কুয়াকাটা প্রতিনিধিঃ
সরকারি ব্যাংকের চেক বই আটকে রেখে অসহায় মানুষের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ, বন থেকে মাটি বিক্রি, ঘাস বিক্রি, গাছ বিক্রি, বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয় ছয় করা অভিযুক্ত পটুয়াখালীর মহিপুরের রেঞ্জ কর্মকর্তা কালাম এখন নিজেকে দাবি করেন বিএনপি নেতা।
সরেজমিনে জানা যায়, তিনি যোগদান করেন মহিপুর রেঞ্জে। এরপর থেকে শুরু করেন অনিয়ম আর দুর্নীতি, সুফল প্রকল্পসহ নানা প্রকল্প থেকে হাতিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। তবে তার থেকে রক্ষা পায়নি অসহায় লোকজনও। বিভিন্ন প্রকল্পে বন পাহারা দেওয়া কাজে নিযুক্তদের সরকারিভাবে নির্ধারিত বেতন ১২ হাজার টাকা। সরকার স্বচ্ছভাবে তাদের হাতে অর্থ পৌঁছে দিতে নেন ব্যাংক একাউন্ট। সরকারিভাবে টাকা আসে যার যার ব্যাংক একাউন্টে। তবুও রক্ষা পায় না তারা। প্রজেক্টের কাজ করতে হলে অ্যাকাউন্ট করে চেক বই জমা রাখতে হয় কালামের কাছে। চেক বই জমা না দিলে থাকে না চাকরি। এমনকি হতে পারে গাছ কাটা মামলাও। ব্যাংক থেকে মোবাইল ফোনে ১২ হাজার টাকার ম্যাসেজ আসে প্রতি মাসে। তবুও এ নিয়ে কথা বলার সুযোগ নেই। বেতন আনতে হবে কালামের অফিস থেকে, তবে ১২ হাজার নয় চার, পাঁচ কিংবা ছয় হাজার টাকা, মানুষ ভেদে।
প্রতিবন্ধী সন্তানের মা রাবেয়া খাতুন (ছদ্মনাম) আক্ষেপ করে বলেন, ফোনে মেসেজ আসে ১২ হাজার টাকা বেতন ব্যাংকে ঢুকেছে। কিন্তু কি করার আছে আমরা তো আর ৫ হাজার টাকার উপরে পাবোনা। যখন অ্যাকাউন্ট করেছি সকল চেকের পাতায় স্বাক্ষর রেখে চেক বই দুটি নিয়ে যান কালাম স্যার, আমি অসহায় মানুষ কি বা করতে পারি! কিছু বললে বাদ দিয়ে দেবে আমার সন্তানকে। তাই আল্লাহর উপর বিচার দিছি। আগে দিত ৪ হাজার টাকা এখন তার হাত-পা ধরে পাঁচ হাজার টাকা পাই।
পঞ্চাশোর্ধ্ব বন প্রহরী আঃ সালাম (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমাদের নির্ধারিত বেতন ১২ হাজার টাকা হলেও আমরা পাই মাত্র ৬ হাজার। বাকি টাকা কালাম স্যার রেখে দেন। তার ভয়ে আমরা মুখ খুলতে পারছি না। তাহলে পুরো টাকা আটকে দিবেন, অথবা চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দিবেন।’
এমন আক্ষেপ রয়েছে বন প্রহরী হিসেবে কাজ করা শত শত মানুষের। বনের মধ্যথেকে হাজার হাজার গাছ বিক্রয়, গাছ উপড়ে ফেলে মাটি বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলতে গেলেই নিজেকে বিএনপি নেতা পরিচয় দিয়ে দেন হুমকি-ধামকি। এসব নিয়ে স্থানীয় নেটিজেনদের মাঝে তৈরি হয় নানা জল্পনা-কল্পনা। সরকারি চাকরি করে কিভাবে বিএনপির বড় নেতা পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটান তিনি। তা এখন জনমনে প্রশ্ন।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে তার মুঠোফোনে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগ কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই। শীঘ্রই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ জাতীয় আরো খবর..