বাংলাদেশে কার সমর্থক বেশি? ব্রাজিল না আর্জেন্টিনা?
ঢাকা আবাহনীর নতুন ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার ব্রুনো মাতোসের প্রশ্ন। কঠিন এক প্রশ্ন! আসলেই তো, ব্রাজিলের সমর্থন বেশি না আর্জেন্টিনার, এমন কোনো হিসাব যে নেই। তবে বিশ্বকাপের সময় আর্জেন্টিনা নিয়ে প্রবল উন্মাদনা ব্রাজিলকে যে কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে, এটা একটু সাহসী হয়ে বলে ফেলা যায়। লিওনেল মেসির ভক্ত যে বরাবরই বেশি। ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ে তাদের সমর্থন বাড়াটা স্বাভাবিক। ব্রাজিল যে বিশ্বকাপ পায় না ২১ বছর পেরিয়ে গেছে।
ব্রুনো অবশ্য এত সব হিসাব মেলাতে নারাজ। বাংলাদেশে খেলতে আসবেন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে নেটে এ দেশ, এ দেশের মানুষ আর ফুটবল নিয়ে জানা ও বোঝার চেষ্টা করছেন। তাঁর ধারণা, বাংলাদেশে ব্রাজিল আর আর্জেন্টিনার সমর্থন প্রায় সমান। গুগলে সার্চ দিয়ে বাংলাদেশে যে পরিমাণ ব্রাজিলের পতাকা ওড়ার ছবি দেখেছেন, তাতে তিনি রীতিমতো বিস্মিত। মুগ্ধ তো বটেই, ‘বাংলাদেশে এত ব্রাজিলের পতাকা ওড়ে!’
এ মাসেই হতে যাওয়া এএফসি কাপের জন্য আবাহনী দুই ব্রাজিলিয়ানকে নিয়ে এসেছে। ব্রুনো মাতোস ও জোনাথন রেইস। ব্রুনোর চেয়ে কথাবার্তা একটু কম বলেন জোনাথন। ইংরেজিতে সমস্যা দুই ব্রাজিলিয়ানেরই। জোনাথনের ইংরেজি একটু বেশি দুর্বল। তা–ও ব্রুনোর পাশাপাশি তিনি জানালেন বাংলাদেশি ফুটবলপ্রেমীদের ব্রাজিল–প্রেম তাঁকেও অবাক করেছে। তিনি এখন মুখিয়ে আছেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ক্লাব আবাহনী লিমিটেডের জার্সি গায়ে নিজেকে উজাড় করে দিতে।
এএফসি কাপে ১৬ আগস্ট মালদ্বীপের ক্লাব ইগলসের বিপক্ষে সিলেটে ম্যাচ আবাহনীর। প্রাথমিক রাউন্ডের সেই বাধা টপকাতে পারলে ২২ আগস্ট এএফসি কাপের প্লে–অফ। প্রতিপক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা ভারতের মোহনবাগান ক্লাবের। আবাহনীর কোচ মারিও লেমোসের লক্ষ্য গ্রুপ পর্যায়ে ওঠা। মৌসুম শেষে কদিন আগেই ২০১৮ বিশ্বকাপে খেলা কোস্টারিকার ফুটবলার দানিয়েল কলিনদ্রেস চলে গেছেন। আরেক ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল আগুস্তো চোটে ভুগছেন। বেশ বিপদে পড়ে গিয়েছিল আবাহনী। ডিফেন্ডার ইউসেফ ও ফরোয়ার্ড এমেকা ওগবাহ ছিলেন, তাঁদের পাশাপাশি শেখ জামাল থেকে ফরোয়ার্ড কর্নেলিয়াস স্টুয়ার্ট, মোহামেডান থেকে মিডফিল্ডার মুজাফফরভ ও ফর্টিস থেকে ডেনিলোকে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম আবাহনীতে খেলা দুজন আক্রমণভাগের খেলোয়াড় ওজুকু ডেভিড ও মোস্তফাকে লোনে নেওয়া হয়েছে। ব্রুনো আর জোনাথনকে নিয়ে এ মুহূর্তে আবাহনীতে আছেন বেশ কয়েকজন বিদেশি ফুটবলার। লেমোস জানালেন, ‘সব বিদেশিকে দেখব আমরা। তাঁদের থেকে ছয়জনকে নেওয়া হবে। এএফসি কাপে যেহেতু ছয় বিদেশি খেলানো যাবে, তাই আমাদের হাতে যথেষ্ট বিকল্প আছে।’
