সোহেল কবির, স্টাফ রিপোর্টার:
আর মাত্র একদিন বাকী। রাত পোহালেই কাঞ্চন পৌরসভার ভোট। প্রচার-প্রচারণা শেষ। তবে এখন চলছে জয়ে-পরাজয়ের হিসাব-নিকেষ। পাশাপাশি রয়েছে ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক। ভোটরাররা বলছেন যদি শান্তিপূর্ণ ভোট হয় তাহলে জয়ের হাসি হাসবেন রফিকুল ইসলাম রফিক। এদিকে, পৌরসভার ১৯ কেন্দ্র ঝূকিপূর্ণ বলে দাবী করেছেন ভোটাররা। সরকারী হিসাবে ৪ টি কেন্দ্রকে ঝূকিপূর্ণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জানা গেছে, জগ প্রতীকে রফিকুল ইসলাম রফিক ও মোবাইল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দীতা করছেন দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দুই মেয়র প্রার্থী এবং প্রার্থীর সমর্থকরা গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো পৌর এলাকা। কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৪০ হাজার ৭৯৮।
ভোটাররা বলেন, জয়ের পাল্লা ভারী থাকবে মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিকের দিকেই। গত ৫ বছর মেয়র থাকাকালীন সাধারণ মানুষকে সময় দেওয়া, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নের কারণে সাধারণ মানুষের পছন্দের তালিকায় তিনি থাকবেন। অপরদিকে, দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা এলাকায় সময় না দেওয়া ও মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপকর্মের কারণে তাকে সাধারণ ভোটররা পছন্দ করে না। রফিককে ঠেকাতে প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী আবুল বাশার বাদশা বহিরাগত লোকজন দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
স্থানীয় ভোটরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক যুগ আগেও কাঞ্চন পৌরসভার রাস্তাঘাটের বেহালদশা ছিল। ঢাকা খুব কাছে হওয়া সত্বেও পৌরসভাতে তেমন কোন উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়নি। কিন্তু বর্তমান মেয়র রফিকুল ইসলাম রফিক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বদলে যেতে থাকে চিত্র। বর্তমানে কাঞ্চন পৌরসভার রাস্তাঘাট, মসজিদ মাদ্রাসায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি মেয়র থাকাকালীন সময় সাধারণ মানুষের বিপদে আপদে পাশা থাকা ও মানুষকে সময় দেওয়া, বিয়ে ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সময় দেওয়ার কারণে তিনি ভোটারদের প্রথম পছন্দ থাকবে। এ কারণে রফিকের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ভোটাররা। এছাড়া যদি কেউ টাকার অভাবে মেয়ের বিয়ে দিকে না পারতো তাহলে পুরো বিয়ের খরচই রফিকের পক্ষ থেকে দেওয়া হতো।
অপরদিকে, বিগত সময়ে কাঞ্চন ইউনিয়ন পরিষদ থাকাকালীন সময়ে একবার চেয়ারম্যান হিসেবে ও পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর একবার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আবুল বাশার বাদশা। তিনি চেয়ারম্যান ও মেয়র হওয়ার পর তিনি কাঞ্চনে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগে নি। তিনি জনপ্রতিনিধি থাকাকালীন সময় তিনি পৌরসভায় সময় দিতেন না। তিনি তার নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছিলেন নিজেদের আদালত। বাদশার নিজস্ব আদালত নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ করা হয়। গত ৯০-৯১’ সালে দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত ছিলো। ৯১’ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ৯৩’ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত মতিন চৌধুরির হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেয়। চলতি বছরের কয়েক মাস আগে আবার ভোট পাল্টে আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। বাদশা দুই সময়ে ক্ষমতায় থেকেও কোন উন্নয়নমূলক কাজ না করার কারণে তার থেকে কাঞ্চনবাসী মুখ ফিরিয়ে নেন। এবারের নির্বাচনেও তার বাদশার ভরাডুবির আশঙ্কা করছে স্থানীয় ভোটাররা। সূত্রটি আরো জানায়, বাদশা মেয়র হলে তাকে খুঁজেও পাওয়া যাবে না। তার দপ্তর চালাবে তার কতিপয় বাহিনীর লোকজন।
জগ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, আমি মেয়র থাকাকালীন সময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছি। কাঞ্চন পৌরসভাকে একটি আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলেছি। কিন্তু একটি পক্ষ নির্বাচনকে বানচাল করতে বহিরাগতরা ভোটারদের মাঝে কালো টাকা ছড়িয়ে ভোট কিনছেন। আর যেভাবে কাঞ্চনে বহিরাগতরা নিয়মিত অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছেন। তাকে সাধারণ মানুষ শঙ্কিত। নির্বাচনের দিন বহিরাহতরা থাকলে বিশৃংখলার চেষ্টা করবে। পৌরবাসী আমাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে বলে আমি আশা রাখছি।
এ ব্যপারে কথা হয় মোবাইল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আবুল বাশার বাদশার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি জয়ের ব্যপারে শতভাগ আশাবাদী। আমার দ্বারা পৌরবাসীর কখনও ক্ষতি হয়নি। আমাকে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ মন থেকে ভালোবাসে। তবে, নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার আশঙ্কায় এবং জনপ্রিয়তা দেখে এবং নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে আমার প্রতিপক্ষ রফিকুল ইসলাম নানা ধরনের প্রভাকান্ড ছড়াচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা গ-সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, নির্বাচনের দিন কাঞ্চন পৌরসভার প্রতিটি কেন্দ্রে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকবেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোন পক্ষ কোন প্রকার ঝামেলার সৃষ্টি করলে ছাড় দেয়া হবেনা।
এ জাতীয় আরো খবর..