সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছোট ভাই ইমতিয়াজ আহমেদ নিরবের প্রভাবে বড় ভাই রিয়াজ আহমেদের মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে বলে এলাকায় অভিযোগ উঠেছে।
তার মাদক ব্যবসায়ের কারনে বরুমদী, ঝালকান্দি, কদমতলী, মাঝেরচর, লাধুরচর, গোবিন্দপুরসহ ৮ গ্রামের উঠতি বয়সের স্কুল কলেজের ছেলেরা খারাপ পথে পা বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসী রিয়াজের বিরুদ্ধে মানববনন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচীর ডাক দিয়েছেন। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তার মাদক ব্যবসা বন্ধ না করলে তার বিরুদ্ধে মাবববন্ধন কর্মসূচীসহ কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন।
জানা যায়, উপজেলার জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ড সদস্য ও বুরুমদী গ্রামের খোকন কবিরের ছেলে ইমতিয়াজ আহমেদ নিরব নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সে ও তার ভাই রিয়াজ বেপরোয়া হয়ে উঠে। মাদক ব্যবসা, জমি দখল, বিচার শালিসের নাম করে টাকা দাবি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। এসব অপকর্ম তাদের নিজস্ব বাহিনীর মাধ্যমে করে থাকে। রিয়াজ তার ছোট ভাইয়ের প্রভাবে পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিব্বি মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। রিয়াজ মাদকের পাইকারী ব্যবসায়ী। তার ওই এলাকায় ২৫-৩০জনের মাদকের খুচরা ব্যবসায়ী রয়েছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও প্রতি মাসে রিয়াজ মাসোহারা পেয়ে থাকে। মাদকের খুচরা ব্যবসায়ীদের পুলিশ ধরলেই ইউপি সদস্য নিরব দেন দরবার করে টাকার বিনিময়ে তাদের ছাড়িয়ে আনেন। প্রতি মাসে তারা দুই ভাই ১৫-২০ লাখ টাকার মাদক বিক্রি করে থাকেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এক সময় নিরবের কিছুই ছিল না। বর্তমানের তারা দুই ভাই মাদক ব্যবসা ও ভূমিদস্যুতা করে এলাকায় বিত্তশালী বনে গেছেন। তাদের জন্য এলাকার উঠতি বয়সের ছেলেরা মাদক সেবনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। দ্রুত তাদের থামাতে না পারলে যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের মাদক ব্যবসা বন্ধ না করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচী দেওয়া হবে।
বুরুমদী গ্রামের আব্দুল হাই মিয়া বলেন, ইউপি সদস্য নিরব ও তার ভাই মাদক ব্যবসায়ী , ভূমিদস্যু ও চাঁদাবাজ। তাদের অত্যাচারে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাদের মাদক ব্যবসা বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
ঝালকান্দি গ্রামের সাব্বির আহমেদ বলেন, বুরুমদী, ঝালকান্দিসহ ৮-১০ গ্রামের মানুষ এখন হাত বাড়ালেই মাদক পেয়ে যায়। ইউপি সদস্য নিরব গংদের বদৌলতে এখন মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেই প্রমাণ পেয়ে যাবে।
বুরুদমী গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউপি সদস্য নিরব আনারস প্রতিকের প্রার্থীকে সমর্থন করে নির্বাচন করেন। অপরদিকে আমরা ঘোড়া প্রতিকের নির্বাচন করেছি। এ নিয়ে নিরবের সাথে আমার দ্বন্ধ হয়। নির্বাচন চলাকালীন সময়ে নিরব আমাদেরকে ঘোড়া প্রতীক ছেড়ে আনারসের নির্বাচন করতে বলে তার কথায় রাজি না হওয়ায় আমাদের পুকুরে বিষ ঢেলে মাছ মেরে ফেলে। এসব অপকর্ম ছাড়াও তারা মাদক ব্যবসা, ভূমিদস্যুতা, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তাদের দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করলেই এ এলাকার মাদক ব্যবসা বন্ধ হবে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নিরব ও তার বড় ভাই রিয়াজের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। তারা মাদকের সঙ্গে জড়িত না। তারা মাদক বিরোধী আন্দোলন করেন। তারা পুলিশকে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করতে সহযোগিতা করেন।
জামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হুমায়ুন কবির ভূইয়া বলেন, ইউপি সদস্য নিরব ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে অনেকেই বলেন। এমন প্রমাণ এখনো পাইনি। তবে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করবো।
সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক তদন্ত মহসিন জানান, ইউপি সদস্য ও তার ভাই রিয়াজ মাদক ব্যবসায়ে জড়িত এমন অভিযোগ মৌখিকভাবে শোনা যাচ্ছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে মাদক ব্যবসায়ের জড়িত প্রমাণ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..