ব্রুনো আর জোনাথনকে পছন্দ করে নিয়ে এসেছেন পর্তুগিজ কোচ লেমোসই। প্রথমজনের বয়স ৩৩, পরের জনের ৩৪। আজ ধানমন্ডিতে আবাহনী ক্লাবে বসে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে ‘ইংরেজি না জানা’ দুই ব্রাজিলিয়ানের কথপোকথনে ‘দোভাষী’ তিনিই। পর্তুগিজ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে লেমোস বললেন, ‘থাইল্যান্ডে ওদের সঙ্গে পরিচয় আমার, দুজনই বেশ উঁচুমানের খেলোয়াড়। এএফসি কাপের জন্যই ওদের নিয়ে আসা হয়েছে। আশা করছি, ওদের কাছ থেকে ভালো কিছুই পাব।’
ব্রুনোর প্রোফাইল তুলনামূলক সমৃদ্ধ জোনাথনের চেয়ে। খেলেছেন সার্বিয়া, ইরান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগে। খেলেছেন সৌদি আরবেও। তবে সেটি প্রো–লিগে নয়, দ্বিতীয় স্তরে। ইন্দোনেশিয়ার পারসিজা জাকার্তা, মালয়েশিয়ার সেলেঙ্গর, ভিয়েতনামের ভিয়েতেল এফসি, ইরানের সালত নাফত ও সার্বিয়ার এফসি নভিবাজরের হয়ে খেলে এশিয়ান ফুটবল নিয়ে ধারণাটা বেশ ভালোই তাঁর। এএফসি কাপের প্রাথমিক রাউন্ডে মালদ্বীপের ইগলসের বিপক্ষে তাই যথেষ্ট আশাবাদী ব্রুনো, ‘আবাহনী আমাদের ভরসা করে নিয়ে এসেছে। মালদ্বীপের দলটির বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিতে চাই। আবাহনীকে পরের রাউন্ডে তুলতে চাই।’
জোনাথন খেলে এসেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান আইপার্কে। তবে থাইল্যান্ডে খেলেছেন বেশ কয়েকটি ক্লাবে—বিজি পাথুম ইউনাইটেড, মুয়াংকান ইউনাইটেড, সুপহানবুরি এফসি, নংবুয়া এফসি, ট্রাট এফসি—থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতা তাঁর বেশ ভালো। সাইপ্রাসের এরমিস আরাদিপু নামের একটি ক্লাবেও এক মৌসুম খেলেছেন জোনাথন। বাংলাদেশের আবাহনীর হয়েও ভালো একটা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে চান, ‘এখানকার আবহাওয়া থাইল্যান্ডের মতোই। এখন এএফসি কাপের ম্যাচটির দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের প্রস্তুতি ভালোই হচ্ছে কোচ লেমোসের অধীনে। আবাহনী ক্লাবের পরিবেশ ও কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা যথেষ্ট ভালো। এখন ক্লাবকে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে তুলতে অবদান রাখতে চাই।’
আবাহনীর দুই ব্রাজিলিয়ানই ফুটবলার হিসেবে বেড়ে উঠেছেন দুই বিখ্যাত ব্রাজিলিয়ান ক্লাবে—ব্রুনো পালেমেইরাসে, জোনাথন করিন্থিয়ানসের একাডেমিতে। দুজনই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। রোনালদিনিও প্রিয়, তবে রোনালদোর মতো নয়। হালের নেইমার প্রিয় ব্রুনোর, জোনাথনের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। লিওনেল মেসি আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর তুলনায় দুজনের কাছেই এগিয়ে মেসি। করিন্থিয়ানসের একাডেমিতে একবার রোনালদোর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন জোনাথন, কথা বলার সুযোগ হয়নি। অনেক দিন ধরে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ব্যর্থতা পোড়ায় দুজনকে। নিজেরাই বলেন, ‘সেই কবে বিশ্বকাপ জিতেছে ব্রাজিল। এরপর কতগুলো বিশ্বকাপ হয়ে গেল। একটা শিরোপা খুবই দরকার। আশা করি, সেটি ২০২৬ সালেই আসবে।’
এ মুহূর্তে তাঁদের বড় দায়িত্ব আবাহনীকে এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে নেওয়া, যেটি বেশ কঠিন কাজ।
এ জাতীয় আরো খবর..