নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
এক সময় ছিলেন সক্রিয় ইসলামী ছাত্র শিবির কর্মী। সরকার বদলের প্রেক্ষাপটে বনে যান বঙ্গবন্ধু গবেষক। এই তকমা ধারণ করে পুরো আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন রাজধানীর ব্যাংক পাড়া। চাঁদাবাজি করেছেন ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এখনো তিনি সক্রিয়। মুখোশ পাল্টে চেষ্টা চালাচ্ছেন বিএনপি’র কাঁধে ভর করার।
নাম সর্বস্ব অনলাইন নিউজ পোর্টাল জুম বাংলাকে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। গুনধর এই সাংবাদিকের নাম তকী যুবায়ের। বাড়ি পিরোজপুর। সরকার পতনের পর একে একে বেরিয়ে আসছে তার ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজির ভুরিভুরি অভিযোগ। চাঁদার অঙ্ক কোটি টাকার নিচে নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো আমলে এক দিকে সাংবাদিক আরেক দিকে ‘বঙ্গবন্ধু গবেষক’ পরিচয় দিয়ে ব্যাংক কর্মকর্তাদের তটস্থ করে তুলেছিলেন তকী ও তার অনুসারীরা। তার দাবি মতো ঋণের কাজ করে না দিলে বা বিজ্ঞাপন পেতে বিলম্ব হলেই তার পোর্টালে সংবাদ ছাপতেন। সুকৌশলে তার তৈরী করা সাংবাদিকদের একটি সিন্ডিকেট দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপাতেন। এভাবে কর্মকর্তাদের সামাজিকভাবে নাজেহাল করে হাতিয়ে নিতেন কোটি কোটি টাকা। যার সিংহভাগই তিনি রাখতেন, বাকি টাকা খরচ করতেন সিন্ডিকেটের পেছনে।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম-মৃত্যুসহ নানা অনুষ্ঠানাদি এলেই বিজ্ঞাপন বা গবেষণার কাজে ডোনেশনের নামে হাতিয়ে নিতেন দিবস উপলক্ষে বরাদ্দ থাকা অর্থের বড় একটি অংশ।
ব্যাংক পাড়ায় তকী একজন মেধাবী চাঁদাবাজ বলে খ্যাত। সময়ের পটপরিবর্তনে একাধিক ব্যবসায়ী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা তার বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তারা অভিযোগ করছেন, তকীর দাপট এখনো কমেনি। একসময়ে দৈনিক ইনকিলাবে চাকরির সুবাদে এখন বিএনপি’র তকমা দিয়ে নতুন প্রচারে নেমে পড়েছেন। তকীর এই মুখোশ বদলানো নতুন করে আবারো আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
কোন পেশায় সফলতা না পেয়ে মাত্র চার হাজার টাকা বেতনে চাকুরি জীবন শুরু করেন মানবজমিন পত্রিকায় । তবে সেখানে দেড় বছরের বেশি চাকুরি করতে পারেননি নানান অভিযোগে।
সেখান থেকে জামাত শিবির করার সুবাদে যোগ দেন ইনকিলাব পত্রিকায়। সেসময় ক্রিসেন্ট গ্রুপের কাছ থেকে মিথ্যে ভয় ভীতি দেখিয়ে দাবি করেন ৫০ লাখ টাকা। তবে কথায় বলে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তার এই চাঁদাবাজির খবর ফাঁস হয়ে যায়। সেখানেও চাঁদাবাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকুরি হারান ।
এবিষয়ে ইনকিলাব পত্রিকার তার এক সাবেক সহকর্মী জানান;চাঁদাবাজির কারনে সেসময় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সেসময় তকী যুবায়েরের সদস্যতা রহিত করেন। পরে আবার সে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বই ও বিটিভিতে অনুষ্ঠান নির্মাণের সুবাদে সে সদস্যতা পুণরুদ্ধার করে আওয়ামীপন্থী সাংবাদিকদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, অভিযোগ আছে তার লেখা ১৬ পৃষ্ঠার বইটির মূল্যবাবদ প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বেসরকারী ব্যাংকের জন্য প্রতি বই ৩২০০টাকা মূল্যে কিনতে বাধ্য করে সে ১০ কোটিরও বেশি টাকার বানিজ্য করে। একই সাথে তার বঙ্গবন্ধু গবেষকের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতিটি সরকারী দপ্তর ও ব্যাংকে অবাধে চালিয়ে যায় বদলী ও তদবির বাণিজ্য। গত পাঁচ বছরে আরো অন্তত শতাধিক কোটি টাকা কামিয়ে বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠছে এই তকীর বিরুদ্ধে।
ব্যাংক পাড়ার বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তকীর ঘনিষ্টতার তালিকায় রয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোর্শেদুল কবীর, রুপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্ণর কাজী সাঈদুর রহমান, আরেক ডেপুটি গভর্ণর খোরশেদ আলমসহ জনা ত্রিশেক বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যাংক কর্মকর্তা।
অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের আরেক পরিচালক (নিরাপত্তা) শামীমুর রহমানকে ব্যবহার করে সে বাংলাদেশ ব্যাংকে অবাধে প্রবেশের পাশ বাণিজ্য করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ভাগাভাগি করে নেয়।
এখানেই শেষ নয় নতুন করে যোগ দেন জুম বাংলা নামের এক অনিবন্ধিত অখ্যাত এক অনলাইন পোর্টালে। আবারো শুরু হয় চাঁদাবাজির ফাঁদ পাতা। এবারের টার্গেট ভাসট গ্রুপ। অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তারই এক সময়কার সিনিয়র বন্ধু তরুণ উদ্যোক্তা কামরুজ্জামান সোহাগ। তার অভিযোগ কি করে নিজ পরিশ্রমে এতো সফলতা পেলো সোহাগ?
