মোঃ হাসান শিকদার,
বিশেষ প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জ জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজে ছাত্রছাত্রীদের হলে থাকার সুবিধা থাকলেও বেশ কয়েক বছর যাবত ছাত্ররা হোস্টেল সুবিধা থেকে বঞ্চিত।এতে দূরবর্তী ছাত্রদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। সম্প্রতি কলেজের হোস্টেলে গিয়ে দেখা যায় ছাত্রীদের জন্য দুটি হল থাকলেও ছাত্রদের জন্য থাকা মঞ্জুরুল আলম ও আলীমুল হক হলটি এখন ঝোড়-জঙ্গলের কবলে এবং গেইটে ঝুলছে তালা।
প্রায় ৫ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি হল দুইটি। জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ হওয়াতে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা গুলোতেও কলেজটির বেশ সুনাম রয়েছে। তাই মানিকগঞ্জ জেলাসহ অন্যান্য জেলার শিক্ষার্থীরা এখানে পড়ালেখা করার জন্য আসে।তবে এদের মধ্যে অনেক দূর-দূরান্তের ছাত্র আছে যারা গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান। তাদের পক্ষে বাসা ভাড়া কিংবা মেসে থেকে পড়ালেখার খরচ চালানো সম্ভব নয়। ফলে পড়ালেখা করতে হিমসিম পড়তে হচ্ছে মেধাবী ছাত্র ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের।
সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের একাদশ শ্রেণীর ২০২৪-২৫ সালের সর্বশেষ সিলেবাসে কলেজ ফ্যাসালিটিস এর এক নাম্বারেই লেখা আছে ছাত্রদের জন্য দুটি আবাসিক হল সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ দীর্ঘদিন যাবত ছাত্ররা হলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকলেও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে শুধু মাত্র চিঠি দিয়ে দায় এড়িয়ে যাচ্ছে কলেজ প্রশাসন।
সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র ফরিদ হোসেন বলেন, " আমার বাড়ি সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের নদীর ওপারে, কলেজ থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কলেজে যাতায়াত করা আমার জন্য অনেক বেশি কষ্টকর। তাই আমি কলেজের পাশে একটি ম্যাচে থাকি,ম্যাচে আমাদের অনেক খরচ হয়, আমাদের একটা হল এখনো ব্যবহার করা সম্ভব তাই যদি হল খুলে দেওয়া হতো তাহলে আমাদের জন্য অনেক বেশি সুবিধা হতো।"
৫ বছরের বেশি সময় যাবত হল বন্ধ থাকলেও ২ বছর আগে শিক্ষার্থীদের জন্য হল খুলে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ টাকা খরচ করে হলে বিভিন্ন সংস্কার কাজ সম্পূর্ণ করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। কথা ছিলো সংস্কার কাজ শেষে হলটি ছাত্রদের জন্য খুলে দেওয়া হব। ১১ লাখ টাকা খরচ করেও পরে আর খোলা হয়নি ছাত্রদের হলটি। বন্ধ হলেও কেনই বা সংস্কার কাজ করা হলো, আর সংস্কার কাজ করা হলেও এখন পর্যন্ত কেন হল খোলা হচ্ছে না তা নিয়ে রয়েছে নানা মহলে নানা ধরনের আলোচনা ও সমালোচনা।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রায় ২ বছর পূর্বে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের হলের সংস্কার কাজ পায় মেসার্স সিরাজী বিল্ডার্স এন্টারপ্রাইজ কিন্তু হলের কাজ করে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজী রাজু আহমেদ বুলবুলের কাজী এন্টারপ্রাইজ। মোট ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ করে হলের দরজা জানলা মেরামত,ইলেকটিফিকেশন, প্লাস্টার ও রং করানো, বিদুৎ এর তার সংযোগ ও ৬০ টি ফ্যান ক্রয় করা হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবী, ১১ লাখ টাকা খরচ করে হল সংস্কার করা হলেও স্বৈরাচারী সরকারের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতাদের বিভিন্ন অপকর্মের কারনে হল বন্ধ রাখে তৎকালীন কলেজ প্রশাসন। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি কলেজের রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলেও ছাত্রদের জন্য হল খোলা হচ্ছে না। যার ফলে দিনে দিনে হলের ভবণ ও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সাধারন ছাত্রদের প্রত্যাশা ছিলো ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে গঠিত সরকারের শাসন আমলে কলেজের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেহেতু স্বাভাবিক আছে তাই দ্রুতই হল খুলে দিলে তারাও উপকৃত হবে। তাই কলেজ ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে দ্রুত সামান্য কিছু সংস্কার কাজ করে হল খুলে দেওয়া না হলে এক সময় হল ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়বে। তখন চাইলেও আর হলের সুবিধা ভোগ করতে পারবে না ছাত্ররা।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, দ্রুত হল খুলতে হলে কলেজ ফান্ডের টাকা দিয়ে কিছু সংস্কার কাজ করে হল খোলার ব্যবস্থা করা হলে পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহন করবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
মানিকগঞ্জের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, " আমাদের কলেজে ছাত্রদের জন্য দুটি হল থাকলেও একটি হলের অর্ধেক স্যারদের ডোরমেটোরি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে আরেকটি হলের প্রায় সব কিছুই ঠিক আছে শুধু ফার্নিচার প্রয়োজন আর এই ফার্নিচারের অযুহাতে হলটি বন্ধ করে রেখেছে কলেজ প্রশাসন। আমি সাধারন ছাত্রদের পক্ষ থেকে বলতে চাই অবিলম্বে দেবেন্দ্র কলেজের হল খুলে দেওয়া হোক।"
এ বিষয়ে কলেজ প্রশাসনের বক্তব্য জানতে চাইলে সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: শহীদুজ্জামান গণমাধ্যমে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
এ জাতীয় আরো খবর..