রহমত আল আকাশ, দিনাজপুর : দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে চাহিদা অনুযায়ী কয়লা নিচ্ছে না বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে খনিতে প্রতিদিন বাড়ছে কয়লার মজুত। বর্তমানে খনির ইয়ার্ডে ধারণক্ষমতার বেশি কয়লা জমা হয়েছে।
দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লার ওপর নির্ভর করে নির্মাণ করা হয়েছিল ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু কেন্দ্রটি চাহিদা অনুযায়ী কয়লা নিচ্ছে না। এতে খনি ইয়ার্ডে জমা পড়েছে অতিরিক্ত কয়লা। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে খনি এলাকায় মজুতের স্থান পর্যাপ্ত না হওয়ায় কয়লা উত্তোলন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
খনিতে কয়লা উত্তোলন বন্ধ করে দিলে ভূগর্ভে কয়লা ফেজে জমতে পারে বিষাক্ত গ্যাস। এতে পরবর্তী সময়ে খনি থেকে কয়লা উত্তোলনই ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করছে খনি কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া খনির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চীনা কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভঙ্গের আশঙ্কাও তৈরি হবে।
কয়লা খনির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে , বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ২ লাখ টন। বর্তমানে ইয়ার্ডে মজুতের পরিমাণ ২ লাখ ৫০ হাজার টন।
এদিকে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি তিন ইউনিটের ৫২৫ মেগাওয়াটের হলেও দীর্ঘদিন ধরে একটি ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ রয়েছে। প্রথম ও তৃতীয় ইউনিট গত জুনের পর কয়েক দফায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়েছে। এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী খনি থেকে কয়লা নিতে পারেনি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। ফলে খনি ইয়ার্ডে কয়লার মজুত বাড়ছে।
২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত খনি কর্তৃপক্ষ তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে কয়লা বিক্রি করেছে। কিন্তু ওই বছরের জুলাইয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে তৃতীয় ইউনিট চালু হওয়ার পর খনির উৎপাদিত পুরো কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ শুরু হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি।
গত ৩ আগস্ট থেকে খনির ১৪১৪ ফেজ থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। অক্টোবর পর্যন্ত এই ফেজ থেকে প্রায় ৩ লাখ ৬৪ হাজার টন কয়লা তোলা হয়েছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আরও ১ লাখ ২০ হাজার টন কয়লা তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। ভূগর্ভ থেকে উত্তোলিত কয়লা সংরক্ষণের জন্য বড়পুকুরিয়া কোলমাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) তিনটি ইয়ার্ড রয়েছে। এর মধ্যে একটিতে সেডিমেন্ট কোল সংরক্ষণ করা হয়। অপর দুটি ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা প্রায় ২ লাখ টন। কিন্তু বর্তমানে সেখানে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টন কয়লা মজুত রয়েছে। ফলে বিসিএমসিএলের ইয়ার্ডে কয়লা সংরক্ষণের আর জায়গা নেই। কিন্তু ১৪১৪ ফেজ থেকে দৈনিক গড়ে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টন হারে কয়লা তোলা হচ্ছে। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট যথাযথভাবে পরিচালিত না হওয়ায় আগস্ট থেকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে দৈনিক ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টন করে নিচ্ছে। অর্থাৎ প্রতিদিন খনির ইয়ার্ডে মজুত হচ্ছে অতিরিক্ত প্রায় আড়াই হাজার টন কয়লা। দ্রুত খনি ইয়ার্ড থেকে কয়লা সরবরাহ নেওয়ার জন্য খনি কর্তৃপক্ষ গত ১ অক্টোবর ও ২৩ অক্টোবর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। বিভিন্ন সময় মৌখিকভাবেও জানানো হয়েছে। তারপরও তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ চাহিদা অনুযায়ী কয়লা নিচ্ছে না।
বড়পুকুরিয়া কোলমাইন কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাইফুল ইসলাম সরকার বলেন, খনির কোল ইয়ার্ডে কয়লা সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে কয়লা উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হবে। চলমান ১৪১৪ ফেজের স্বাভাবিক কয়লা উত্তোলন বাধাগ্রস্ত হলে বিসিএমসিএল এবং চীনা কনসোর্টিয়ামের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতিবন্ধকতাসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হবে। ফেজটিতে ক্ষতিকারক গ্যাস নিঃসরণ হয়ে কয়লা উত্তোলনই ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এমনকি কয়লার স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বলনের আশঙ্কা তৈরি হবে।
এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকায় কয়লা সরবরাহ কমেছে। তবে কয়েকদিনের মধ্যে সব ইউনিট চালু হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।