ফাঁদ পাততে ব্যবহার করা হয় জাওয়াদ নির্ঝরের করাপশন ইন মিডিয়া পেইজটি। সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা।
তকী সোহাগকে জানায়, এই নিউজ আওয়ামী লীগ সরকার দেখলে সোহাগকে গুম করবে। দখল করে নেবে তার সাজানো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আতঙ্কিত এই ব্যবসায়ী উপায়ান্তর না দেখে তকী যুবায়রকে অনুরোধ জানান এই বিপদ থেকে উদ্ধারের। এসময় রক্ষক বনে যায় ভক্ষকের ভূমিকায়, অভিযোগ সোহাগের।
তকী জানায় যেহেতু সে শিবিরের তকমা খুলে এখন বঙ্গবন্ধু গবেষকের লেবাস গায়ে এঁটেছে; তাই সে পারবে কিছু একটা করতে। তবে সেটা করতে গেলে লাগবে মোটা অংকের টাকা। সে তাৎক্ষণিক দুই কোটি টাকা দাবি করে। তবে সোহাগ জানান, তিনি কাঁচামাল ও ফল আমদানী রপ্তানীর সাথে জড়িত আর তখন চলছিলো কোরবানীর ঈদ। বহু কষ্টে তখন অর্ধেক দামে রসুন বিক্রি করে ৭০ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করেন। (সেসময়কার হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রীন সট আছে।)
তবে চাঁদাবাজিতে অভিজ্ঞ তকী টাকা বুঝে নেয়ার আগে ব্যবসায়ী সোহাগের সব মোবাইল বাইরে জমা রেখে টাকাগুলো নিজে বুঝে নেন। সেসময় বিজনেস বাংলাদেশের আরেক সাংবাদিক নামধারী চাঁদাবাজ সম্পাদক ও তৎকালিন আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয়ধারী মেহেদী হাসান বাবু এই চাঁদাবাজির শরিক হন।
তবে আশ্চর্জনক হলেও সত্য এই বিষয় প্রবাসী সাংবাদিক জাওয়াদ নির্ঝরের সাথে যোগাযোগ করে সোহাগ জানতে পারেন তার করাপশন ইন মিডিয়া পেইজে যে সংবাদটি তিনি প্রচার করেছিলেন সেটি তাকে ভুল বুঝিয়ে করা হয়েছিলো। যা তিনি পড়ে যাচাই বাছাই করে পোস্টটি ডিলিট করেন।
সোহাগ জানান, এরপর থেকেই শুরু হয় তকী সিন্ডিকেটের বাকি টাকা দাবি। টাকা না পেয়ে আওয়ামী লীগের পরিচয়ধারী তকী সিন্ডিকেট বিভিন্ন সময় সোহাগ ও তার প্রতিষ্ঠানকে হেয় করতে সংবাদ প্রচার ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের তাদের সেসময়কার বন্ধুদের ব্যবহার করতেন।
সম্প্রতি তার অফিসের কর্মচারীদের বেতন ওঠানোর খবর জেনে এই চক্রটি ফাঁদ পেতে উত্তরায় তার ব্যবসায়িক পার্টনারকে ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়। চেষ্টা চালায় তাদের লোক দিয়ে টাকা লুটের। তবে ছাত্ররা ও উত্তরা টাউন কলেজের শিক্ষকরা সেটা রক্ষা করেন। পরে সেনা জিম্মায় থেকে ব্যাংকের টাকা উঠানোর মেসেজ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ও তাদের প্রতিষ্ঠান সমূহের স্যালারি শিটসহ সমূদয় তথ্য প্রমাণ যাচাই বাছাই করে টাকাসহ তাদের সসম্মানে যেতে দেন। আরো উল্লেখ্য এই ঘটনায় তার যে পার্টনার আটক হন তিনি মাসুদ আলম। তবে তকী ও তার চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট এই মাসুদ আলমকেই পরের দিন সংবাদে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএনপিপন্থী ডেপুটি গভর্নর মাসুদ বিশ্বাস বলে উল্লেখ করে অপপ্রচার চালায়।
এছাড়াও একই দিন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সোহাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসিপশনে লাইসেন্স করা পিস্তল জমা রেখে কাজ সেরে ফিরে অস্ত্র নিতে গেলে তকীর সহযোগিরা সেনাবাহিনীর জরুরী সেবা নম্বরে ফোন দিয়ে জানায় সোহাগ অস্ত্র নিয়ে ব্যাংকে প্রবেশ করেছেন। পরে সেনাবাহিনী এসে বিষয়টির প্রকৃত সত্যতা বুঝতে পেরে দেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনা লিখিত দিয়ে অস্ত্রটি ব্যাংকের জিম্মায় জমা রেখে তাকে যেতে বলেন। সোহাগ জানান, সেময় অস্ত্রটির ম্যাগজিন গুলিশূণ্য অবস্থায় ছিলো।
এবিষয়ে সোহাগ বলেন, আমি বছরে দুকোটি চল্লিশ লাখ টাকা দেশের সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে আসছি অর্ধযুগেরও বেশি সময় ধরে। বিভিন্ন সময়ে বড় অংকের টাকা নিয়ে চলা ফেরা করতে হয় সেই জানমালের নিরাপত্তায় সরকার আমায় অস্ত্রবহনের অনুমতি দিয়েছে।
বর্তমান সময়ে চারদিকের যা পরিস্থিতি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তায় এই অস্ত্র সাথে রাখা আমার নাগরিক অধিকার বলেন তিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..