স্বাধীনবাংলা, নিউজ ডেস্ক:
স্বল্পমূল্যে জমি পাওয়া যাচ্ছে—এমন সাইনবোর্ড টানিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। কিন্তু তাঁর দেখানো জমিগুলো ছিল খাস, দখল করা জমি কিংবা পানিতে ভরা। তিনি একেকটি প্লট পাঁচ লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা বলে প্রায় পাঁচ হাজার চুক্তি করেছিলেন।
নাসিম প্লট রেজিস্ট্রেশন করে দেওয়ার কথা বলে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আরও সাড়ে ১২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নিতেন। সব মিলিয়ে এভাবে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইমাম হোসেন ওরফে নাসিমের বিরুদ্ধে।
জমি না পেয়ে ভুক্তভোগীরা নাসিমের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এমন ৫৫ মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এড়াতে রাজধানীর চিড়িয়াখানা সড়কের নিজ ভবনের ভূগর্ভস্থ তলায় গোপন সুড়ঙ্গে (ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংবলিত দরজাযুক্ত) তাঁর গোপন অফিসে আত্মগোপনে থাকতেন তিনি। নাসিম ছাড়া অন্যের আঙুলের ছোঁয়ায় দরজা খুলত না। গতকাল বুধবার গভীর রাতে র্যাব সেখানে অভিযান চালিয়ে তৃতীয় স্ত্রীসহ নাসিমকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড গুলি, এক লাখ ৩৫ হাজার টাকার জাল নোট, ১ হাজার ৪০০ ইয়াবা বড়ি, দুই বোতল বিদেশি মদ, চারটি ওয়াকিটকি সেট, ছয়টি পাসপোর্ট, ৩৭টি ব্যাংক চেক এবং ৩২টি সিম কার্ড জব্দ করার কথা জানিয়েছে র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর পরিচালক পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোজাম্মেল হক সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, সাভারের কাউন্দিয়া এলাকায় সাইনবোর্ড দিয়ে জমি দেখিয়ে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন নাসিম। বিভিন্ন সময়ে নামে-বেনামে ৩২টি সিমকার্ড ব্যবহার করেছেন তিনি। নাসিম এই সিমগুলো দিয়ে প্রতারণা করে
ভুক্তভোগীদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যেতেন। নাসিম কখনো আগ্নেয়াস্ত্র ও ওয়াকিটকি দেখিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেন। নাসিমের অনুপস্থিতিতে তাঁর তৃতীয় স্ত্রী হালিমা আক্তার ওরফে সালমা সবকিছু দেখাশোনা করতেন। র্যাব জানায়, ভূগর্ভস্থ তলায় গোপন সুড়ঙ্গে (ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংবলিত দরজাযুক্ত) গোপন অফিসে আত্মগোপনে থাকতেন নাসিম। তিনি ছাড়া অন্যের আঙুলের ছোঁয়ায় দরজা খুলত না।
র্যাবের পরিচালক মোজাম্মেল হক বলেন, নাসিমের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় বিরুদ্ধে প্রতারণা, ভূমিদস্যুতা, মাদক ও জাল টাকার ছড়ানোর অভিযোগে ৫৫ টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে নাসিম র্যাবকে বলেছেন, দেশের সীমান্ত থেকে স্ত্রীর সহযোগিতায় ইয়াবা ও বিদেশি মদ সংগ্রহ করে তিনি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ডিলার ও খুচরা মাদক কারবারিদের কাছে বিক্রি করতেন। এ ছাড়াও ঢাকাসহ
দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাল নোটের ব্যবসা পরিচালনা করতেন তিনি। র্যাব-৪ এর প্রধান মোজাম্মেল হক আরও বলেন, নাসিমের বাবা-দাদার বাড়ি ভোলায়। দেশ স্বাধীনের আগে তাঁর বাবা পল্লি চিকিৎসক ছিলেন। স্বাধীনতার পর নাসিমকে নিয়ে তাঁর বাবা রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় আসেন। পরে নাসিম মিরপুর এলাকায় লেখাপড়া করেন। তিনি নিজেকে গ্র্যাজুয়েট দাবি করছেন। নাসিম ১৯৭৮ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিতাসের তৃতীয় শ্রেণির ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেছেন । ২০০২ সালে নাসিম রিয়েল এস্টেট নামে কোম্পানি গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠানের তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি ২০০৮ সালে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সদস্য হন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার নাসিম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, প্রতারণাসহ শাহ আলী থানায় চারটি মামলা হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। নাসিম
গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রতারণার শিকার ও ভুক্তভোগী র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। যাঁরা মামলা করতে ইচ্ছুক র্যাব-৪ তাদের প্রয়োজনীয় আইনগত সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি বলেন, নাসিমের ১৬ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের হদিস পেয়েছে র্যাব। সেগুলো কীভাবে চলছে র্যাব এখন তদন্ত করে দেখছে। নাসিমের
বিরুদ্ধে শাহ আলী থানায় মামলা করার এসব মামলা র্যাব তদন্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবে।
যোগাযোগ
করা হলে রিহ্যাবের সভাপতি
আলমগীর শামসুল আলামিন প্রথম
আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার
পর টিভিতে নাসিমের প্রতারণার
খবর শুনেছেন। এর
আগে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো
অভিযোগ পাননি। তিনি
বলেন, নিয়ম নীতি মেনে
ব্যবসা করতে হবে।
রিহ্যাবের সদস্য হলেও প্রতারণা
করে ধরা পড়লে অ্যাসোসিয়েশনের কিছু করার নেই। এমন
কর্মকাণ্ডে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত
হবে। সূত্রঃ
প্রথম আলো