কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া প্রতিনিধি;
কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুই আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের ৭৯ নেতা কর্মির বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় দুইটি হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের হয়েছে। এছাড়াও ঐ দুই মামলায় আরো ১৬ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আন্দোলনে আশরাফুল আলম (৩৮) নামের এক আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মী সহ মোট ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আরও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গত শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) আশরাফুল নিজে বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান।
গত ৪ অগাস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বেলা ২টার দিকে শহরের ৫ রাস্তার মোড় এলাকায় আশরাফুলকে গুলি করে ও মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়। আশরাফুল আলম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার নওয়াপাড়া এলাকার মৃত আকবর আলীর ছেলে। আহত আন্দোলনকারী আশরাফুল এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করে আসছিলাম। ৪ আগস্ট সারা দেশে চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বেলা ২টা ২০ মিনিটের দিকে কুষ্টিয়া শহরের ৫ রাস্তার মোড় পৌছালে আসামীরা জনতাবদ্ধে হয়ে দেশী-বিদেশী অস্ত্র, লাঠি, সোঠা, ধারালো চাপাতি ও বিস্ফোরকদ্রব্য হাতে নিয়ে আক্রমণ করে।
আসামী হাজী রবিউল ইসলামের নির্দেশনায় আসামী আতাউর রহমান আতা ও আজগর আলীর হুকুমে অনান্য সকল আসামীগন বিভিন্ন বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র নিয়ে রণসাজে সজ্জিত হইয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করিয়া আক্রমন করিতে থাকে। আন্দোলন চলাকালীন সময় মামুনার রশীদ ওরফে (টাইগার মামুন) তার কাছে থাকা শর্টগান দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি বর্ষন করে। আমি আন্দোলনের সম্মুখভাগে থাকায় আসামী মামুনার রশীদ টাইগার মামুনের ছোড়া গুলি আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়। সেসময় গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটে পড়লে আসামীরা চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে দ্রুত কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহন করি।
চিকিৎসার জন্য আসামীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হইল। এজাহারে উল্লিখিত আসামিরা হলেন- হাজী রবিউল ইসলাম, আজগার আলী, আতাউর রহমান, ওমর ফারুক, মামুনার রশীদ টাইগার মামুন, এনামুল হক, রবিউল ইসলাম, আব্দুল মজিদ, মিলন মন্ডল, অজয় সুরেখা, শামীম হোসেন, মুকুল মেম্বর, রাজা মল্লিক, আব্দুল মালেক, এম, এ খালেক, হাজী মোহাম্মেদ আলী জিন্নাহ, আব্বাস উদ্দিন লাদেন, রাসেল, রবিউল ইসলাম, সাদ আহমেদ লিটন, শামিম শেখ, লুৎফর রেজা বাপ্পি, লুৎফর রহমান, ইমরান খান লিটু, মিজানুর রহমান মিন্টু। এবিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, আশরাফুলকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ২৫ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
অপরদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রুহুল আমিন (২০) নামের এক আন্দোলনকারীকে মারপিট ও কুপিয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকর্মী সহ মোট ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আরও ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গত শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রুহুল আমিনের মা রুনা খাতুন নিজে বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান। গত ৫আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শহরের শাপলা চত্ত্বর মোড় এলাকায় রুহুলকে কুপিয়ে ও মারপিট করে গুরুতর আহত করা হয়। রুহুল আমিন কুষ্টিয়া শহরের চর থানা পাড়া এলাকার কোরবান আলীর ছেলে। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করে আসছিলেন রুহুল আমিন। ৫ আগস্ট সারা দেশে চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে কুষ্টিয়া শহরের শাপলা চত্ত্বর মোড়ে আসামী সাবেক এমপি মাহাববুউল আলম হানিফ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা ও আবুল হাসেমের হুকুমে আসামীরা জনতাবদ্ধে হয়ে দেশী-বিদেশী অস্ত্র, লাঠি, সোঠা, ধারালো চাপাতি ও বিস্ফোরকদ্রব্য হাতে নিয়ে আক্রমণ করে। অনান্য সকল আসামীগন বিভিন্ন বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র নিয়ে রণসাজে সজ্জিত হইয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করিয়া আক্রমন করিতে থাকে। এসময় রুহুল আমিনের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারপিট, কুপিয়ে ও গুলি করে। সে গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটে পড়লে আসামীরা চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে দ্রুত কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল চিকিৎসা গ্রহন করে। বর্তমানে তিনি এখনো কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসার জন্য ব্যস্ত এবং আসামীদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে থানায় এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হইল। এজাহারে উল্লিখিত আসামিরা হলেন-মাহাবুব আলম হানিফ, আতাউর রহমান আতা, এ্যাডঃ আবুল হাসেম, বাবু মেম্বার, আতাহার মন্ডল, সাহাদুল প্রামানিক, হাকিম মন্ডল, জসিম প্রামানিক, ইকবাল বেপারী, আয়েব বিশ্বাস, রফিক, বাদশা মালিখা, উজ্জল, রফিক, এম এ মালেক, মিন্টু ফকির, মাহিন, আওলাদ হোসেন দুলাল, মেহেদী, বাবু, মামুন, আনোয়ার, প্রান্ত, আলম, আরশাদ আলী, সাহেব আলী, সাহাবুদ্দিন মালিথা, তাহাজ উদ্দিন মন্ডল, ইসমাইল হোসেন সান্টু, নাসির উদ্দিন টোকন, আব্দুল মান্নান মন্ডল, টনি মন্ডল, কামরুজ্জামান নাহিদ, কামরুজ্জামান জাহিদ, শিমুল, আয়ুব, আতিকুর, শহিদুল ইসলাম, রুহুল আমিন, শাহারিয়ার শাওন, রায়হান শেখ, শুভ মুন্সি, তামিম, মামুনুর রহমান মিয়া, সামিউর রহমান মিয়া, টিপু মিয়া, রাশিদুজ্জামান তুষার, ওবাইদুল হক বাইদুল, শামিম হোসেন, মোতালেব বিশ্বাস, ক্যাপ বাবু, আলমগীর হোসেন, আল-আমিন, আবু জাহিদ। এবিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, রুহুল আমিনকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ৫৪ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
এ জাতীয় আরো খবর..