শায়েক আহমদ, কক্সবাজার:
রোহিঙ্গাদের হাতে অতি সহজেই চলে যাচ্ছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট এবং এনআইডি কার্ড। এর পেছনে রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা। রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশী এনআইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট চলে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট এবং এনআইডি পাওয়ার নেপথ্যে কারণ খুঁজতে মাঠে নামে সোনালী কন্ঠের অনুসন্ধানী টিম। দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে একটি রোহিঙ্গা পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায় যে পরিবারের সবাই বাংলাদেশী এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে তৈরী করেছেন পাসপোর্ট এবং কিনেছেন জমিজমা। এই পরিবারের বাংলাদেশী এনআইডি কার্ড পাওয়ার পিছনে কাজ করেছেন রামু উপজেলাধীন রশিদ নগর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আবু শামা। এই রোহিঙ্গা পরিবারের একজন সদস্য আবু তাহের তার কাছে সাবেক মেম্বার আবু শামার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন বলে জানা যায়। আবু তাহের বর্তমানে পানিরছড়া গ্যারেজের রাস্তার মাথায় একটি মসজিদে ইমামতি করেন। রোহিঙ্গা হওয়া সত্ত্বেও মসজিদে তার ইমামতি করার পেছনে তার শ্বশুর সাবেক মেম্বার আবু শামার হাত রয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী।
সোনালী কন্ঠের হাতে আসা তথ্য বলছে তাহের ওরফে মোল্লা তাহের একসময় রোহিঙ্গা থাকলেও বর্তমানে সে এবং তার পুরো পরিবারই বাংলাদেশী। তাহের ২০১০ সালে মায়ানমারের মংডুতে সৈয়দ হোসেন নামের একজন ব্যক্তিতে হত্যা করে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার ঈদগাও এলাকায় ভাড়া বাসায় আশ্রয় নেয়। যে বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলো সেখানে রাজুমা খাতুন নামের একজন রোহিঙ্গা নারী বসবাস করতো। এই রাজুমা খাতুনের স্বামী মালয়েশিয়া প্রবাসী হওয়ায় তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে রোহিঙ্গা তাহেরের। একসময় এই অবৈধ সম্পর্ক এলাকায় জানাজানি হলে রাজুমা খাতুন স্ট্রোক করে মারা যান বলে জানা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায় যে, তাহেরের পরিবারের সবার রয়েছে বাংলাদেশী পাসপোর্ট এবং এনআইডি কার্ড। তাহেরের আপন তিন ভাই বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে পারি জমিয়েছেন দুবাইয়ে। বাংলাদেশী পাসপোর্ট ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বিদেশে পারি জমানোর কারণে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা। তাহেরের ভাইদের মধ্যে নাছির,আনছারউল্লাহ এবং ইব্রাহীম নিয়েছেন বাংলাদেশী পাসপোর্ট এবং এনআইডি তারা তিনজনই বর্তমানে দুবাই প্রবাসী বলে জানা গেছে।
তাহের বর্তমানে যে এলাকায় বসবাস করছে সে এলাকা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, বিশাল জমির উপর তৈরী করেছেন পাকা ঘর এবং এখানেই রয়েছে একটি গরুর খামার। সে পানিরছড়া এলাকায় তাহের ওরফে হুজুর তাহের হিসেবে পরিচিত।
তাহেরের স্ব পরিবারে বাংলাদেশী এনআইডি কার্ড পাওয়ার নেপথ্যে কারণ জানতে চাইলে সে এই অনুসন্ধানী টিমের সদস্যদের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন এবং বলেন তার বিরুদ্ধে যেন কোন প্রতিবেদন করা না হয়। প্রতিবেদন করলে এলাকায় তার যে সম্মান রয়েছে তা মাটির সাথে মিশে যাবে বলে জানান তিনি। এসময় তাহের বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকেন এবং সে চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলো বলে স্বীকার করেন। তাহেরের কাছে দুইটি এনআইডি কার্ড রয়েছে কেন এবিষয়ে জানতে চাইলে তাহের বলেন আমি রামু এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে একটি এনআইডি নিজেই বানিয়েছি পাসপোর্ট তৈরী করার জন্য। প্রসঙ্গত যেখানে একজন বাংলাদেশী নাগরিকের একটি এনআইডি কার্ড বানাতে অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে যেতে হয় সেখানে একজন রোহিঙ্গা নাগরিক অর্থের বিনিময়ে অতি সহজেই পেয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশী এনআইডি এবং পাসপোর্ট।
তাহের রোহিঙ্গা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশী এনআইডি কার্ড পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তার শ্বশুর সাবেক মেম্বার আবু শামা বলেন সে যে রোহিঙ্গা তা আমি আগে জানতাম না। আমার মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দেওয়ার কয়েক বছর পর জানতে পেরেছি যে তারা রোহিঙ্গা। এসময় তাহেরের শ্বশুর সাবেক মেম্বার আবু শামা তাদের সম্মান রক্ষার্থে কোন প্রতিবেদন না করার জন্য অনুরোধ করেন।
অনুসন্ধানী পর্ব-০১
এ জাতীয় আরো খবর..