মশা নিধন ব্যবস্থানার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে ঋণ চায় সরকার। এক্ষেত্রে সংস্থাটির কাছে ১০৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার ঋণ চাওয়া হয়েছে। এ ঋণের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জান গেছে।
‘ইমপ্রুভমেন্ট অব আরবান পাবলিক হেলথ প্রিভেন্টিভ সার্ভিসেস’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ ব্যয় হবে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৮৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ছাড়াও সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে ২১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত নেই। বর্তমান ডেঙ্গু ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পটি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে তোড়জোড় বেড়েছে। ফলে এডিপিতে যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন শনিবার যুগান্তরকে বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রকল্প। এর মাধ্যমে যদি ডেঙ্গু রোগী কমানো যায়, তাহলে হাসপাতালগুলোয় চাপ কমবে এবং অন্যান্য রোগী চিকিৎসা পাবেন। ফলে ডেঙ্গুর জন্য হাসপাতালগুলোয় বাড়তি চাপ ও ব্যয় দুটোই কমবে। তবে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেগুলো যেন কার্যকরী হয়।
ওষুধ বা যন্ত্রপাতি যাই কেনা হোক না কেন, সেগুলো যাতে কাজে লাগে। সঠিক কারিগরি পরামর্শের ভিত্তিতেই কার্যক্রম নিতে হবে। প্রকল্পের আওতায় বায়ু বা শব্দদূষণ কমানোর মতো কার্যক্রম না নিলেও চলে। কেননা সিটি করপোরেশন এক্ষেত্রে কী ভূমিকা রাখবে? এ নিয়ে জাতীয়ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। সবকিছু মিলিয়ে মনে রাখতে হবে ঋণের অর্থের প্রকল্প। এই টাকার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এর অংশ হিসাবে ৬ আগস্ট কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে সুপারিশ পাঠানো হয়েছে কার্যক্রম বিভাগে। প্রক্রিয়াকরণ শেষে একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) বৈঠকে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৮ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন হবে।
পাঁচ বছরে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। ঢাকা জেলার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং সাভার পৌরসভায় বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনও প্রকল্পের আওতাভুক্ত।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, মশা নিধন ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা জোরদার করা এবং আউট হাউজ মেডিকেল বর্জস্থাপনা উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক কর্মসূচি, বায়ু ও শব্দদূষণ কমানো এবং জনস্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো হবে। আরও আছে নন কমিউনিকেশন ডিজেজ (এনডিসি) প্রতিরোধের জন্য সুযোগ তৈরি করা।
নথিপত্রে প্রকল্পের গুরুত্ব এবং গ্রহণের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়, দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশ হারে স্থির থাকায় নগরায়ণ দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে শহরে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ বাড়ছে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোয় এটি অন্যতম সমস্যা হিসাবে দেখা দিয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ শহরবাসীর জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশের সব বিভাগেই ডেঙ্গু আক্রান্তের খবর আসছে। আগে জুন-জুলাইয়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যেত। কিন্তু এখন সারা বছরই হচ্ছে। এসব বিবেচনায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, যৌক্তিক কারণে চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) এডিপিতে প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
এ জাতীয় আরো খবর..