শায়েক আহমদ কক্সবাজার: কক্সবাজার সদর উপজেলায় অবস্থিত বাচামিয়ারঘোনা মনিরা খাতুন এতিমখানায় সরকারি অনুদানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে, মনিরা খাতুন এতিমখানায় যাদেরকে এতিম হিসেবে দেখানো হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তাদের অধিকাংশেরই পরিবার পরিজন রয়েছে।
উক্ত এতিমখানা সরিজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে ৪-৫ জন এতিম ছেলে-মেয়ে রয়েছে এবং বাবা থাকা সত্ত্বেও যাদের এতিম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এমন ছেলে-মেয়ে রয়েছে ২০-২৫ জন। আবার এদের পড়াশোনা করানোর জন্য শিক্ষক রয়েছে দুই (০২) জন।
মনিরা খাতুন এতিমখানার তথ্যপ্রমাণসহ বেশ কিছু কাগজপত্র এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। উক্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, ২০১০-২০১৭ সাল পর্যন্ত এই এতিমখানায় ৩৬জন এতিম ছেলে-মেয়ে ছিলো তারপর ২০১৭-২১ সালে এই এতিম ছেলে-মেয়েদের সংখ্যা হয় ৪০ জন এবং সর্বশেষ ২০২১- বর্তমান সময় পর্যন্ত এতিম ছেলে-মেয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০জনে যা শুধু কাগজপত্রেই সীমাবদ্ধ যার বাস্তবচিত্র একেবারেই ভিন্ন । এই ৬০জন এতিম ছেলে-মেয়ের জন্য প্রতিমাসে সরকারি অনুদান আসে প্রায় একলক্ষ বিশ হাজার টাকা যা প্রতি এতিমের জন্য দুই হাজার (২০০০) টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে।
মনিরা খাতুন এতিমখানায় অনুদানের টাকা আত্মসাৎ এর বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরও জানা যায় যে, এই এতিমখানায় যে ৬০ জনকে এতিম দেখিয়ে সরকারি অনুদান নিয়ে আসেন তাদের অধিকাংশই এতিম নয়। মনিরা খাতুন এতিমখানায় যাদের এতিম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে এমন কয়েকজন এতিম পরিবারের সাথে কথা এই প্রতিবেদকের। তাদের মধ্যে রয়েছে শামীম, হামীম এবং রামীম এই তিন(০৩) জন ছেলেকে এতিম হিসেবে দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে তারা এতিম নয়। এই তিনজনের বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় তাদের সৎ মায়ের সাথে তিনি বলেন তাদের বাবা কাজ করতে অক্ষম হওয়ায় তাদের পড়াশোনা এবং খাওয়া-দাওয়ার খরচ জোগানো কষ্টকর হওয়ার কারণে এই তিনজন ছেলেকেই মনিরা খাতুন এতিমখানায় দিয়ে দেন অথচ তাদের এতিম দেখিয়ে সরকারি অনুদান নিচ্ছেন মনিরা খাতুন এতিমখানা কর্তৃপক্ষ।
এমনই আরেকজন এতিম হিসেবে উল্লেখ করা ছেলের বাবার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের । যাকে এতিম হিসেবে দেখানো হয়েছে তার নাম আলিফুর রহমান(১৪) এবং তার বাবা এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন তার ছেলের জন্য প্রতিমাসে ৩০০ টাকা প্রদান করেন মনিরা খাতুন এতিমখানায় তিনি আরও বলেন আমার আর্থিক সমস্যার কারণে এর বেশি টাকা আমি দিতে পারিনা। তাদের মতোই অবস্থা এতিম হিসেবে উল্লেখ করা অন্যান্য ছেলে- মেয়েদের।
এতিমখানার নাম ভাঙ্গিয়ে সরকারি অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরা খাতুন এতিমখানার বর্তমান পরিচালক রহমতুল্লাহ রিজভী বলেন আমার এতিমখানায় বর্তমানে একশত পঁচিশ(১২৫) জন এতিম ছেলে-মেয়ে তিন বেলা খাবার খাচ্ছে কিন্তু আমি সরকারি অনুদান পাচ্ছি ষাট (৬০) জন এতিম ছেলে-মেয়ের নামে । আপনার এতিমখানায় যাদের এতিম হিসেবে উল্লেখ করেছেন তাদের অনেকেরই তো পিতা-মাতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তাহলে তারা এতিম হলো কিভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে এতিমখানার পরিচালক রহমতুল্লাহ রিজভী বলেন যারা এমন অভিযোগ করেছেন আমি এই বিষয়টি একটু পরিস্কার করে দিচ্ছি এসময় তিনি বলেন একজন ছেলের বাবা মারা গিয়েছে কিন্তু তার মা অন্য আরেকজন পুরুষকে বিয়ে করেছে যার কারণে ছেলেগুলো বয়সে ছোট হওয়ায় তাদের সামনে বলা যাচ্ছে না যে তারা এতিম এমনটিই জানিয়েছেন মনিরা খাতুন এতিমখানার পরিচালক রহমতুল্লাহ রিজভী।
এ জাতীয় আরো খবর..