বিশাল তিতাস নদীর মাঝখানে সারি সারি খাঁচা। জাল ও বাঁশ দিয়ে তৈরি এসব খাঁচায় চোখে পড়ে তেলাপিয়া, কাতল, সিলভার কার্প ও ঘাস কার্প মাছের বিচরণ। মাছ চাষিরা নৌকা করে মাছের কাছে গিয়ে খাবার দিচ্ছেন; আর দেখছেন কোন মাছ কতটা বড় হলো!
পুকুরের তুলনায় নদীতে এভাবে খাঁচায় মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে নদীনালা ও খাল-বিলসহ মুক্ত জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষ। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় ভাটি এলাকার বেকার যুবকরাও ভাসমান জলাশয়ে মাছ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এতে পুষ্টির চাহিদা যেমন পূরণ হচ্ছে, তেমনি নিজেদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছেন প্রান্তিক পর্যায়ের এ মৎস্য চাষিরা।
তারা জানান, হ্যাচারি থেকে দুই থেকে আড়াই ইঞ্চি সাইজের মাছের পোনা ক্রয় করে ছাড়া হয় নদীতে তৈরি করা এসব মাছের খাঁচায়। মাত্র আড়াই মাসের মাথায় প্রতিটি মাছের ওজন বেড়ে দাঁড়ায় এক থেকে সোয়া কেজি।
চাষিদের দাবি, পুকুরে চাষাবাদের তুলনায় নদী কিংবা খালে খাঁচায় মাছ চাষে খরচ অনেক কম। মাছের বৃদ্ধিও হয় বেশ দ্রুত; খেতেও সুস্বাদু। খাঁচায় মাছ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন এ জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষিরা।
অনিক দাস নামে এক মাছ চাষি বলেন, ‘পুকুরে মাছ চাষ করার চেয়ে নদীতে মাছ চাষ করা খুব সহজ; টাকাও লাগে খুব কম। মাছের খাবারের পাশাপাশি নদীর মাছ যেভাবে বড় হয়, এখানে চাষ করা মাছও সে রকমই বড় হয়। আমরা সরকারি অনুদানের মাধ্যমে এখানে তেলাপিয়া, কাতল ও সিলভার কার্প চাষ করছি। পুকুরে মাছ বড় হতে যদি তিন মাস সময় লাগে, এখানে লাগে দেড়-দুই মাস। সেজন্য পুকুরের চেয়ে নদীতে মাছ চাষ করা অনেক লাভজনক।’
আরেক চাষি প্রদীপ দাস বলেন, ‘আমরা হ্যাচারি থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে ছোট ছোট পোনা মাছ কিনে এখানে চাষের জন্য নিয়ে আসি। এখানে মাছ বড় করে বাজারে বিক্রি করি। পুকুরের চেয়ে নদীতে খাঁচায় মাছ বড় হতে সময় কম লাগে। এতে আমরা খুবই লাভবান হচ্ছি। যারা এ প্রক্রিয়ায় মাছ চাষ করবে, তারা সবাই লাভবান হতে পারবে।’
এদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্য চাষি অজিত কুমার দাস জানান, নদীতে স্রোতের মধ্যে মাছ চাষ ভাল হয় এবং এটি লাভজনক। কারণ পুকুরে মাছ চাষ করলে মাছ মরে যাবার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু নদীতে মাছ কখনোই মারা যায় না।
খাঁচায় মাছ চাষে কেউ আগ্রহী হলে তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে, উপজেলা মৎস্য অফিসার মো. সাইদুর রহমান জানান, পুকুরে মাছ চাষ করার চেয়ে নদীতে মাছ চাষ অনেকটাই লাভজনক। নদীতে মাছ চাষে সময়ও লাগে কম; আবার খেতেও বেশ সুস্বাদু। বাজারে নদীতে খাঁচায় চাষের মাছের দামও বেশি। খাঁচায় মাছচাষে এলাকার বেকার তরুণরা এগিয়ে আসলে দেশের পুষ্টি ঘাটতি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
জেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, জেলার ৯টি উপজেলায় অন্তত শতাধিক স্থানে অন্তত পাঁচ শতাধিক চাষি মুক্ত জলাশয়ে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন।
এ জাতীয় আরো খবর..