কালের কণ্ঠ'র প্রধান সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশবরেণ্য কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, হত্যাকরীরা বঙ্গবন্ধুকে ১৫ আগস্ট ১৯৭১ সালে পৈশাচিকভাবে হত্যা করেছে। কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে হত্যা করতে পারেনি। তারা জানত না, বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে হত্যা করা যায় না। বঙ্গবন্ধুর জায়গা বাঙালির অন্তরে, অন্তর থেকে কাউকে তুলে নেওয়া যায় না।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোকদিবসে সকাল ৯টায় নটরডেম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের আয়োজনে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে শোকদিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘শোক থেকে শক্তি ও জাগরণের গভীর শ্রদ্ধা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, যতদিন বাঙালি জাতি থাকবে, বাংলাদেশ থাকবে, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির হৃদয়ে থাকবেন। সেখান থেকে কেউ তাঁকে সরাতে পারবে না।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে মানুষের মতো দেখতে বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শতবর্ষ কমিটির একজন হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর একটা কিশোর জীবনী রচনা করতে হবে। যেটা শিশুদের পাঠ্যক্রমে সংযুক্ত করা হবে। যাতে শিশুরা বঙ্গবন্ধুকে জানতে পারে। পরে বিভিন্ন বই গবেষণা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ ও সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর কিশোর জীবনী রচনা করি।
বঙ্গবন্ধুর অবদান ও আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছোটবেলায় বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশে যোগ দিতেন। সেখান থেকে তাঁর একটা চেতনা তৈরি হয়। সে চেতনার আলোকে তিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা ও বৈষম্যের মুক্তি এনে দিয়েছিলেন। এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য তিনি লড়াই করেছেন, সেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। এই জাতির এর চেয়ে ঘৃণার ঘটনা আর হতে পারে না।
ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি দুই-তিনবার। আমার প্রথম তাঁকে দেখে মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর মতো সুপুরুষ বাঙালি আর নেই। তাঁর মতো সুপুরুষ বাঙালি আর কেউ জন্মাননি। তাঁর অসামান্য কণ্ঠস্বর, অসামান্য ব্যক্তিত্ব, অসামান্য বডি ল্যাঙ্গুয়েজ- সব কিছুই মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর তুলনা হয় শুধু বঙ্গবন্ধুর সাথে।
তাঁর ‘রাজার চিঠি’ গল্প লেখার ইতিহাস উল্লেখ করে বলেন, প্রথম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার প্রথম গল্প। ১৯৭৭ সালে লিখি আমি। একটা রূপক গল্প। ১৯৭৮ সালে গল্প লিখলাম ‘মানুষ কাঁদছে’। যেখানে একটা ছেলে বলছে, আমি বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে পারিনি।
তিনি বলেন, আগে আমি গেন্ডারিয়া থাকতাম। সেখানে এক ছাত্রনেতার বিয়েতে বঙ্গবন্ধু এসেছিলেন। বাড়ির কাজের লোক বঙ্গবন্ধুকে পায়ে সালাম করলেন। আমি স্পষ্ট কানে শুনেছিলাম, বঙ্গবন্ধু ওই ছেলের মাথায় হাত রেখে বললেন, ভালো থাকিসরে, ভালো থাকিস। এর ওপর ভিত্তি করে 'সোনার মানুষ' নামে একটা গল্প লিখেছি।
তরুণ প্রজন্মের সকল ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সোনার মানুষ হও। সোনার মানুষ হলে সোনার বাংলাদেশ গড়া সম্ভব।
এছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্যে ফাদার সুবাস আদম পেরেরা ১৫ আগস্টে শহীদ হওয়া বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের আত্মার শান্তি কামনা করেন। অনুষ্ঠানে পাবলিক রিলেশন অফিসের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
‘শোক থেকে শক্তি ও জাগরণ গভীর শ্রদ্ধা’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ফাদার সুব্রত বনিফাস টলেন্টিনু, ট্রেজারার ফাদার লেনার্ড শংকর রোজারিও, ফাদার অসীম গনছালভেস, প্রফেসর অলোক কুমার চক্রবর্তীসহ অন্যান্য শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা।
এ জাতীয় আরো খবর..