ফরিদপুর প্রতিনিধি: "শান্তির জন্য পানি" প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ফরিদপুর জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের আয়োজনে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
২৪ মার্চ রবিবার বেলা ১১টায় ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো: কামরুল আহসান তালুকদার পিএএ এর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় টেকসই উন্নয়নকে নিশ্চিত করতে পানি ব্যবহারের ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে একটি র্যালি বের করা হয়।
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় ফরিদপুরের পদ্মা, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতি ও কুমার নদের নাব্যতা রক্ষাসহ অবৈধভাবে বালি উত্তোলনসহ শহরের উপকণ্ঠে সিএন্ডবি ঘাটের পাশে ধলার মোড় সংলগ্ন পদ্মা নদীর সাথে কুমার নদের উৎসমুখে ভরাট ও নির্মাণের পরে এক বছর ধরে পড়ে থাকা ১৭৬ কোটি টাকা প্রকল্পব্যয়ে নির্মিত মদনখালী স্লুইসগেটটি অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে।
জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, পদ্মা ও মধুমতি থেকে অবৈধভাবে প্রচুর বালু তোলা হয়। যদি তুলতেই হয় তাহলে বালুমহাল ঘোষণা করে ইজারা দিয়ে তোলা হোক।
আর শহরের প্রাণ কুমার নদ রক্ষায় রোজার পরে মাস্টারপ্ল্যান ধরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে জোরদার অভিযান শুরু করা হবে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে অবগত করে অভিযান চালানো হবে, যাতে কেউ এ নিয়ে অপপ্রচার চালাতে না পারে। প্রভাবশালী হোক বা যেই হোক কারো ওজর আপত্তি গ্রাহ্য করা হবে না। রোজার পরে কুমার নদের দুই পাড়ে নদীর জায়গায় যতো স্থাপনা রয়েছে সব ভেঙ্গে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে মদনখালী রেগুলেটর চালু করতে পারিনি। কুমার নদের উৎসমুখের জমি অধিগ্রহণের টাকা ফেরত গেছে। সেখানে ব্যক্তিমালিকানা জমি রয়েছে। আমরা ওই জমি দীর্ঘমেয়াদি লীজ নিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, নদীর পাড়ে যাতে বর্জ্য ফেলতে না পারে সেজন্য কুমার নদের শহরের অংশের দুই পাড়ে জন চলাচলের জন্য ওয়াকওয়ে তৈরি করতে হবে। মদনখালী স্লুইসগেটটি চালু করে নদীর উৎসমুখ হয়ে পদ্মা থেকে পানি প্রবাহ তৈরি করা গেলে সারাবছরই কুমার নদের নাব্যতা ধরে রাখা যাবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবির বলেন, ফরিদপুরে শহরের মধ্যে দিয়ে নদী ও খাল প্রবাহিত হয়েছে এটি একটি সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কোনো মাস্টারপ্ল্যান ছিল না। তবে এখন ডেল্টাপ্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। শহর কেন্দ্রীক এই খাল ও নদীকে বিস্তীর্ণ প্ল্যানের আওতায় এনে কাজ করতে হবে।
ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মনিরুল হক মনির বলেন, কুমার নদে বর্জ্য না ফেলার জন্য ব্যবসায়ীদের বারবার সতর্ক করা হলেও কাজ হয়নি। রাতে পরিষ্কার করে দেই সকালে আবার ময়লা ভরে উঠে। আর বিকল্প না থাকায় ড্রেনের মুখগুলো নদী থেকে অন্য স্থানে সরানো যায়নি। বর্জ্য সমস্যা নিরসনে নদীর পাড়েই ডাস্টবিন স্থাপন করে বর্জ্য অপসারণ করতে বলা হয়।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা স্বাগত বক্তব্যে বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূউপরিভাগস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে হবে। কারণ সূপেয় পানি প্রাপ্তির ওপরে নির্ভর করছে আমাদের পরিবেশ-প্রতিবেশের নিশ্চয়তা। অন্যথায় আমরা সংকটে ভুগবো।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রামানন্দ পাল, মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামনুন রশীদ অনিক, সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মুরাদ হোসেন প্রমুখ।
এ জাতীয় আরো খবর..