মাঠে ভারতীয় ক্রিকেটের স্লেজিং সম্পর্কে কে না জানে ? ছোট কিংবা বড় দলকে ঠেকানোর কৌশল থাকে ভারতীয় ক্রিকেটে। আর তাদের ক্রিকেটারদের মধ্যে মাঠের আগ্রাসনে সবসময়ই এগিয়ে থাকেন বিরাট কোহলি। কিন্তু অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা স্যাম কনস্টাসকে ধাক্কা দেওয়াটা অনেকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারছেন না। এর জন্য সমালোচনায় পড়েছেন বিরাট। এই ঘটনার জন্য আইসিসির শাস্তির মুখেও পড়তে পারেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) মেলবোর্ন টেস্টের প্রথম দিনে এই কাণ্ড ঘটান কোহলি। অবশ্য এতে ১৯ বছর বয়সী কনস্টাসের দোষও দেখছেন অনেকে। এই ঘটনায় তাই দুজনকেই শাস্তি দিতে পারে আইসিসি।
মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টের সবচেয়ে আলোচিত নাম ছিল অস্ট্রেলিয়া ১৯ বছরের তরুণ স্যাম কনস্টাস। ওয়ানডে মেজাজে খেলে ৬৫ বলে করেছেন ৬০ রান। জাসপ্রিত বুমরাহর মতো সময়ের সেরা ফাস্ট বোলারকে রিভার্স সুইপে ছক্কা হজম করিয়েছেন। আবার স্কুপ করে বাউন্ডারিও হাঁকিয়েছেন।
কনস্টাসের কল্যাণে ৩ বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ছক্কা হজম করলেন বুমরাহ। ৩৬ বছর বয়েসী কোহলি নিঃসন্দেহে কিংবদন্তি পর্যায়ে। কিন্তু, দুর্দান্ত কনস্টাসের মনোযোগ সরাতে ধাক্কা দিয়েই মনস্তাত্ত্বিক খেলা খেলতে হয়েছে কোহলিকে।
অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের দশম ওভারের শেষে দিক পরিবর্তন করার জন্য হেঁটে আসছিলেন কোহলি। উল্টো দিক থেকে আসছিলেন কনস্টাসও। এমন সময় দুজনের সংঘর্ষ হয়। রেগে গিয়ে কনস্টাস কোহলিকে কিছু একটা বলেন। এতে আরও চটে যান কোহলি। তিনি ঘুরে দাঁড়িয়ে রক্তচক্ষু দেখিয়ে কনস্টাসকে কিছু একটা বলতে থাকেন।
এসময় আরেক ওপেনার উসমান খাজা এসে পরিস্থিতি সামলান। দুজনকে বুঝিয়ে তিনি আলাদা করে দেন। ঝামেলা থামাতে এগিয়ে আসেন আম্পায়ারেরাও। বার বার সেই ঘটনার রিপ্লে দেখাতে থাকে সম্প্রচারকারীরা। সেখানে অবশ্য দেখা গেছে, কনস্টাস মাথা নিচু করে ব্যাট হাতে যাচ্ছিলেন। কোহলিই যাওয়ার পরে দিক পরিবর্তন করে কনস্টাসের কাছে গিয়ে তাকে গিয়ে ধাক্কা মারেন।
ক্রিকেট আইনের ২.১২ ধারা অনুযায়ী ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ, আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি বা অন্য কারও (দর্শক) সঙ্গে অনুপযুক্ত শারীরিক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যদি কোনো ক্রিকেটার ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় বেপরোয়াভাবে ক্রিকেটার বা আম্পায়ারকে ধাক্কা দিলে সেটা লেভেল টু পর্যায়ের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে দোষী ক্রিকেটার তিন থেকে চারটি ডিমেরিট পয়েন্ট পেতে পারেন।
তবে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে কোহলির শাস্তি। ঘটনা বিচার করে তিনি যাচাই করবেন যে, অপরাধ ইচ্ছাকৃত ছিল কি না। যদি পাইক্রফ্ট মনে করেন দু’জনেই লেভেল টু পর্যায়ের অপরাধ করেছেন তাহলে তিন বা চার ডিমেরিট পয়েন্ট দিতে পারেন। চার ডিমেরিট পয়েন্ট পেলে পরের টেস্টে নির্বাসিত হতে হবে কোহলিকে। লেভেল ওয়ান পর্যায়ের অপরাধের ক্ষেত্রে সাধারণত জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রিপ্লেতে দেখা যায়, কনস্টাস মাথা নিচু করে ব্যাট হাতে যাচ্ছিলেন। কোহলিই পাশ থেকে অনেকটা দিক পরিবর্তন করে কনস্টাসের কাছে গিয়ে তাকে ধাক্কা মারেন। ধারাভাষ্যকার মাইকেল ভন বলছিলেন, কনস্টাসকে উত্তেজিত করার জন্যই এ কাজ করেছেন কোহলি। তবে এই কাজের জন্য কোহলি কখনোই গর্ব করবেন এমন মনে করেন না সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক। তিনি বলেন 'কোহলি ওই মুহূর্তের কথা মনে করে গর্ব অনুভব করবে না। কনস্টাস স্রেফ হেঁটে যাচ্ছিল। কোহলিকে দেখুন, সে তার পথের দিক পাল্টেছে।'
সমালোচনা করে ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে রিকি পন্টিং বলেছেন, ‘বেশ কিছু অ্যাঙ্গেল থেকে আমরা ঘটনাটি দেখেছি। আমাকে বলতেই হচ্ছে, ওই পর্যায়ে ভারতের ফিল্ডারদের কোনো অবস্থাতেই ব্যাটসম্যানের ধারেকাছে যাওয়ার কথা নয়। ব্যাটসম্যানরা কোথায় একসঙ্গে দাঁড়ায় সেটা প্রতিটি ফিল্ডারই জানে। আমার কাছে মনে হয়েছে, কনস্টাস অনেক দেরিতে খেয়াল করেছে। কেউ তার সামনে থাকতে পারে সম্ভবত তার ভাবনায় ছিল না। কিন্তু স্ক্রিনে যাকে দেখা যাচ্ছে (কোহলি) বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হতে পারে।’
এ জাতীয় আরো খবর..