স্বাধীনবাংলা,বিশেষ প্রতিনিধি:
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলায় দেয়া ঐতিহাসিক ভাষণের ৪৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় গোটা বিশ্বকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী । করোনাভাইরাস থেকে বিশ্বের মানুষের মুক্তি কামনা করে তিনি বলেন, আবারও অর্থনীতির চাকা সচল হোক, সব মানুষ সুন্দরভাবে স্বাভাবিক জীবনযাপন করুক, সেটাই আমরা চাই। সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় গোটা বিশ্বকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি ‘মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের’ মোকাবেলা করতে হয় মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে যে ঘাতকরা জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল তাদের দোসররা এ দেশে স্থিতিশীল সরকার থাকুক তা কখনও চায়নি। সেজন্য মাঝেমধেই চেষ্টা করে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে। এ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা যখন তারা চালায় তখন আমরা দেখি আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করতে। এসব আমাদের মোকাবেলা করতে হয়। আর আওয়ামী লীগ তা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে বলেই জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা।
জনগণের আস্থা অর্জন করেই বর্তমান সরকার উন্নয়ন করে যাচ্ছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই আমরা সরকার গঠন করে তাদের সেবা করতে পেরেছি। আর দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকতে পেরেছি বলেই উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হচ্ছে এবং উন্নয়নগুলো করতে পারছি, যার সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে। তিনি বলেন, সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছি খাদ্য উৎপাদনের ওপর। কারণ আমি জানি, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে হয়তো দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যেন কোনোমতে সেই দুর্ভিক্ষের ছোঁয়া না লাগে। তাই আমরা যতটুকু পারি খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য বিতরণ, দরিদ্র মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য দেয়া এবং খাদ্য নিশ্চয়তা দেয়ার চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের জিডিপি ৮ দশমিক ২ শতাংশের উপরে নেয়ার টার্গেট অর্জন করা সম্ভব হয়নি। আমরা এবার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশের মতো অর্জন করতে পেরেছি। আশা করি আগামীতে আমাদের প্রবৃদ্ধি আরও বেশি অর্জন করতে সক্ষম হব। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মুজিববর্ষে জতির পিতার স্বপ্নের ‘ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার সংকল্পের কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, প্রায় ৪০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল, এই দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে এনেছি। আমরা আরও কমাতে চাই। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষকে একটা সুন্দর জীবন আমরা উপহার দিতে চাই। আর সেজন্য বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব একটি গ্লোবাল ভিলেজ। এ বিশ্বে কেউ একা চলতে পারে না। তাই সবার সহযোগিতা আমাদের কাম্য। পাশাপাশি কাউকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করতে হলে আমরা সেটা করতেও প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলায় ভাষণ দেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ৪৬ বছর আগে তার সেই ভাষণে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরা হয়। সেই ভাষণে জাতির পিতা বলেন, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়।’ এখনও সেটাই যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল চালিকাশক্তি। অনুষ্ঠানে গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রান্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় দেশে আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীদের কোনো সমস্যা হবে না। যাদের ইকামা-ভিসা আছে তারা সবাই সৌদি আরব যেতে পারবেন, কোনো জটিলতা হবে না। এ বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। কারও ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও ইকামা থাকলে তাদের আবার ভিসা দেয়া হবে। সৌদি প্রবাসীদের টিকিটের জন্য ভিড় করা নিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। যারা আগে থেকে টোকেন নিয়েছিলেন তারা আগেই যাবেন। পর্যায়ক্রমে সবাই যাবেন। দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।