সোহরাব বরগুনা: ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে লন্ডভন্ড হয়েছে দক্ষিনাঞ্চলের উপকূলীয় জেলা বরগুনা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর খবর না থাকলেও ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও বেড়িবাঁধ সহ, নির্মাণ করা নতুন পুরাতন কার্পেটিং রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার পর রবিবার থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর, সোমবার সন্ধ্যায় পৌরসভার কিছু স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়েছে। তবে এখনো জেলার ছয়টি উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষ বিদ্যুতহীন অবস্থায় রয়েছে। সবকিছু সচল করতে মাঠে কাজ করছে সংসদ সদস্য, ৩১৪ সংরক্ষিত আসন ১৪ ,বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ , প্রভাষক ফারজানা সুমী এমপি ও প্রশাসন। এমপি ফারজানা সুমী ঘুর্নিঝড়ের আগাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন, এবং খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন, বদরখালী ইউনিয়নের মাঝেরচর , ফুলঝুড়ি বাজার, পাতাকাটা, গুলিষাখালি, উত্তর কুমরাখালী ,কাটাখালি ,বড়ইতলা ফেরিঘাট, ডালভাঙা, ঢলুয়া, পুরাকাটা, আয়লা-পাতাকাটাসহ বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রবিবার থেকে ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। গাছ পরে বসতঘর ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও সড়কে যানবাহন বন্ধ এবং নেটওয়ার্ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় জেলার সঙ্গে ছয় উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
উত্তর কুমরাখালী কাটাখালি গ্রামের মোস্তফা গাজী বলেন, আমার বসত ঘরে গাছ পরে ঘর সম্পূর্ণ ভেঙ্গে বিধ্বস্ত হয়েছে, বন্যা শুরু থেকে ঘরে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। রান্নার ব্যাবস্থা করতে পারছি না কোনোভাবেই। তবে শুকনো খাবার খেয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি। ঘূর্ণিঝড় থামার পরে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। ঢাকা-বরগুনা সড়কের টাউনহল ব্রিজের ওপরে গাছ পড়ে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এই সড়কের দুই পাশের অন্তত দেড় শতাধিক গাছ উপরে পড়েছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে পথচারীদের। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিন শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২ লাখ ৩১ হাজার ৭০০ জন মানুষ। ৩ হাজার ৩৭৪টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ১৩ হাজার ৩৪টি বসতঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬ হাজার হেক্টর কৃষি জমি প্লাবিত হয়েছে। ৪ হাজার ১৫৭ হেক্টর জমির মাছের ঘের ও জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে নদীর পানি বেড়ে প্লাবিত হয়েছে তিন শতাধিক গ্রাম। এছাড়াও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের বড় অঙ্কুজান পাড়ায়, মৎস্য ঘের তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তালতলী উপজেলা শহর মাছ বাজার সংলগ্ন ব্রিজটি ভেঙে গিয়েছে, এতে অঙ্কুজান পাড়া সহ কয়েকটি গ্রামের মানুষের চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে, দ্রুততম সময় ব্রিজটি পূর্ণ নির্মাণের দাবি ওই এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের।
বরগুনা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম মিঞা বলেন, বরগুনায় মোবাইল নেটওয়ার্কের অবস্থা খারাপ থাকায়, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করার আগে, আমরা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কথা বলে নেটওয়ার্ক সংযোগ সচল করতে কাজ করছি। তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ারা তুম্পা বলেন, এই উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়েছে এবং ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে গাছ পরার পর থেকেই আমি নিজে লোকজন নিয়ে সড়ক ও নৌপথ সচল করতে কাজ করে সফল হয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব নিয়ে ছয়টি উপজেলাতেই ইউএনওরা ক্ষয়ক্ষতির খবর পেয়ে তালিকা তৈরি করছে। সে অনুযায়ী সব উপজেলায় সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা কার্যক্রম শুরু করেছি। যা বরাদ্দ ছিলো তা দিয়ে সবাইকে দ্রুত সহায়তা করা সম্ভব হবে না। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত বেশি তাদের সহায়তা আগে দিচ্ছি। তবে পানিবন্দি পরিবারের মধ্যে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন অনেক পরিবার। তাদেরও খোঁজখবর নিচ্ছি। এমপি ফারজানা সুমী বলেন গত শনিবার থেকে কাদামাটিতে যত হাটাঁহাটি করেছি,লোকালয় থেকে লোকালয়,গ্রাম থেকে গ্রাম ছুটে বেড়িয়েছি,সেই পরিশ্রমের কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়ে গেছে কারণ আজ আমার মমতাময়ী,আমাদের মানবিক প্রধানমন্ত্রী সব শুনে আমার কাঁধ চাপড়ে "সাবাশ"বলে উৎসাহ দিয়েছেন। আমি বাকিটা জীবন থাকতে চাই জনতার দোয়ায় ও সেবায়।
এ জাতীয় আরো খবর..