বরগুনা প্রতিনিধিঃ বরগুনা সদর উপজেলার নলী চরকগাছিয়া এতিম মঞ্জিল আলিম মাদ্রাসায় ভুয়া কমিটি দিয়ে নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে। অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে জেলা প্রশাসন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে।
জানাগেছে, নলী চরকগাছিয়া এতিম মঞ্জিল আলিম মাদ্রাসার ৫টি পদে নিয়োগ পরীক্ষা পূর্ব নির্ধারিত ১লা মে বরগুনা সরকারী কলেজে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়া কথা থাকলেও মাদ্রাসার অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা জেলা প্রশাসন বন্ধ করে দেয়।
জেলা প্রশাসক দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করলেও বর্তমানে ঐ প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ আবারও ভুয়া কমিটির সাথে যোগসাজসে ফের নিয়োগ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক অভিভাবক সদস্য জানান, দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ মোঃ বনী আমিন অফিস সহকারী কাম- হিসাব সহকারী (০১টি) পদে রফিকুল ইসলাম, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউপার অপারেটর (২টি) পদে রাব্বানী ও আল আমিনকে মোটা অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন। নিয়োগ সংক্রান্ত এমন অভিযোগ অন্য আবেদনকারীগণ উত্থাপন করলে অধ্যক্ষ পরীক্ষার স্থান পরিবর্তনের নানা ফন্দি করেন। ঐ মাদ্রাসার একজন সহকারী শিক্ষক জেলা প্রশাসক ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবরেও নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
ঐ অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মহা-পরিচালকের মনোনিত প্রতিনিধি এবং প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের যোগসাজসে ১১ লাখ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ কার্যক্রম হচ্ছে। অভিযোগে বলা হয় অধ্যক্ষ বনী আমিন ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা টাকা গ্রহণ করেছে। নিয়োগপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী বলেন, তার স্বামীকে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে অধ্যক্ষ বনি আমিন ১১ লক্ষ টাকার চুক্তিতে ৪ লক্ষ টাকা মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (অর্থ) আবুল বাশারকে দেওয়ার কথা বলে নিয়েছেন। চাকরিপ্রার্থীর নিকট থেকে মহাপরিচালকের প্রতিনিধিকে ঘুষ দেওয়ার কথা বলে অধ্যক্ষ অর্থ আত্মসাৎ করেন যার অডিও কল রেকর্ড সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়।
নানা অনিয়ম আর ঘুষ বানিজ্যের কারণে ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্য মোসা: হিরামনি সভাপতির বরাবর অব্যাহতিপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, অধ্যক্ষ বনি আমিন রেজিষ্টার খাতায় স্বাক্ষর জাল, এতিমদের টাকা আত্মসাৎ সহ নানা অভিয়োগের পেক্ষিতে অব্যাহতি নিতে চাচ্ছি।
অভিযোগের বিষয় সহকারী শিক্ষক কাওছার বলেন, নিয়োগে টাকা লেনদেন হচ্ছে। অধ্যক্ষ টাকা নিয়ে ভুয়া কমিটির মাধ্যমে অযোগ্যদের নিয়োগ দিচ্ছেন এমন খবর পেয়ে আমি জেলা প্রশাসক ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ডিজির বরাবর অভিযোগ করি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছেন। অবৈধ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও দাতা সদস্যের কতিপয় লোক আমাকে বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি দেখাচ্ছে। তারা দরখান্ত প্রত্যাহার করতে বলেন। প্রত্যাহার না করলে আমাকে চাকুরীচুত্যসহ খুন জখমের হুমকি দিচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, কমিটি গঠনে নীতিমালা বহির্ভুত প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বে-আইনীভাবে করা হয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠানে কোন অর্থ বা জমি দান না করেই প্রতিষ্ঠা সদস্য হয়েছেন। দাতা সদস্যের ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা অনিয়ম আর দূর্নীতি। নিয়মে হচ্ছে- কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এক বছরের জন্য দাতা সদস্য হতে হলে ২০ হাজার টাকা, আজীবন সদস্য হতে হলে ১ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে ব্যাংকের রিসিভ গ্রহণ করতে হবে। দাতা সদস্য আঃ কালাম বলেন, তিনি ব্যাংকে টাকা জমা দেননি। অধ্যক্ষ কিভাবে তাকে দাতা সদস্য করেছে অধ্যক্ষই জানেন। তিনি মাদ্রাসায় এতিমদের জন্য ৪০ হাজার টাকা দান করেছেন বলে দাবি করলেও কোন প্রমাণপত্র দেখাতে পারেননি।
অভিভাবক সদস্য হতে হলে মাদ্রাসায় তার ছেলে বা মেয়ে পড়াশুনা করতে হবে। কিন্তু অভিভাবক সদস্য মোঃ মজিদ মোল্লার ছেলে মেয়ে বিগত ১০ বছর যাবত অত্র মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেনি। মোঃ ফজলুল হক সরদার ও মোসাঃ মেহেরুন নেছা এদের ছেলে ও মেয়ে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে না অথচ তারা মাদ্রাসার অভিভাবক সদস্য। তারা বলেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বনি আমিন তাদেরকে অভিভাবক সদস্য করেছেন কিভাবে তা তিনিই জানেন।
ভুয়া পকেট কমিটি ভেঙ্গে মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রকৃত অভিভাবকদের নিয়ে নতুনভাবে বোর্ডের নীতিমালা অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি এলাকাবাসীর। এলাকাবাসী আরো বলেন, বৈধ কমিটি গঠন ও স্বচ্ছতার মাধ্যমে মাদ্রাসায় নিয়োগ দেয়া হোক। ইতিপূর্বেও অধ্যক্ষ বনি আমিন পকেট কমিটি দিয়ে নিয়োগ নিয়েছেন যা সম্পূর্ণ অবৈধ নিয়োগ। এলাকাবাসী দুর্নীতিবাজ এই অধ্যক্ষের অপসারণ দাবি করেন।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোসা: রেহেনা বেগম সকল সত্যতা স্বীকার করে প্রশ্ন তোলেন, অনেক অভিভাবকের ছেলে মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে না তাতে কি হয়েছে?
এসব অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে অধ্যক্ষ মাও: বনি আমিন সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি নিয়োগে কোন টাকা পয়সা নেননি। তবে কমিটি যদি অবৈধ হয় তা তদন্তের মাধ্যমে অবৈধ প্রমানিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পূর্ণরায় কমিটি করে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এধরণের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি এবং খতিয়ে দেখছি। কমিটি যদি অবৈধ হয় তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মহাপরিচালকের প্রতিনিধি আবুল বাশার মুঠো ফোনে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি । আপদত নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ আছে। কমিটি যদি নীতিমালা অনুযায়ী না হয় তাহলে কমিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয় হবে। তার বিরুদ্ধে যে অর্থ লেনদেনের যে অভিযোগ এসেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা । তিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছ থেকে কোন টাকা গ্রহন করেননি।
এলাকাবাসীর দাবী ভুয়া পকেট কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ কওে স্বচ্ছ ভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটি দ্বারা মাদ্রাসার যোগ্য প্রার্থীদেও নিয়োগ দেওয়া হইক। তারা আরও বলেন ভুয়া পকেট কমিটির মাধ্যমে অধ্যক্ষ বনি আমিনকে সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে নিয়োগ দেওয় হয়েছে তাকে তদন্ত্র করে সত্য হলে তাকে চাকুরীচুত্য করা হউক। বৈধ কমিটি দিয়ে পূর্ণরায় অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হউক।
এ জাতীয় আরো খবর..