কে এম শাহীন রেজা, নিজস্ব প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া:
মায়ের মানত রাখতে সাত বিয়ে করা লিবিয়াফেরত রবিজুলকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর থেকেই তাঁর সংসারে নেমে এসেছে সমাজ প্রধানদের চাপ। মাস চারেক আগে ষষ্ঠ স্ত্রী নিজ থেকেই তালাক দিয়ে চলে গেছেন তাঁর বাবার বাড়ি। এখন ছয় স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে নিয়ে তাঁর সংসার। এদিকে গ্রামের ২২ প্রধান একসঙ্গে হয়ে ইসলামি শরিয়ত মতে দুজন স্ত্রীকে তালাক দিতে তাঁকে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। গত শনিবার দূপুরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ি ইউনিয়নের পাটিকাবাড়ি বাজারে ২২ গ্রাম প্রধানের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে।
সেখানে পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়ার আয়নাল মণ্ডলের ছেলে রবিজুল ইসলামকে (৪০) ডেকে আনেন তাঁরা। বৈঠকে প্রধানের ভূমিকা পালন করেন স্থানীয় মাতবর নাজিম মণ্ডল। এ সময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফর উদ্দিনসহ আরও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে শরিয়ত মোতাবেক চারের অধিক স্ত্রী রাখার বিধান না থাকার ইসলামি ব্যাখ্যা দেন মুহতামিম হাফেজ ম. মুফতি আলমগীর হোসাইন। এ সময় রবিজুলের পঞ্চম ও সপ্তম স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।
রবিজুল ইসলাম বলেন, গ্রামের ২২ প্রধান নিজেরাই এক হয়ে সামাজিক বৈঠক ডেকে আমাকে উপস্থিত হতে বলে। আমি তাঁদের বলেছিলাম, এ জন্য আমার সময় প্রয়োজন। কারণ, আমি যাদের বিয়ে করেছি, তারা সবাই গরিব ঘরের সন্তান। তাদের চলার মতো একটা অবস্থান তৈরি করে পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। কিন্তু তারা আমার কথা না মেনে তাদের নিজেদের মতো করে আমার দুই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য জোর করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেয়। আমি তাদের তালাক দিতে চাই না। শালিসের পর তারা আমার দুই স্ত্রীকে গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে বৈঠকের প্রধান নাজিম মণ্ডল বলেন, ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক চার স্ত্রীর বেশি রাখার বিধান নেই। সামাজিকভাবে বসে আমরা তাকে সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলাম। স্ত্রীদের তালাক দিতে বাধ্য করতে পারেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রবিজুল তাঁর দুই স্ত্রীকে তালাক দেবেন বলে নিজেই অঙ্গীকার করেছেন। আমরা তাকে বাধ্য করিনি, তাকে মারধরও করিনি। সামাজিক বৈঠকে উপস্থিত আরেক গ্রামপ্রধান পাটিকাবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বলেন, এটা অবৈধ বিয়ে। আমরা তাকে বাধ্য করিনি। তার দুই বউ মেনে নিয়েছে। তাদের কাবিন ও খোরপোশ বাবদ দুই লাখ টাকাও দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দরিদ্র পরিবারের সন্তান রবিজুল মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে করেন জেলার মিরপুর উপজেলার বালুচর গ্রামের কিশোরী রুবিনা খাতুনকে। বিয়ের দুই বছরের মাথায় এই দম্পতির এক ছেলে সন্তান হয়। পরে বউ ও সন্তান বাড়ি রেখে লিবিয়া পাড়ি জমান রবিজুল। রবিজুলের স্ত্রীরা হলেন- কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হালসা গ্রামের রুবিনা খাতুন (৩৫), একই উপজেলার গোস্বামী দুর্গাপুর এলাকার মিতা আক্তার (২৫), কিশোরগঞ্জের হেলেনা খাতুন (৩০), চাঁপাইনবাবগঞ্জের নুরুন নাহার (২৫), চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার স্বপ্না (৩০), একই উপজেলার ডম্বলপুর এলাকার বানু আক্তার (৩৫) এবং কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার পোড়াদহ এলাকার রিতা আক্তার জুই (২০)। জুই চার মাস আগে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছেন।
এ বিষয়ে রবিজুলের স্ত্রী বানু ও মিতা বলেন, গ্রামের মাতব্বররা স্বামীর বাড়ি থেকে আমাদের বের করে দিয়েছে। স্বামীর বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। গ্রামের মাতব্বররা জোর করে ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিলে সই নিয়েছে এবং স্বামীর বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। স্বামীর ঘরে আমরা সুখে-শান্তিতে ছিলাম। স্বামীর ঘরে ফিরতে চাই, সুন্দরভাবে সংসার করতে চাই। যারা আমাদের সঙ্গে অন্যায় কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করব।
এ জাতীয় আরো খবর..