যেসব স্থানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কান্না করেছেন, তার অন্যতম স্থান হলো সালাত। সালাতে তাঁর কণ্ঠ ভার হয়ে যেত আর ভেতর থেকে চাপাকান্না বেরিয়ে আসত। কখনো কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে যেত, আর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরত। কখনো দীর্ঘ সিজদায় পড়ে অবিশ্রান্ত কেঁদে যেতেন, সে কান্নায় সিক্ত হতো আরবের জমিন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সালাতরত অবস্থায় ক্রন্দন বিষয়ে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো—
আয়েশা (রা.) বলেন, এক রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে আয়েশা, ছাড়ো আমাকে, এই রাতটি রবের ইবাদতে কাটাব। নবীজি পবিত্রতা অর্জন করে নামাজে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন, কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কোল ভিজে যায়। তারপর আবার কাঁদতে লাগলেন, কাঁদতে কাঁদতে দাড়ি মোবারক ভিজে যায়।
আয়েশা (রা.) বলেন, তারপর আবারও অনেক কাঁদলেন, এমনকি চোখের পানিতে জমিন সিক্ত হয়ে ওঠে। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৬২০)
আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলাম, তখন তিনি সালাত আদায় করছিলেন, আর তাঁর ভেতর থেকে কান্নার এমন শব্দ বের হচ্ছে, যেন চুলায় রাখা পানির ডেকচি টগবগ করে ফুটছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৯০৪)
আবু সাইব (রহ.) থেকে বর্ণিত, আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা.) তাঁর কাছে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে একবার সূর্যগ্রহণ লেগে যায়। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন আর তাঁর সঙ্গে যারা ছিল তাঁরাও দাঁড়িয়ে গেল।
তিনি দাঁড়ালেন আর দাঁড়ানোকে দীর্ঘায়িত করলেন, তারপর রুকু করলেন আর রুকুকেও দীর্ঘায়িত করলেন। তারপর তাঁর মাথা উঠালেন ও সিজদা করলেন এবং সিজদাকেও দীর্ঘায়িত করলেন। তারপর মাথা উঠালেন ও বসলেন, আর বসাকেও দীর্ঘায়িত করলেন। তারপর সিজদা করলেন এবং এ সিজদাকেও দীর্ঘায়িত করলেন। তারপর মাথা উঠালেন ও দাঁড়িয়ে গেলেন।
তিনি প্রথম রাকাতে যা যা করেছিলেন অর্থাৎ দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা ও বসা, অনুরূপ দ্বিতীয় রাকাতেও করেন। তিনি দ্বিতীয় রাকাতের শেষ সিজদা করেন এবং কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন, (হে আল্লাহ!) আমি তাদের মধ্যে বিদ্যমান থাকাকালীন তুমি তাদের এমন আজাব দেওয়ার ওয়াদা আমার সঙ্গে করোনি, তোমার কাছে মাগফিরাত চাওয়াকালীন তুমি তো আমার কাছে তাদের আজাব দেওয়ার ওয়াদা করোনি। তারপর তিনি মাথা উঠালেন এবং সূর্যও আলোকিত হয়ে গেল। (নাসাঈ, হাদিস : ১৪৮২)
এ জাতীয় আরো খবর..