তালতলী(বরগুনা)প্রতিনিধি: বরগুনার তালতলীতে তরমুজ ক্ষেতে পানি সেচ দিতে না পারায় ভোগান্তিতে পড়েছে শতাধিক কৃষক। এতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। এ বিষয়ে থানা ও ইউএনও অফিসে অভিযোগ দিলেও তোয়াক্কা করছেন না বিএডিসি ম্যানেজার ফারুক মোল্লা।
জানা যায়, উপজেলার কবিরাজপাড়া এলাকায় প্রতি বছরই ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার তরমুজসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়াও আমন ও বোরো চাষাবাদ করা হয়। এজন্য গত ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সমিতির মাধ্যমে সেচ প্রকল্প চালু করা হয়। সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালী ফারুক মোল্লাকে ঐ সমিতির ম্যানেজার করা হয়। সেচ প্রকল্প শুরু থেকেই ফারুক মোল্লা তার নিজের বলে দাবি করেন। এই সেচ প্রকল্পের অধিনে ২০ হেক্টর জমি রয়েছে। তবে ফারুক মোল্লার সাথে সাধারণ কৃষকের সঙ্গে দ্বন্দের জেরে ১০-১২ হেক্টর জমিতে সেচের পানি দেওয়া হয় না। এতে প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বোরো, আমন ও তরমুজ কৃষকরা। পাচ্ছে না কাঙ্খিত ফসল। এ নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেও তারা সমাধান পাচ্ছে না বলে জানায় স্থানীয়রা। পরে স্থানীয় কৃষকরা থানায় অভিযোগ দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হলে পুলিশের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন ও পুলিশের সিদ্ধান্ত মানেন না ফারুক মোল্লা। পরে উপায় না পেয়ে স্থানীয় কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসাররের কাছে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফারুক মোল্লাকে শুনানীর জন্য নোটিশ করেন ইউএনও। গত ৩রা মার্চ শুনানীর তারিখ থাকলেও সে আসেনি এবং আসবেনা বলে অস্বীকার করেন। পরবর্তীতে ৪ঠা মার্চ ইউএনও অফিসে শুনানি হলে সেখানে ফারুক মোল্লা স্বীকার করে যে এরপর থেকে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুচ ফরাজীর মাধ্যমে তরমুজ চাষের জন্য কৃষকদের সেচের পানি দিবেন। তবে পরের দিনই কৃষকদের পানি না দিয়ে উল্টো কৃষকদের হুমকি দিয়ে আসছেন। কৃষকরা যাতে পানির অভাবে তরমুজ চাষ করতে না পারে সেজন্য ইউএনও’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয় তরমুজ চাষি নজরুল বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে তরমুজ চাষের সেচ এর অভাবে কষ্টে আছি। সাবেক ইউএনও কাওসার সাহেব, এস.এম সাদিক তানভীর স্যার বারবার আমাদের পানি দেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং প্রতিবছর অস্থায়ী ভাবে সমাধান হয়েছে। নতুন ইউএনও আসলেই নতুন ভাবে ঝামেলা করেন ফারুক মোল্লা। সাবেক এক সচিব এর প্রভাব দেখিয়ে তিনি আমাদের সেচ পানি দিচ্ছেন না।
বিএডিসি ম্যানেজার ফারুক মোল্লাকে একাধিক বার মুঠো ফোনে কল দেওয়া হলেও ফোনটি ধরেনি।
বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী মোসাদ্দেক জানান, সেচ প্রকল্পের দেওয়া হয়েছে জমিতে পানি সরবারহ করার জন্য। স্থানীয় বিরোধ নিয়ে ওই সেচের ম্যানেজার জমিতে সঠিক ভাবে পানি দিচ্ছে না বলে অনেক অভিযোগ আছে আমাদের কাছে। তিনি যদি পানি না দেয় তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পরামর্শে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও সেচ কমিটির সভাপতি সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, কবিরাজপাড়া এলাকার বিএডিসি সেচের পানি কৃষকদের না দেওয়ার একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। সেখানে ফারুক মোল্লা কৃষকদের পানি দিবেন মর্মে স্বীকার করেন। তবে এখন পর্যন্ত তিনি কৃষকদের পানি দিচ্ছে না। বিগত কয়েক বছর যাবত সেচ পানি নিয়ে তার বিরুদ্ধে অত্র কার্যালয়ে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সদস্যদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।
এ জাতীয় আরো খবর..