি বড় কারণ।
সমাধানের প্রস্তাব:
১. মানসম্মত নির্মাণ: রাস্তা নির্মাণের সময় মানসম্মত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যাতে কাজের দায়িত্ব পায় সেটা নিশ্চিত করা। এবং উন্নতমানের সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
২. নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ: সরকারি সংস্থাগুলোকে রাস্তাগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে নজর দিতে হবে।
৩. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকেও রাস্তা ব্যবহারে সচেতন হতে হবে, যেমন ওভারলোডিং এড়িয়ে চলা।
৪. দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ: স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করতে হবে।
উপসংহার
ভাঙ্গা রাস্তার সমস্যা শুধু ভোগান্তি নয়, এটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের গতিকে ধীর করে দেয়। তাই সরকারি উদ্যোগ এবং জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে এই সমস্যার কার্যকর সমাধান করতে হবে। একটি সুস্থ ও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..