গাজীপুরের টঙ্গীর রেলওয়ে জংশন এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ‘কর্ণফুলী কমিউটার’ নামের একটি ট্রেন ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছিল। জংশনের আউটার সিগন্যালে ট্রেন থামলে হঠাৎ বাইরে থেকে একের পর এক পাথর ছুড়তে থাকে দুর্বৃত্তরা। এতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কারও কারও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ৯ জনকে আটক করেছে।
ওই ঘটনার ১ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা যায়, রাতের বেলা ট্রেনের একটি বগিতে যে যার মতো অবস্থান করছেন যাত্রীরা। কেউ বসে, কেউবা দাঁড়িয়ে। এর মধ্যেই ট্রেনের জানালা দিয়ে আসতে থাকে একের পর এক ছোড়া পাথর। মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে বগিতে। যাত্রীরা দ্রুত ট্রেনের জানালা বন্ধ করে দেন। কিন্তু তারপরও একের পর এক আসতে থাকে পাথর। একপর্যায়ে পাথরের আঘাত থেকে বাঁচতে ট্রেনের মেঝেতে শুয়ে পড়েন যাত্রীদের কেউ কেউ।
ভিডিওটিতে একজন যাত্রী বলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ট্রেনটি এসে থামে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে। প্রস্রাব করার জন্য এক যাত্রী বগি থেকে নামেন। এ সময় হঠাৎ পাশের জঙ্গল থেকে তিনজন বেরিয়ে এসে চাকু ধরে ট্রেন থেকে নামা যাত্রীর মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ট্রেনের যাত্রীদের উদ্দেশ্য করে পাথর ছুড়তে থাকেন ছিনতাইকারীরা। ট্রেনের এক টিটিকেও মারধর ও চাকু দিয়ে আঘাত করা হয়। অনেকের মুঠোফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পাথরের আঘাতে অনেকের মাথা ফেটে যায়।
ট্রেনে থাকা এক টিটি বলেন, তিনি তখন ট্রেনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এর মধ্যেই হঠাৎ পাথর ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। তিনি দরজা বন্ধ করে দেন। এর মধ্যে দরজার একটু ফাঁক ছিল। সেই ফাঁক দিকে তাঁকে ছুরি মেরে আঘাত করা হয়।
ঘটনার পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ট্রেনটি আউটার সিগন্যালে স্থানীয় আকিজ বেকার্সের পেছনে এসে থামে। সেখান থেকে টঙ্গী রেলজংশনের দূরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। এর মধ্যে রাতে পৌনে ১১টার দিকে ট্রেনটি জংশনে পৌঁছায়। এ সময় একটি বগির যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক লক্ষ করেন তাঁরা। তাঁরা শুনেছেন, ট্রেনটি ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে। তবে কীভাবে কী হলো, সে ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু জানেন না তাঁরা।
ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা মো. নিপু ইসলাম নামের এক যাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। পরে হঠাৎ শুনি স্টেশনের বাইরে (আউটার সিগন্যাল) একটি ট্রেন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছে। পরে কিছুক্ষণের মাঝেই ট্রেনটি স্টেশনে আসে। এ সময় অনেক যাত্রীকে চিৎকার–চেঁচামেচি করতে দেখা যায়।’
এ বিষয়ে স্টেশনের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ট্রেনটি স্টেশনের বাইরে সিগন্যালে ছিল। পরে তাঁরা জানতে পারেন ট্রেনটিতে ছিনতাইকারীরা মুঠোফোন ছিনিয়ে নিচ্ছেন, আর কিছু বগিতে ঢোকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু একপর্যায়ে বগিতে ঢুকতে না পেরে পাথর নিক্ষেপ করেছেন। পরে ১০ মিনিটের মধ্যেই ট্রেন স্টেশনে নিয়ে আসা হয়।
ঢাকা রেলওয়ে থানার পরিদর্শক ফেরদৌস আহম্মেদ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনটি আউটার সিগন্যালে দাঁড়ানো ছিল। তখন হঠাৎই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে ট্রেনটি। এরই মধ্যে ঘটনায় জড়িত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও অভিযান চলছে।
এ জাতীয় আরো খবর..